কচুয়ার বাধাল ইউনিয়নে

হোগলাপাতা চাষীদের দিন কাঁটছে চরম হতাশায়

শুভংকর দাস বাচ্চু,বাধাল থেকে

আপডেট : ১০:১৬ পিএম, বুধবার, ৩০ আগস্ট ২০১৭ | ৩২৩৭

হোগলাপাতা

গ্রাম বাংলার আদি ঐতিহ্য ‘হোগলাপাতা’র জন্য একসময় প্রসিদ্ধ ছিল বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার বাধাল এলাকা। হোগলাপাতা বিক্রি করে বাধাল এলাকার অনেক চাষি স্বাচ্ছন্দে দিন যাপন করত।

কিন্তু কালের বিবর্তনে প্লাষ্টিকের যত্রতত্র ব্যবহার হোগলাচাষীদের সেই স্বচ্ছল জীবনযাপন দূর্বিসহ করে তুলেছে। আগের মত এখন আর মুখে হাসি নেই হোগলাচাষীদের পরিবারেও নেই অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা। তাই হতাশার মধ্যে দিন কাটছে তাদের।

কয়েক বছর আগেও চাটাই, চাঁচ, জোঙ্গড়া সহ হোগলাপাতার তৈরী বিভিন্ন সামগ্রীর ব্যবহারও ছিল অনেক। বর্তমানে হোগলা পাতার সামগ্রীর পরিবর্তে প্লাস্টিকের ক্যারেট, প্লাস্টিকের ড্রাম, কর্ক সেট বক্স, পলিথিন সহ বিভিন্ন আধুনিক সামগ্রী ব্যবহার বেড়েছে। একারনে হোগলাপাতার চাহিদা কমে গেছে।

অন্যদিকে কচুয়ার বাধাল এলাকা থেকে দেশের দক্ষিনাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় নৌ যোগাযোগের মাধ্যমে হোগলাপাতা পরিবহন করা হতো। কিন্তু এখানকার নদীগুলো নাব্যতা হারিয়ে ভরাট হওয়ায় সে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে পার্শ্ববর্তী হেড়মা, কালিগঞ্জ, গজালিয়া, ভাটখালী, খেজুরতলা, বয়ারসিংঙ্গা এলাকার ব্যাপারীরা এখন আর হোগলাপাতা কিনতে আসেন না।

দু’একজন আসলেও বাড়তি পরিবহন খরচের অজুহাত তুলে ন্যায্য মূল্য দিতে চাননা হোগলা চাষীদেরকে। নামমাত্র যে দাম দিতে চান ব্যাপারীরা, তাতে চাষীদের উৎপাদন খরচ ওঠেনা। একারনে হোগলাপাতা বিক্রয় করতে পারছেন না চাষিরা। সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ওইসব চাষীরা হতাশায় দিন কাটাচ্ছে।

বাধাল এলাকায় প্রায় শতাধিক কৃষক ২ থেকে ৩শ একর জমিতে হোগলাপাতার চাষ করতো। চাষিরা ঐ সময়ে প্রতি বছর ২/৩ বার পাতা বিক্রয় করতে পারতো। এতে তাদের বছরে সামান্য খরচে একর প্রতি ১৫/২০ হাজার টাকা আয় হতো।

বর্তমানে প্লাষ্টিকের যত্রতত্র ব্যবহারের কারনে হোগলাপাতার চাহিদা কমে যাওয়ায় বাজারে দাম কমে গেছে। এখন বছরে একর প্রতি ৩/৪ হাজার টাকার পাতা বিক্রি করে চাষিরা। একারনে এই হোগলাপাতা চাষ এক প্রকার বন্ধ করে দিয়েছে তারা।

দারিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত এসব চাষিরা অর্থের অভাবে অন্য কোন ফসলের চাষ করতেও পারছে না। অন্যদিকে, হোগলাপাতার গোড়ার অংশ কেটে দিলেও মাটির নিচের মূল থেকে আবার গজি (গাছের নতুন অংশ) বের হয়ে জমি ভরে যায়। হোগলা গাছের গোড়ার অংশ অনেক শক্ত হওয়ায় জমিতে ধান চাষ করতেও পারছেন না এলাকার কৃষকরা । ওইসব জমিতে ট্রাক্টর বা লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ দিতে গেলে হোগলার গোড়ায় ট্রাক্টরের ফলা বেধেঁ ভেঙ্গে যায়।

বাধাল গ্রামের হোগলাচাষী কবির শেখ জানান, তাদের ৬২ শতকের বিঘা হিসেবে ৫বিঘা জমিতে হোগলা পাতার চাষ করতো। বর্তমানে হোগলা কেউ কিনতে চায় না। দু’একজনে কিনলেও তা খুবই কম দামে।

একই এলাকার শেখ সোহরাব হোসেন জানান, তার বাধাল মাঠের জমিতে হোগলা আছে, কিন্তু বিক্রি করতে পারছেন না। এবছর ইরি মৌসুমে ১০ কাঠা জমির হোগলা কেটে ফেলে বহু কষ্টে ধান চাষ করেছিলাম কিন্তু ধান জমি থেকে কাটতে পারিনি। পাশের জমি থেকে হোগলার গজি এবং ইদুরে কেটে সব ধান নষ্ট করে দিয়েছে। বর্তমানে অনাবাদি অবস্থায় পড়ে আছে তার জমি।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিমাংশু রায় বলেন, আমাদের কাছে হোগলাচাষীদের তালিকা নেই, তবে বাধাল এলাকায় প্রচুর হোগলা দেখা যায়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাশ্বতি এদবর এ প্রসঙ্গে বলেন, উপজেলাতে কৃষকদের তালিকা হাল নাগাদ করা হচ্ছে।ওই এলাকায় আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের পাঠিয়ে হোগলাচাষীদের তালিকা করে আলাপ আলোচনার ম্যধ্যমে তাদেরকে আমরা সহায়তা দেবো।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত