ইঞ্জিন চালিত নৌযানে পরিবহনের নিষেধাজ্ঞা

দুই মাস বন্ধের পর কাঁকড়া আহরণ শুরু

মাসুদ রানা, মোংলা

আপডেট : ০৭:৩৭ পিএম, শনিবার, ২ মার্চ ২০২৪ | ২৩২

কাঁকড়া
দুই মাসের নিষেধাজ্ঞর পর আবারও শুরু হয়েছে কাঁকড়া আহরণের জন্য বন বিভাগ থেকে পাশ-পারমিট। তাই দীর্ঘ সময় অলস বসে থাকার পর সুন্দরবনে নদী ও খালে কাঁকড়া আহরণের জন্য সরঞ্জম নিয়ে ছুটছেন জেলেরা। শুক্রবার (১ মার্চ) থেকে সুন্দরবনে কাঁকড়া আহরণ শুরু হলেও আহরণের নৌকা ও মালামাল সংগ্রহে দেড়ি ও প্রস্তুতি নিতে দেড়ি হওয়ায় শনিবার বিকালের ভাটিতে বনের গহীনে প্রবেশ করতে শুরু করেছে মোংলা, রামপাল, দাকোপ সহ উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেরা।
পুর্ব সুন্দরবন চাঁদপাই রেঞ্জের তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবনের ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে জলভাগের পরিমাণ ১ হাজার ৮৭৪ দশমিক ১ বর্গকিলোমিটার, যা পুরো সুন্দরবনের আয়তনের ৩১ দশমিক ১৫ শতাংশ। জলভাগে ছোট-বড় মিলিয়ে ৪৫০টি নদ-নদী ও খাল আছে। এসব খালে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ছাগাএ ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া রয়েছে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারী দুই মাস কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম হওয়ায় ৫৯ দিনের জন্য জেলেদের সুন্দরবনে প্রবেশ করে কাঁকড়া ধরার অনুমতি বন্ধ রাখে বন বিভাগের পক্ষ থেকে।
করমজল বন্যপ্রাণী ও ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির জানান, সুন্দরবনের মধ্যে অভয়ারণ্য ঘোষিত ৩০টি খাল এবং ২৫ ফুটের কম প্রশস্ত খালে সারা বছরই কাঁকড়া ধরা নিষিদ্ধ থাকে। বাকি অংশের নদী ও খালে বন বিভাগের বৈধ পাস-পারমিটধারী প্রায় ১৫ হাজার জেলে শুধু কাঁকড়া আহরণ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন। ১৯৯৮ সালে কাঁকড়া রপ্তানি নীতিমালা প্রণয়নের পর থেকেই প্রতিবছর দুই মাস কাঁকড়া ধরার পাসপারমিট বন্ধ রাখা হয়।
কাকড়া আহরণকারী মোংলার জয়মনি এলাকার আনিছুর রহমান জানায়, আর্থিকভাবে সচ্ছল কোনো লোক সুন্দরবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাঁকড়া ধরতে যান না। যারা যান, তারা প্রায় সবাই দরিদ্র। দুই মাস নিষেধাজ্ঞা চলাকালে দরিদ্র জেলেদের চরম দুর্দিন গেছে। বন্ধের দিনগুলোয় সরকারি কোনো ভাতার ব্যবস্থা না থাকায় মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়েছে তাদের। শুক্রবার সকালে কাঁকড়া ধরার অনুমতি পেয়ে তারা আশার আলো দেখছেন।
একই এলাকার ছগির মোল্লা জানায়, সংসারে সাতজন সদস্য। সুন্দরবনে একদিন না গেলে তার চুলা জ্বলে না। দুই মাসের কাঁকড়া আহরণ বন্ধে দিনমজুরি করে কোনোমতে সংসার চালিয়েছেন। মহজানের কাছ থেকেও ধার নিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
জেলেদের অভিযোগ, বনবিভাগ যে উদ্দেশ্যে দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল তা সফল হয়নি। কারণ, নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও গোপনে অসাধু লোকজনের সাথে আতাত করে কাঁকড়া আহরণ করা হয়েছে এর বহু প্রমান রযেছে।
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দে বলেন, কাঁকড়া বংশ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সুন্দরবনে বিভিন্ন নদী-খালে দুই মাস জেলেদের কাঁকড়া আহরণ নিষিদ্ধ ছিল। ১ মার্চ থেকে বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে জেলেরা প্রবেশ নিষিদ্ধ অভয়াশ্রম ছাড়া অন্য নদী-খালে কাঁকড়া আহরণ করতে পারবেন। তবে কেউ যাতে সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরার অনুমতি নিয়ে বেআইনি কর্মকাণ্ডে জড়িত হতে না পারে, সেজন্য বনরক্ষীদের ষ্মার্ট পেট্টোলিং টহল ও অন্যান্য কার্যক্রম জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে ইঞ্জিন চালিত কোন নৌকা বা ট্রালার কাঁকড়া পরিবহনের ক্ষেত্রে কঠোর নিদের্শনা রয়েছে। শুধু পরিবহন করতে পারবে যে নৌকায় কাঁকড়া আহরণ করে সেই নৌকায়। আর এ ব্যাতিত ট্রালার যোগে পরিবহন করছে যদি এরকম কাউকে পাওয়া বা এর সাথে বন রক্ষীদের কেউ জড়িত থাকে প্রমান পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও জানায় বন বিভাগের এ কর্মকর্তা।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত