বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে নির্মাধিন বাধের ৬টি পয়েন্টে ঝুঁকি

শরণখোলায় বেড়িবাধ এলাকা প্লাবিত, বাধ রক্ষার চেষ্টা

মহিদুল ইসলাম, শরণখোলা

আপডেট : ০৯:৩২ পিএম, শনিবার, ২১ অক্টোবর ২০১৭ | ১১৯৩

শরণখোলায় বেড়িবাধ এলাকা প্লাবিত, বাধ রক্ষার চেষ্টা

শরণখোলায় বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে নির্মানাধীন পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের বেড়িবাধের ৩টি পয়েন্ট ভেঙে এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। আরো ৩টি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বালু ও মাটির বস্তা ফেলে বাধ রক্ষার চেষ্টা করছেন এলাকাবাসী।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ এবং অমাবষ্যার প্রভাবে বলেশ্বর নদের জোয়ারের পানির চাপে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অপরদিকে, গত তিন দিন ধরে একটানা প্রবল বর্ষণে জনজীন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। উপজেলার তুলনামূলক নিচু এলাকা পানিয়ে তলিয়ে গেছে। অস্বাভিক পানিতে বহু মাছের ঘের ও পুকুর ভেসে গেছে। আমনেরও ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।


উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের ৮নম্বর বগী ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. রিয়াদুল পঞ্চায়েত বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, তার এলাকার বেড়ি বাধের তিনটি পয়েন্ট মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বলেশ্বর নদের অস্বাভাবিক জোয়ারে চাপে বগী কমিউনিটি কিনিকের সামনে এবং নতুন স্লুইচগেটের উত্তর পাশের দুটি পয়েন্ট ভেঙে পানি ঢুকে আমনের মাঠ, শতাধিক পুকুর ও মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। তিনি জানান, দু’দিন ধরে বাধ ভেঙে পানি ঢুকলেও ঠিকাদার পক্ষের কোনো লোকজন এপর্যন্ত খোঁজ না নেয়ায় এলাকাবাসীর প্রচেষ্টায় বালু ও মাটির বস্তা ফেলে ভাঙন ও পানি ঠেকানোর চেষ্টা চলছে। দ্রুত ভাঙন মেরামত না করা হলে জোয়ারে পানিতে এলাকার ব্যাপক ক্ষতি হবে।


স্থানীয় সমাজসেবক ফরিদ খান মিন্টু বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, ওই ইউনিয়নের তাফালবাড়ি লঞ্চঘাট সংলগ্ন স্লুইচগেট ও গাবতলা বেড়ি বাধের দুটি পয়েন্ট বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া রায়েন্দা গ্রামের শরীফ বাড়ির পাশের বাধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হয়। পরে এলাকাবাসী তা বালুর বস্তা দিয়ে পানি ঠেকানোর চেষ্টা করে। এছাড়া বৃষ্টির পানিতে মাঠঘাট ডুবে রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা রাজ্জাক হোসেন দিপুসহ এলাকাবাসীর অভিযোগ, নদী শাসন না করে বাধ নির্মান করায় বাধ বার বার ভেঙে যাচ্ছে। ফলে, সব সময় মানুষ তাদের জানমাল নিয়ে উৎকন্ঠায় থাকে। দ্রুত বাধ মেরামতের দাবি জানিয়েছেন তারা।


এদিকে, ভারি বর্ষণ আর জোয়ারে পানিতে শরণখোলা উপজেলা সদর রায়েন্দা বাজারে উপজেলা পোস্ট অফিস, খাদ্য গুদাম, পাঁচরাস্তা, রায়েন্দা বাজার, পুরাতন পোস্টা অফিস, উত্তর কদমতলা ও টিএন্ডটি এলাকা তলিয়ে গেছে। পোস্ট অফিসসহ এলাকার অনেকের ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। স্বাভাবিক চলাচল ও কাজকর্ম প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। বৃষ্টির সাথে থেকে থেকে দমকা ও ঝড়ো বাতাসে মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও বিকল হয়ে পড়েছে।


সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল হোসেন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, বেড়ি বাধ ভেঙে পানি ঢুকে এলাকার বেশ ক্ষতি হয়েছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিলন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, এলাকাবাসী দুর্ভোগ রাঘবে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে।

বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে নির্মাধিন বাধের ৬টি পয়েন্টে ঝুঁকি


উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিনয় কুমার রায় বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, বৃষ্টি ও জোয়ারে পানিতে কিছু পুকুর ও ঘের তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৌমিত্র সরকার বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতা স্থায়ী হলে এবং বাতাসে চারা হেলে পড়লে আমনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।


টেকসই বাধ নির্মান কাজে নিয়োজিত চায়নার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিএইচডব্লিউই’র ঠিকাদারের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। তবে, কাজ তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান রয়েল হ্যাসকনিং গ্রুপের সুপারভেশন ইঞ্জিনিয়ার শ্যামল কুমার দত্ত বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, আমাদের কাজ চলমান। বগীর ওই এলাকা একটু বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। বলেশ্বর নদের ঢেউয়ের কারণে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসীর সহযোগীতায় আমাদের লোকজন বালুর বস্তা ফেলে বাধ রক্ষার চেষ্টা করছে। ওই এলাকার নদী শাসনের জন্য বিশ্ব ব্যাংকের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত