পঁচা পানির দুর্গন্ধে দুর্বিষহ মানুষের জীবন

দখল ও দূষণে অস্তিত্ব সঙ্কটে চিতলমারীর চিত্রাসহ বহু নদী ও খাল

এস এস সাগর, চিতলমারী

আপডেট : ১২:৪৮ পিএম, মঙ্গলবার, ২৫ জুন ২০১৯ | ৫২৯

দখল ও চরম দূষণের কবলে বাগেরহাটের চিতলমারীর ‘প্রাণ খ্যাত’ চিত্রা নদীসহ বেশ কয়েকটি খাল। উপজেলা সদরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া এক সময়ের খরস্রোতা এ নদী এখন অস্তিত্ব সঙ্কটে। নদীর দুই পাড়ে বসবাসকারী প্রভাবশালীদের দখলদারিত্ব ও বাজারে বসবাসকারী কিছু দুষ্ট লোকের ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে এটি এখন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এ কারণে উপজেলার বহু নদী ও খাল বর্তমানে নাব্যতা সংকটে ভূগছে। এ পরিস্থিতিতে নৌ যোগাযোগ ও মানুষের ব্যবহার্য পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে এমনটাই জানিয়েছেন উপজেলা সদর বাজারের স্থায়ী বসবাসকারীরা। সেই সাথে তারা এসব নদী ও খাল দ্রুত পুনঃখননসহ দখলমুক্ত করার দাবিও তুলেছেন।


সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রায় তিন যুগ ধরে এ অঞ্চলের নদী ও খাল খনন না করায় অধিকাংশ নদী-খাল ভরাট হয়ে গেছে। ফলে চিতলমারী সদর বাজারের হকক্যানেল ও চিত্রা নদীসহ বেশকিছু খালের দুই পাশে বসবাসকারী প্রভাবশালীরা যে যার মত অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে পাড় দখল করে নিয়েছেন। এছাড়া ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভরাট করে ফেলা হচ্ছে নদীটি। ফলে চিতলমারীর ‘প্রাণ খ্যাত’ চিত্রা নদীটি এখন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। চিতলমারী সদর বাজারের পাশের একমাত্র এই নদীটিতে এখন হাঁটু পানিও নেই। পঁচা পানির দুর্গন্ধে দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে দু’পাড়ে বসবাসকারি মানুষের জীবন। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সদর বাজারসহ আশপাশ এলাকায় বসবাসকারীদের।

এছাড়া উপজেলার বড়বাড়িয়া, কলাতলা, হিজলা, শিবপুর, চিতলমারী সদর, চরবানিয়ারী ও সন্তোাষপুরসহ সাতটি ইউনিয়নে প্রধান তিনটি নদী ও ৫০ টি খাল এবং শতাধিক শাখা খাল রয়েছে। যার অধিকাংশ এখন নাব্যতা সংকটে। অনেক নদী ও খাল এখন কালের সাী মাত্র। এরমধ্যে হক ক্যানেল, পাটনিবাড়ি, নারাণখালী, বাঁশতলী, খাগড়াবুনিয়া, সিংগাবিলা, সোনাখালী, মরাশগুনিয়া, বসনদরি ও শরৎখালীসহ প্রায় ৫০টি খালের একই অবস্থা। এসব নদী ও খালে নাব্যতা সংকট দেখা দেয়ায় মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে-এর অধিকাংশ ভরাট হয়ে গেছে। ফলে ঠিকমত জোয়ার-ভাটার পানি ওঠানামা না করায় সেচ মৌসুমে চাষীরা ফসলে ঠিকমত পানি দিতে পারে না।

সদর বাজারের অন্যপাশ থেকে বয়ে যাওয়া হক ক্যানেলের বেশ কিছু স্থানে প্রভাবশালী লোকজন দখল করে নিয়েছে। এসব স্থানে যে যার মত অবৈধ স্থাপনা নির্মাণসহ ভরাট করে ফেলছে। ফলে নৌ যোগাযোগ একেবারে অচল হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় উপজেলার কুরালতলা, শিবপুর, কালশিরা, বারাশিয়া, আড়য়াবর্ণীসহ প্রায় আট থেকে ২০ গ্রামের কয়েক হাজার চাষীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পাশাপাশি চিতলমারী সদর বাজারে আসা-যাওয়ার জন্য কৃষিপণ্যসহ মালামাল আনা-নেওয়ার জন্য নৌকায় করে চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

সদর ইউনিয়নের রেজাউল দাড়িয়া, আব্দুল মমিন শেখ, বুদ্ধ বসু, গৌর বাইনসহ অনেকে বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, দখলবাজদের কারণে খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় এখন জোয়ার-ভাটার পানি ঠিকমত উঠতে না পারায় পানির জন্য মানুষের চরম ভোগান্তি হচ্ছে।

শেরেবাংলা ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোঃ মোহাসীন রেজা বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, এভাবে খাল দখল হতে থাকলে আগামি কিছুদিনের মধ্যে এলাকায় নদী ও খালের কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না এবং মানুষের দূর্ভোগ কোনদিনও লাঘব হবে না। তিনি দ্রুত এ সকল নদী ও খাল পুনঃ খননের জন্য জোর দাবি জানান।

তবে চিতলমারী উপজেলার নবাগত নির্বাহী অফিসার মোঃ মারুফুল আলম বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, উপজেলা সদরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া চিত্রা নদী ও হক ক্যানেলের শোচনীয় অবস্থা। বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যর সাথে আলোচনা করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত