‘আজগো এগারো বছর পর ঈদ খরচ পাইলাম’

এস এম সামছুর রহমান

আপডেট : ০১:৪১ পিএম, শনিবার, ৯ জুন ২০১৮ | ১১৩৩

‘আজগো এগারো বছর পর ঈদ খরচ পাইলাম, অনেক খুশি লাগছে, স্যার। আব্বায় সিডরে মরার পর কেউ আর ঈদ খরচ দেই নাই। যে এই টাহাডা (টাকাটা) দিছে তারে মনধে ( মন থেকে) দোয়া করি।’ আবেগে আপ্লুত হয়ে একথাগুলো বলছিল বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার আল জামিয়া ইসলামীয়া কাসেমুল উলুম কওমী মাদ্রাসার নজরানা বিভাগের (৫ম শ্রেনী) ছাত্র মাসুম বিল্লাহ (১৫)।


সাম্প্রতি আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ জামিল হোসাইন রাজৈর গ্রামে নিজ বাড়িতে শরণখোলার এতিম ও ছিন্নমূল শিশুদের সাথে একটি ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেন। ওই ইফতার মাহফিলে আগত প্রতিটি এতিম শিশুকে তিনি খামের ভিতর করে ১শ টাকা ঈদ খরচ দেন। এই ঈদ খরচ পাওয়ার পর কেমন লাগছে জানতে চাইলে এই প্রতিবেদককে মাসুম বিল্লাহ এভাবে তার প্রতিক্রীয়া ব্যাক্ত করেন।


মাসুম বিল্লাহ জানান, তার বাবা সিড়রে মারা গেছে, মা থেকেও নেই। যতদুর মনে আছে মৃত্যুর আগে তার পিতা মাসুম বিল্লাহকে ঈদের সময় ঈদ খরচ দিতেন। সে এগারো বছর আগের কথা। তার পর আর কেউ তাকে ঈদ খরচ দেয়নি।

মাসুম বিল্লাহ আরো জানান, শরণখোলা উপজেলার সিডর বিধ্বস্ত উত্তর কদমতলা গ্রামে মৃত শহিদুল মোল্লার বড় ছেলে সে। ২০০৭ সালে সিডরের সময় তার পিতা সাগরে মাছ ধরতে গিয়েছিল। সেখান থেকে সে আর ফেরেনি। পিতা হারিয়ে যাওয়ার পর ৪টি সন্তান নিয়ে সংসারের হাল ধরেন তার মা মাসুমা বেগম। সংসার চালতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। বিভিন্ন এনজিও এবং স্থানীয়দের কাছে সে প্রায় তিন লাখ টাকার দেনা হয়ে পড়েন তিনি। নিরুপায় হয়ে গেল ৫ বছর আগে মাসুমা বেগম ভারতে পাড়ি জমান। সেখানে একটি বাড়িতে ঝি-এর কাজ করে জীবন ধারণ করেন। এসব স্মৃতিচারণ করার সময় মাসুম বিল্লাহর চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে। এই একশ টাকা ঈদ খরচ পেয়ে সে অনেক খুশি হয়েছে বলে জানায়।


ওই ইফতার মাহফিলে আসা একই মাদ্রাসার ইয়াজদহম শ্রেনীর ছাত্র মোঃ নাইমুল ইসলাম (১২)। সে পাশ্ববর্তি উপজেলা মোড়েলঞ্জের সানকিডাঙ্গা গ্রামের মৃত মিলন শেখের ছেলে। ঘুমের মধ্যে তার পিতা ষ্টোকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়। এরপর তার ঠাই হয় এই এতিম খানায়। সেও ঈদ খরচ পেয়েছে একশ টাকার একটি নোট। তার কাছেও অনেক ভাল লাগছে বলে জানায়।


এবিষয়ে জানতে চাইলে মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু যুব সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা মোঃ জামিল হোসাইন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, এতিমদেরও ভাল খাবার এবং ভাল পোশাক ও ঈদ খরচ পেতে ইচ্ছা করে। তাই তিনি মোড়েলগঞ্জ ও শরণখোলার এতিম ও ছিন্নমূল শিশুদের সাথে নিয়ে ইফতার করেছেন ও তাদের সামান্ন ঈদ খরচ দিয়েছেন। দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় এতিমদের খোজ-খবর রাখেন। সমাজের প্রতিটি মানুষের উচিৎ সাধ্যানুযায়ী এতিম ও অবহেলিত শিশুদের পাশে দাড়ানো।


এবিষয়ে জানতে চাইলে শিশুদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা আস বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, অবশ্যই এই কাজটি একটি মহৎ কাজ। এভাবে ঈদ খরচ বা বিভিন্ন উৎসবে আর্থিক সহায়তা পেলে এতিম ও অসহায় শিশুদের মানষিকতার উন্নতি হয়। কিন্তু এধরনের সহায়তা তারা খুবই কম পেয়ে থাকে। সারা দেশে বিত্তবানরা যদি এধরনের মহতি কাজে এগিয়ে আসেন তাহলে এসব শিশুদের আরো বেশি মনস্তাতিক পরিবর্তন হবে। তারা আর নিজেদের অবহেলিত মনে করবে না।


বাগেরহাট ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক আল-ফারুক বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, এতিমদের বিষয়ে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনেই উল্লেখ করেছেন। আমাদের মহানবী (সাঃ) একবার রাস্তা দিয়ে হাটার সময় একটি শিশুকে কাঁদতে দেখেন। তিনি কাছে গেলে শিশুটি বলে আমার আব্বা- মা নেই। মহানবী (সাঃ) শিশুটিকে বললেন, আজ থেকে আমিই তোমার পিতা এবং আমার স্ত্রীই তোমার মা। এই বলে শিশুটিকে বাড়ি নিয়ে যান। বিভিন্ন উৎসবে তাদেরে এভাবে সহায়তা করা অনেক মহৎ কাজ। আমাদের সকলের উচিৎ এতিম ও অসহায় শিশুদের পাশে থাকা।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত