লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশংকা

তীব্র গরমে  মরে যাচ্ছে ঘেরের মাছ, দিশেহারা চিংড়ি চাষি

মামুন আহম্মেদ

আপডেট : ০৩:২১ পিএম, রোববার, ৩০ জুন ২০১৯ | ৫০৩৫

তীব্র গরমে হিটস্টোকসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চল বাগেরহাটের সাদাসোনা খ্যাত চিংড়ি মরতে শুরু করছে। গ্রেড উপযোগী চিংড়ি মাছ মরে যাওয়ায় জেলার চাষীরা ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা করছেন। এতে চলতি ২০১৯-২০ মৌসুমে রফতানিজাত চিংড়ি উৎপাদন লক্ষ্য ব্যাহত হতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেছে জেলা মৎস্য অধিদপ্তর।

এদিকে হঠাৎ করে দেখা দেওয়া চিংড়ির মড়কে এরই মধ্যে জেলার কয়েক হাজার ঘেরের বাগদা চিংড়ি মরতে শুরু করেছে। তীব্র গরমে চিংড়ি ঘেরে এই মড়কের রোগ সম্পর্কে জেলা মৎস্য বিভাগ নিশ্চিত করে কিছু বলতে না পারলেও চিংড়ি চাষীরা ধারণা করছেন পানি স্বল্পতা ও ঘেরে পানির তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হওয়ার কারণে চিংড়ি ঘেরে এ মড়ক দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় আর্থিক ভাবে তির মুখে পড়েছে জেলার মোংলা, রামপাল, কচুয়া, চিতলমারী, মোরেলগঞ্জ ও সদর উপজেলার কাড়াপাড়া, ষাটগম্বুজ, ডেমা, যাত্রাপুর, গোটাপাড়া ও বেমরতা ইউনিয়নের হাজার হাজার চিংড়ি চাষীরা।

বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের ঘের ব্যবসায়ী জুলফিকার আলী বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, চলতি মৌসুমে ২০ বিঘা জমিতে বাগদা চিংড়ি চাষ করেছেন তিনি। ঘেরে রেণু ছাড়ার পর মাছ কেবল গ্রেড হওয়ার উপযোগী হয়েছে। কিন্তু প্রচন্ড গরমে মাছ মারা যাচ্ছে। এছাড়া নদী থেকে যে পানি ঘেরে নেয়া হয় সেটিও তুলনা মূলক বেশি তাপমাত্রার। ফলে পানি পাল্টে দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। এ কারণে চিংড়ি মাছ হিটস্টোকে মারা যাচ্ছে। একই অবস্থা বাগেরহাট সদর উপজেলার অধিকাংশ ঘের গুলোর।

চিতলমারী উপজেলার কুরমনি গ্রামের কৃষক বলরাম বিশ্বাস বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, দেড় লাখ টাকা খরচ করে চিংড়ি ঘেরের মাটি খনন করে ২১ হাজার রেণু পোনা ছেড়েছি। বৃষ্টি না হওয়ায় ঘেরের পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। পানির অভাবে ঘেরের মাছ মরতে শুরু করেছে।

বাগেরহাট সদর উপজেলার ঘের ব্যবসায়ী আলামিন খান সুমন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, চলতি মৌসুমে তিনি ৫৫ বিঘা পরিমাণ জমির ঘেরে বাগদা চিংড়ি চাষ করেছেন। প্রচন্ড গরমের কারণে তার ঘেরে চিংড়ি মাছ মরে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন জাল টানলে প্রচুর মরা চিংড়ি উঠছে, যা সবই গ্রেড উপযোগী। এ পর্যন্ত তার ঘেরে অন্তত ৮ লাখ টাকার চিংড়ি মারা গেছে।

বাগেরহাট চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. খান কামাল উদ্দিন আহমেদ বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পরতে শুরু করেছে। এখন আপনাকে চিংড়ি চাষে লাভবান হতে হলে চাষের পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হবে। গত সপ্তাহে বাগেরহাটে তীব্র গরমে ঘের ও পুকুরের পানির তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি পর্যন্ত দেখা গেছে যা মাছের জন্য মারাত্মক।

তিনি আরও বলেন, জেলার চাষিরা যে পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করে তা পরিকল্পিত না। তাদের ঘের প্রস্তুতিতে সমস্যা রয়েছে। তারা যদি ঘেরে সেড বা ছাউনি নির্মান করতো তাহলে গরমে মাছ মারা যেতো না। এছাড়া গরমে মাছের মারা যাওয়া ঠেকাতে ঘেরে বিভিন্ন প্রজাতির শ্যাওলা দিয়ে পানির তাপমাত্রা কিছুটা নিয়ন্ত্রন করা যেতে পারে বলে তিনি জানান।

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) অমল কান্তি রায় বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, বাগদার সহনশীল তাপমাত্রা হচ্ছে ২৭-২৮ ডিগ্রি সেখানে একটানা ৩৫-৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় জেলার অধিকাংশ ঘেরে ১ থেকে ২ ফুট পানিতে নেমে এসেছে। অথচ এগুলোয় ৩ থেকে ৪ ফুট পানি থাকার কথা। ফলে তীব্র গরমে হিটস্টোকসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে জেলার কিছু কিছু এলাকার ঘেরে চিংড়ি মারা যাচ্ছে। তবে এরই মধ্যে জেলার চিংড়ি চাষীদের ঘেরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করার জন্য সেড নির্মানসহ বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত