মৎস্য সম্পদ রক্ষায় সুন্দরবনে মাছ আহরণ বন্ধ

জীব বৈচিত্র ও মৎস্য সম্পদ রক্ষায় সুন্দরবনের অভ্যন্তরের ৪ শতাধিক খালে সারা বছর মাছ আহরণ বন্ধ থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সুন্দরবন পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগের ২৫ ফুট বা তার কম চওড়া খালগুলো এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসবে। এছাড়া পুরো সুন্দরবনের অভ্যন্তরে জুলাই ও আগস্ট মাসে মাছ ধরা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন বিভাগ। চলতি মাসের প্রথম দিক থেকে খাল চিহ্ণিত করন শুরু।

বনবিভাগ বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানায়, জুলাই ও আগস্ট মাসে পাস-পারমিট নিয়ে বনের অভ্যন্তরে খালে এক শ্রেণির অসাধু জেলে জাল দিয়ে মাছ ধরার আড়ালে বিষ প্রয়োগ করে চিংড়ি মাছ আহরণ করে। কিন্তু ওই বিষে খালের মাছসহ জীববৈচিত্র ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। যার ফলে মাছ মরে খালের পানিতে ভেসে ওঠে। বিষে মরা মাছ খেয়ে অন্যান্য জীব-জন্তু ও মারা যায়, পরিবেশের উপর বিরুপ প্রভাব পড়ে। এ কারণেই সুন্দরবন বন বিভাগ এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তবে চলতি মাসের প্রথম থেকেই বনের গহিনে এ সকল খাল গুলো চিহ্ণিত করন কাজ শুরু করেছে বনরক্ষীরা। পরিবেশবাদী ও সুন্দরবন রা কমিটির নেতৃবৃন্দ বনবিভাগের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে এ সিদ্ধান্ত পুনবিবেচনা ও সুন্দরবন উপর নির্ভর জেলেদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের দাবি জানিয়েছেন মৎস্যজীবীরা।

শাহ আলম, নুর উদ্দিন, খলিলসহ বেশ কয়েকজন জেলে বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, আমরা জন্মের পর থেকেইে সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী ও খালে মাছ আহরণ করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করি। কিন্তু কিছু অসাধু জেলে ও ব্যবসায়ীদের জন্য আমাদের সকলের ক্ষতি হবে, এটা আমরা চাই না। যারা অপরাধী শুধু তাদেরকে শাস্তি ও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।

মৎস্য ব্যবসায়ী মোল্লা জালাল উদ্দিন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, সুন্দরবনে খালে মাছ আহরণ বন্ধ করা হলে জেলে সম্প্রদায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে। নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বনের মধ্যে ঢুকে খালে বিষ দিয়ে মাছ আহরণ করে। শুধু এদের জন্য সকল জেলেকে শাস্তি দেয়া ঠিক হবে বলে আমার মনে হয় না।

সুন্দরবন সুরা কমিটির আহবায়ক নজরুল ইসলাম আকন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, যেকোন মূল্যে সুন্দরবনকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। বনবিভাগের এ সিদ্ধান্তের সাথে আমি একমত পোষন করি। পাশাপাশি সুন্দরবনের যারা ক্ষতি করছে তাদেরকে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা উচিত বলে আমি মনে করি।

সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. ফরিদুল ইসলাম বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন রক্ষার স্বার্থে বন বিভাগ যে উদ্যোগ নিয়েছে তাকে আমি স্বাগত জানাই। এ উদ্যোগকে বাস্তবায়ন করার জন্য বনবিভাগের নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে। যাতে পূর্বের ন্যায় এ উদ্যোগ ও ভেস্তে না যায়।

সুন্দরবন পুর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোঃ মাহমুদুল হাসান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহারের নির্দেশনায়, বন সংরক্ষক খুলনা সার্কেলে এ সভায় সুন্দরবন সুরক্ষায় প্রতিবছর জুলাই ও আগস্ট মাসে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে মাছ ধরা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একই সাথে ২৫ ফুট বা তার কম চওড়া সকল খালে সারা বছর মাছ ধরা বন্ধ থাকবে বলে জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র রা ও মৎস্য সম্পদের পরিমান বৃদ্ধির লে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য সকল রেঞ্জ কর্মকর্তাদের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।