সুন্দরবনে বন্দুকযুদ্ধে হাসান বাহিনীর প্রধানসহ ৪ দস্যু নিহত

মাসুদ রানা, মোংলা

আপডেট : ০৩:১৬ পিএম, বুধবার, ২৯ মে ২০১৯ | ১২৪৭

সুন্দরবনের চাঁদপাই রেজ্ঞে র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে বনদস্যু হাসান বাহিনীর প্রধানসহ ৪ সদস্য নিহত হয়েছে। বুধবার ভোরে পুর্ব সুন্দরবনের মরাপশুর জোংড়ার খাল এলাকায় বন্দুক যুদ্ধের এ ঘটনা ঘটে। এ সময় বিপুল পরিমান অস্ত্র ও গোলা বারুদ উদ্ধার করেছে র‌্যাব সদস্যরা।

র‌্যাব-৮ সুত্রে জানায়, দীর্ঘ দিন যাবৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন সংলগ্ন খাল ও নদীসহ উপকুলীয় অঞ্চলে একাধিক জলদস্যু,ডাকাত বাহিনী বিপুল সংখ্যক নিরীহ মৎস্যজীবি অপহরণ, মুক্তিপন আদায়সহ অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটিয়ে আসছে। বিগত সময়ে র‌্যাব-৮ এর ক্রমাগত অপারেশনে একাধিক জলদস্যু বাহিনীর প্রধান নিহত হওয়ার পাশাপাশি অস্ত্র গোলাবারুদসহ সর্বমোট ২৮৪ জন জলদস্যু আত্মসর্মপন করেছে, উদ্ধার হয়েছে বিপুল সংখ্যক দেশী-বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ। সম্প্রতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ১লা নভেম্বর সর্বশেষ আত্মসমর্পনের মাধ্যমে সুন্দরবনকে জলদস্যু-বনদস্যু মুক্ত ঘোষনা করেছেন। সুন্দরবনকে জলদস্যু অবমুক্ত রাখতে র‌্যাব-৮ নিয়মিত টহল ও গোয়েন্দা নজরদারিতে রেখেছে।

র‌্যাব আরো জানান, সুন্দরবনে মধু, কাঁকড়া এবং মাছ আহরণকারীদের বিভিন্ন সময়ে ছোট ছোট জলদস্যু বাহিনীর সদস্যরা জেলেদের আটকে রেখে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের পথ অবলম্বন করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ সকল ছোট ছোট বাহিনী সুন্দরবনের বিভিন্ন রেঞ্জের নদী এবং নদী সংলগ্ন বিভিন্ন খাল এলাকায় নিরীহ জেলেদেরকে অপহরণ ও মাছ ধরার ট্রলারে লুটপাট চালিয়ে যাচেছ এবং কৌশলে জেলেদের পরিবারকে ফোন করে জন প্রতি বিপুল অংকের টাকা মুক্তিপন দাবি করে। তাই র‌্যাব-৮ সাবর্ক্ষনিক গোয়েন্দা নজরদারী, পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবর ও স্থানীয় জনগনের তথ্যাদির উপর বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে সুন্দরবনের বিভিন্ন বনাঞ্চল যেমন-পশুর নদীর বিভিন্ন এলাকা,দুবলার চর, আলোর কোল, সুপতি, কচিখালী, কটকা, সুখতারা, শ্যালা, জামতলা বীচ, ডিমের চর, পীর চর, সোনারচরসহ এর আশপাশ স্থানে অভিযানের আয়োতায় রেখেছে।

এর ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-৮ এর একটি বিশেষ আভিযান দল ২৮ মে রাতে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের মরাপশুর সংলগ্ন জোংলার খাল এলাকায় নিয়মিত টহল পরিচালনাকালে খালের পার্শ্বে কিছু সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের আনাগোনা দেখতে পায়। তখন দূর থেকে র‌্যাবের টহল দল কর্তৃক হ্যান্ড মাইকে তাদেরকে র‌্যাবের নিকট আসতে বলা হলে তারা দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। র‌্যাবের টহল দল তাদের পিছু নিলে অতর্কিতভাবে তারা র‌্যাবের টহল দলকে লক্ষ করে গুলি বর্ষন শুরু করে। তাৎক্ষনিকভাবে র‌্যাবের টহল দল নিজেদের জীবন ও সরকারী মালামাল রক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। প্রায় ৫/৬ ঘন্টা উভয় পরে মধ্যে থেমে থেমে গোলাগুলি চলে। গুলি বর্ষন বন্ধ হলে বুধবার ভোরে টহল দল স্থানীয় জেলেদের সহায়তায় বনাঞ্চল তল্লাশী শুরু করে। প্রায় এক ঘন্টা তল্লাশী চালিয়ে ৪ দস্যুকে গুলীবিদ্ধ অবস্তায় দেখতে পায়। জেলেদের বক্তব্য অনুযায়ী তারা বনদস্যু ‘‘হাসান বাহিনীর’’ সক্রিয় সদস্য। উল্লেখ্য, ‘‘হাসান বাহিনী’’ বিভিন্ন সময়ে ‘‘কালো বাহিনী’’ ও ‘‘মাইজে ভাই বাহিনী’’ নামে চাঁদা তুলতো এবং জেলেরা তাদের এ সকল নির্মম অত্যাচারের কথা স্বীকার করেছে। পরবর্তীতে তাদেরকে দ্রুত স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্ের নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে মৃত ঘোষনা করেন। টহল দল ঘটনাস্থল থেকে ১টি এয়ারগান, ২টি বন্দুক, ৩টি ওয়ান শুটার গান, ৫টি পাইপগান ও দেশীয় ধারালো অস্ত্রসহ প্রচুর পরিমাণ গোলাবারুদ উদ্ধার করে। এছাড়া জলদস্যুদের ব্যবহৃত কাপড় এবং তাদের আস্তানায় রক্ষিত বিপুল পরিমান রশদ সামগ্রী ও তৈজষপত্র উদ্ধার করা হয়। নিহত জলদস্যু হাসান বাহিনীর প্রধান হাসান ছাড়া অন্য দস্যুর নাম পরিচয় জানা যায়নী। সকাল সাড়ে ১১টায় দস্যুদের লাশ দাকোপ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত