করোনার লকডাউনের মধ্যে বেপরোয়া হরিণ শিকারিচক্র

সুন্দরবনে হরিণের ৩০ কেজি মাংসসহ গ্রেপ্তার-৩, আরও ২২ হরিণ অবমুক্ত

মহিদুল ইসলাম, শরণখোলা

আপডেট : ০৭:০২ পিএম, মঙ্গলবার, ৫ মে ২০২০ | ৮৯৯

সুন্দরবনে হরিণের ৩০ কেজি মাংসসহ গ্রেপ্তার-৩,

করোনার লকডাউনের মধ্যে সুন্দরবনের হরিণ শিকারিচক্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সোমবার সকালে আটক হয়েছে স্মরণকালের বৃহত্তম ২২টি জীবিত হরিণের চালান। এসময় ৩০কেজি হরিণের মাংস, ৭০০ফুট হরিণ ধরা নাইলনের দঁড়ির ফাঁদ, দুইটি ইঞ্জিন চালিত ট্রলার, একটি ডিঙি নৌকাসহ আটক করা হয়েছে তিন শিকারি। ফাঁদে আটকে রাখা জীবিত ২২টি হরিণ তাৎক্ষণিকভাবে বনে অবমুক্ত করা হয়েছে। জীবিত হরিণের বৃহত্তম এই চালান ধরা পড়ার পর বনবিভাগে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে।

পুর্ব বনবিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের টিয়ারচরে অভিযান চালিয়ে বৃহত্তম এই হরিণের চালান আটক করা হয়। শিকারিচক্রকে তিন সদস্য, মাংস ও অন্যান্য মালামাল আজ (মঙ্গলবার) সকালে রেঞ্জ অফিসে আনার পর ওই শিকারিদের বিরুদ্ধে বন ও বন্যপ্রাণি আইনে মামলা দিয়ে এদিনে দুপুরে বাগেরহাট আদালতে পাঠানো হয়েছে।

এনিয়ে গত এক মাসে ২২টি জীবিত হরিণ, ৩৯০০ফুট হরিণ ধরা ফাঁদ, ৪০কেজি মাংস, তিনটি ইঞ্জিন চালিত ট্রলার, একিট ডিঙি নৌকা ও বিভিন্ন রঞ্জামসহ শিকারি চক্রের পাঁচ সদস্যকে আটক করেছে বনবিভাগ। আটক শিকারিরা হলো বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার তালুকের চরদুয়ানী গ্রামের জয়নাল খাঁনের ছেলে আবুল খাঁন (৪২), কাঠালতলী বকুলতালা গ্রামের হরিপদ মিস্ত্রীর ছেলে সঞ্জয় মিস্ত্রী (৩২) ও খুলনার দাকোপ উপজেলার পানখালী গ্রামের মালেক শেখের ছেলে আসাদুল শেখ (২৫)।

পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদীন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, করোনার লকডাউনে মধ্যে সম্প্রতি হরিণ শিকারিচক্রের অপতৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সুন্দরবনে টহল জোরদার করা হয়। বন বিভাগের কোকিলমনি ও জ্ঞানপাড়া টহল ফাঁড়ির বনরক্ষীদের দুটি দল গত তিন-চারদিন ধরে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় চিরুনী অভিযান চালায়। অভিযানের একপর্যায় সোমবার সকালে টিয়ারচর থেকে তিন শিকারিকে আটক করতে সক্ষম হন তারা। এসময় ওই শিকারিদের স্বীকারোক্তিমতে গহীন বনের ভেতর ফাঁদে আটকে রাখা ২২টি জীবিত চিত্রল হরিণ উদ্ধার করা হয়। তাৎক্ষনিকভাবে ফাঁদ কেটে হরিণগুলো বনে অবমুক্ত করা হয়েছে। ফাঁদের মধ্যে থেকে একটি হরিণের অর্ধেকটা বন্য শুকরে খেয়ে ফেলেছে। এসময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত ৩০ কেজি হরিণের মাংস, সাতশত ফুট ফাঁদ, দুটি ট্রলার, একটি ডিঙ্গি নৌকাসহ বিভিন্ন শিকারিসরঞ্জাম জব্দ করা হয়। জব্দ করা ৩০ কেজি মাংস আদালতের অনুমতিতে রেঞ্জ অফিস চত্বরে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে।

এসিএফ জয়নাল আবেদীন আরো জানান, শিকারী দলের মুলহোতা পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী গ্রামের এফরান গোমস্তার ছেলে মালেক গোমস্তা (৫৫) পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। তার বিরুদ্ধে বন বিভাগ ও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ৫০টিরও বেশি মামলা রয়েছে। দুইমাস আগে সে জেলে থেকে বেরিয়ে এসে পুনরায় হরিণ শিকারের কাজে লিপ্ত হয়। এফরান গোমস্তাও সুন্দরবনের কুখ্যাত কাঠ ও হরিণ শিকারি হিসেবে পরিচিত।

সুন্দরবন পুর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. বেলায়েত হোসেন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, করোনার সুযোগ নিয়ে শিকারিচক্র তৎপর হয়ে উঠলে সুন্দরবনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুঁটি বাতিল করে ১০এপ্রিল থেকে টহল জোরদার করা হয়। সাম্প্রতিককালে এতোবড় জীবিত হরিণের চালান আটক হয়নি। বিষয়টি বনবিভাগকে ভাবিয়ে তুলেছে। এজন্য বনের সকল ইউনিটকে নজরদারি বৃদ্ধির পাশাপাশি অভিযান অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, এর আগে গত ১মে শরণখোলা রেঞ্জের ডিমের চল থেকে ১৫০০ফুট ফাঁদসহ দুই শিকারি, ২৩এপ্রিল শরণখোলার সোনাতলা গ্রাম থেকে ১০কেজি হরিণের মাংস, ১৭এপ্রিল চান্দেশ্বর থেকে ৭০০ফুট ফাঁদ, ১০এপ্রিল কচিখালী থেকে ৫০০ফুট ফাঁদ এবং ২৮ মার্চ বনের চরখালী এলাকা থেকে ৫০০ফুট হরিণ ধরা ফাঁদ উদ্ধার করা করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত