শরণখোলায় শতবর্ষী পুকুরে মার্কেট নির্মানের  উদ্যোগ, জনমনে ক্ষোভ 

স্টাফ রিপোর্টার

আপডেট : ১১:২২ পিএম, বুধবার, ২১ জুন ২০২৩ | ২৯০

শরণখোলা উপজেলা সদর রায়েন্দা বাজারের মিষ্টি পানির জন্য সংরক্ষিত একমাত্র পুকুরটিতে দোকান ঘর নির্মানের ইজারা বন্দোবস্ত দিয়েছে বাগেরহাট জেলা পরিষদ। মঙ্গলবার (২০ জুন) এ সংক্রান্ত একটি পত্রের অনুলিপি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট আসলে বিষয়টি প্রকাশ পায়। এ ঘটনায় স্থানীয় জনসাধারনের মধ্যে ব্যপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।


শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নুর ই আলম সিদ্দিকী জানান, বাগেরহাট জেলা পরিষদের মালিকানাধীন শরণখোলা উপজেলা সদরের রায়েন্দা পুকুরটির দক্ষিন পাশে আধা-পাকা ঘর নির্মানের জন্য সাত জনের নামে ২০২২ সালের ১৭ জুলাই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত ইজারা বন্দোবস্ত দেয়া পত্রের একটি অনুলিপি (স্মারক নং-৪৬.৪২. ০১০০.০০১.৩২.১০০.২২. ২৯৮ (৭) গতকাল হাতে এসেছে। ওই পত্রে উল্লেখিত ইজারা বন্দোবস্ত নেয়া সাত ব্যক্তি হচ্ছেন, শিরিন সুলতানা রুমি, মো. আসাদুজ্জামান খান, উজ্জল সাহা, অম্বরিশ রায়, মৌসুফা নুর মুমু, মো. ইমরান উদ্দিন শুভ, শিশির কুমার সাহা। ইউএনও জানান, মিষ্টি পানির জন্য সংরক্ষিত একমাত্র পুকুরটি স্থানীয় জনসাধারনের জন্য খুবই গুরুত্বপুর্ণ।


শরণখোলা উপজেলা চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন শান্ত জানা, শতবর্ষী এ পুকুরটি রায়েন্দা বাজারের হাজার হাজার মানুষের মিষ্টি পানির চাহিদা পুরোন করে আসছে। সংরক্ষিত এ পুকুরটিতে দীর্ঘদিন ধরে মাছ চাষও বন্ধ রয়েছে। জেলা পরিষদ কিভাবে পুকুরটি ভরাট করে পাকা ঘর নির্মানের জন্য ইজারা বন্দোবস্ত দেয় তা বোধগম্য নয়। এখানে ঘর নির্মান করা হলে পুকুরটির অস্তিত্ব বিলিন হয়ে যাবে।

রায়েন্দা সরকারি পাইলট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অমলেন্দু হালদার, রায়েন্দা সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সাইদুর রহমান, শরণখোলা আইডিয়াল ইনষ্টিটিউটের অধ্যক্ষ মো. উসমান গনি জানান, তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শিক্ষার্থী ওই পুকুরের পানি ব্যবহার করে থাকে। সেখানে মার্কেট বা ঘর নির্মান হলে পুকুরে অস্তিত্ব আর থাকরে না। অনতিবিলম্বে ওই ইজারা বাতিলের দাবি জানান তারা।

রায়েন্দা ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আজমল হোসেন মুক্তা জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে পুকুরটি সাধারন মানুষের জন্য সংস্কার করা প্রয়োজন। অথচ সংষ্কার না করে জেলা পরিষদ না বুঝে ঘর নির্মানের ইজারা দিয়েছে। জেলা পরিষদের এই সিদ্ধান্ত জনস্বার্থ পরিপন্থি।

শরণখোলা উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপ-সহকারি প্রকৌশলী মেহেদী হাসান জানান, জেলা পরিষদের ওই পুকুরটি স্থানীয় জনসাধারনের জন্য গুরুত্বপুর্ণ হওয়ায় উত্তর পাশে সাত লাখ টাকা ব্যয় সম্প্রতি একটি পিএসএফ নির্মান করা হয়েছে। এছাড়া তাদের দপ্তর থেকে পুকুরটি খনন করার উদ্যোগ নেয় হলেও পূর্ব পাশে জেলা পরিষদের মার্কেট থাকায় তা সম্ভব হয়নি।

শরণখোলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ওয়াদুদ আকন, স্থানীয় বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম সাগর, জিয়াউল হাসান রোকন, মিরাজ আকন জানান, জেলা পরিষদ অনৈতিক ভাবে শতবর্ষী এ পুকুরটির পূর্ব পাশে ইতিমধ্যে মার্কেট নির্মান করে সংকুচিত করে ফেলেছে। দক্ষিন পাশে আবার মার্কেট নির্মান করা হলে পুকুরটির অস্তিত্ব হারাবে। ঐতিহ্যবাহি রায়েন্দা সরকারি পাইলট হাই স্কুল ও রায়েন্দা মডেল সরকারি বিদ্যালয়টি আড়ালে পরে যাবে। অথচ সরকার পুকুর ও জলাধার রক্ষায় কঠোর আইন প্রনয়ন করছে। তাই অনতিবিলম্বে জেলা পরিষদের আত্মঘাতি ওই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবী জানান। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনসহ উচ্চ আদালতে আইনের আশ্রয় নেয়া হবে বলেও জানান তারা।

এবিষয়ে বাগেরহাট জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ঝুমুর বালা বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। এ ব্যপারে খোঁজ খবর নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামরুজ্জামান টুকু বলেন, এ বিষয়ে কেউ লিখিত আপত্তি দিলে তদন্ত করে প্রয়োজনে ইজারা বাতিল করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত