হরিণের মাংস পাচারকালে আরএফএল কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি আটক

হঠাৎ সক্রিয় হয়ে উঠেছে সুন্দরবনের হরিণ শিকারিচক্র

মহিদুল ইসলাম, শরণখোলা 

আপডেট : ০৬:১৫ পিএম, বুধবার, ৩০ মার্চ ২০২২ | ৪৩৩

হঠাৎ সক্রিয় হয়ে উঠেছে সুন্দরবনের হরিণ শিকারি চক্র। বুধবার (৩০ মার্চ) দুপুরে মোটরসাইকেলে করে মাংস পাচারকালে আটক হয়েছেন জুমায়ের (৩০) নামে এক যুবক। তাকে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা নলবুনিয়া এলাকা থেকে আটক করেন বনরক্ষীরা। এনিয়ে গত ১৮ দিনে সুন্দরবন ও লোকালয় থেকে ১২ কেজি হরিণের মাংস ও দুটি চামড়া উদ্ধার হওয়ায় প্রমান মেলে শিকারিদের সক্রিয়তার।

এদিকে, শরণখোলা উপজেলা সদর রায়েন্দা বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত হরিণের মাংস বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। চোরা শিকারিদের মাধ্যমে সুন্দরবন থেকে হরিণ শিকার করে সেই মাংস স্থানীয়ভাবে বিক্রি করছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি। এছাড়া, চাহিদা অনুযায়ী মাংস পৌছে দেওয়া হচ্ছে ক্রেতার হাতেও।


পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) মো. আসাদুজ্জামান জানান, হরিণের মাংস পাচারের গোপন সংবাদ পেয়ে আগে থেকেই ঘটনাস্থলে অবস্থান নেয় বনরক্ষীরা। এসময় আটক ব্যাক্তির মোটরসাইকেলে ঝুলন্ত ব্যাগ দেখে সন্দেহ হলে তাকে থামানো হয়। পরে তার ব্যাগ তল্লাশি করে চার কেজি হরিণের মাংস পাওয়া যায়। তিনি খুলনার পাইকগাছা উপজেলার নাসিরপুর গ্রামের মৃত মনিরুজ্জামানের ছেলে। তার বিরুদ্ধে বন আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে, উদ্ধার হওয়া হরিণের মাংস কোথা থেকে কিভাবে জুমায়েরের হাতে এলো সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানাননি ওই বন কর্মকর্তা।


বনবিভাগ জানিয়েছে, এর আগে ২৮ মার্চ সকালে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলার চরের নীলবাড়িয়া এলাকা থেকে একটি ট্রলারসহ ৮ কেজি হরিণের মাংস উদ্ধার করা হয়। এঘটনায় শিকারিদের আটক করা যায়নি। এছাড়া, গত ১২ মার্চ উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন মধ্য সোনাতলা গ্রামের সুমন মুন্সীর বাড়ি থেকে দুটি হরিণের চামড়া উদ্ধার করা হয়।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আটক জুবায়ের আরএফএল কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে শরণখোলায় প্রায় ৫বছর ধরে কর্মরত। তিনি উপজেলার সদর রায়েন্দা বাজারে পূর্ব মাথা এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। সেই সুযোগে তিনি চোরা শিকারিদের সঙ্গে গোপন সখ্যতা গড়ে তুলে হরিণের মাংস ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। হাজার হাজার টাকা লগ্নি করেন (দাদন) শিকারিদের। এই চক্র সুন্দরবন থেকে হরিণ শিকার করে তাকে মাংস সাপ্লাই দেন। তিনি তার ভাড়া বাসায় সেই মাংস ফ্রিজে রেখে সুযোগ এবং চাহিদা মতো পৌছে দেন ক্রেতার কাছে।


তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার সদর রায়েন্দা বাজারের ফেরিঘাট সংলগ্ন এলাকার দুটি স্পটে এবং কদমতলা গ্রামের একটি বাড়িতে নিয়মিত হরিণের মাংস বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া, সাউথখালী ইউনিয়নের সুন্দরবন সংলগ্ন সোনতালা, ঢালির ঘোপ এবং পানিরঘাট এলাকায় হরিণের মাংস আসে প্রতিনিয়ত। সেই মাংস বিভিন্ন হাত বদল হয়ে চলে আসে বিক্রেতা ও পাচারকারীদের হাতে। বনবিভাগ এসব মাংসের ছোটখাটো দু-একটি চালান আটক করলেও মূল হোতা ও শিকারিদের আটক করতে ব্যর্থ হয়।

এব্যাপারে সুন্দরবন সহব্যবস্থাপনা কমিটির (সিএমসি) সহসভাপতি এম ওয়াদুদ আকন জানান, উপজেলা সদর রায়েন্দা বাজারের বিভিন্ন পয়েন্টে এবং বনসংলগ্ন এলাকায় হরিণের মাংস বিক্রি হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। পাশপাশি বনবিভাগও এসব শিকারি ও মাংস পাচারকারীদের ধরতে তৎপর রয়েছে। তবে, বন্য প্রাণি হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে সবার সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। অভিযুক্তদের তালিকা করে আইনের আওতায় আনা হলে এসব অপতৎপরতা বন্ধ করা সম্ভব।


হঠাৎ শিকারি চক্রর তৎপরতা বেড়ে যাওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, হরিণসহ বন্য প্রাণি শিকারিদের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলান্সে নীতিতে আছি। তাদেরকে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। শিকারিদের দমনে বনবিভাগের অভিযান এবং নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। এদের প্রতিহত করতে হলে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। কোথাও এই চক্রের সন্ধান পেলে বনবিভাগকে জানানোর অনুরোধ করছি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত