৯৯৯ এ ফোন পেয়ে উদ্ধার করলো পুলিশ ও বন বিভাগ

সুন্দরবনে ঘুরতে এসে বাঘের মুখ থেকে রক্ষা পেলো ৩১ পর্যটক

মাসুদ রানা, মোংলা

আপডেট : ১০:৪৪ পিএম, সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ | ২৩৪

সুন্দরবনে ঘুরতে এসে বাঘ ও বিভিন্ন হিংস্র বন্যপ্রানী মুখ থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেলো ৩১ জন পর্যটক, বুদ্ধি খাটিয়ে জাতীয় জরুরী সেবার হটলাইন ৯৯৯-এ ফোন দিলে ৩১ পর্যটককে উদ্ধার করলেন মোংলা থানা পুলিশ ও করমজলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহ একদল বন রক্ষীরা। সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারী) দুপুর সাড়ে ৪টার দিকে তাদের বন্যপ্রানী প্রজনন কেন্দ্র ও পর্যটক ষ্পট করমজল এলাকার সুন্দরবনের গহীন থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়েছে। পথ হারিয়ে প্রায় ৪ ঘন্টা বনের ভিতরে আটকা পড়েছিল এ সকল পর্যটকরা।


মোংলা থানার ওসি কে এম আজিজুল ইসলাম ও করমজল বন্যপ্রানী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির জানান, সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারী) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বাগেরহাটের চিতলমারি থেকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ ৩১ জনের একটি কিশোর পর্যটক দল গাড়ী যোগে সুন্দরবনের করজলে ভ্রমণে আসে। শহরের পিকনিক কর্নার থেকে বোঝাই করে আসা একটি জালী ঘাটে বেধে রেখে বন বিভাগের কাউকে কিছু না জানিয়ে পায়ে হেটে ছোট্ট একটি জায়গা দিয়ে বনের গহীনে চলে যায় তারা। বনে প্রবেশের কিছু সময় পর ফেরত আসতে গিয়ে তারা পথ হারিয়ে ফেলে। সেখানে প্রায় সাড়ে ৩ ঘন্টা চেষ্টা করেও কোন কুল-কিনারা না পেয়ে বাঘ ও বিভিন্ন বন্যপ্রানীর ভয়ে কম্পিত হয়ে পড়ে।


সর্বশেষ দুপুর আড়াইটার দিকে পর্যটকদের মধ্য থেকে ফেরদৌস নামের এক কিশোর বুদ্ধি খাটিয়ে তার মোবাইল থেকে ৯৯৯ এ কল দিয়ে পুলিশের সাহায্য চায় তারা। এসময় তার ফোনে চার্জ নাই থাকায় দ্রুত অন্য পর্যটকদের বেশ কয়েকটি নম্বর সংগ্রহ করে মোংলার অফিসার ইনচার্জ কে এম আজিজুল ইসলাস সহ থানা পুলিশ। পরে পুলিশ দ্রুত করমজলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবিরকে অবহিত করলে পুলিশ ও বন বিভাগের যৌথ টিম বনের বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশী চালায়। পরে বিকাল সোয়া ৪টার দিকে তাদের সন্ধান মিলে। তবে দীর্ঘ সময় বনের মধ্যে থাকায় পর্যটকদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ভয়ে অসুস্থ্য হয়ে পরে। পুলিশ ও বন বিভাগের কর্মীরা পথ হারিয়ে যাওয়া অক্ষত অবস্থায় বনের গহীন থেকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় এ সকল পর্যটকদের। করমজল থেকে বোট যোগে ফেরত এনে পুলিশের সহায়তায় বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ৩১ পর্যটককে তাদের চিতলমারী উপজেলার নিজ নিজ বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয়েছে।


উদ্ধারকৃত পর্যটক ফেরদৌস জানায়, আনন্দের ছলে যখন বনে প্রবেশ করি, তখন মনেই হয়নী য়ে আমরা কোথায় যাচ্ছি। কিন্ত যখন পথ পাইছিলাম তখন অনেক ভয় করচিল, তবে সহপাঠিদের সাহস যোগিয়েছি এবং বুদ্ধি খাটিয়ে ৯৯৯ এ কল দিয়ে পুলিশের সাহায্য চেয়েছি। আগে জানতাম না, জাতীয় জরুরী সেবার হটলাইন ৯৯৯-এ ফোন দিলে প্রশাসন দ্রুত সহায়তা করে তার প্রমান আজ পেয়েছি এবং পুলিশ ও বন বিভাগের সহায়তায় উদ্ধার হতে পেরেছি।


পুর্ব সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রানী প্রজনন কেন্দ্র ও পর্যটক ষ্পট’র ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির জানায়, যে এলাকায় এই ৩১ পর্যটক প্রবেশ করেছে, সেখানে অগ্নেয়াস্ত্র সহ বন রক্ষী ছাড়া কেউ প্রবেশ করেনা। প্রায় সময়ই ওখানে বাঘ ও হিংস্র বন্যপ্রানীর আনা-গোনা রয়েছে। এছাড়া বাঘতো প্রায় সময় ওখানে আসে যা বন রক্ষী অনেকেই দেখেছে, ওখানে বাঘের আবাসস্থল। পর্যটকদের ভগ্যের ফলে জীবন নিয়ে ফিড়ে আসতে পেরেছে। তাই আল্লাহর রহমতে তাদের অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি।

মোংলা থানার অফিসার ইনচার্জ কে এম আজিজুল ইসলাম বলেন, দুপুরের পর জাতীয় জরুরী সেবার হটলাইন ৯৯৯-এ ফোন আসে সুন্দরবনের করমজলের ৩১ জন পর্যটক পথ হারিয়ে বনের গহীনে আটকা পরেছে। বন বিভাগের হাওলাদার আজাদ কবিরকে অবহিত করি এবং মোংলা থানার একদল পুলিশ দ্রুত সেখানে যায়। পরে বনের গহীনে তল্লাশী করে তাদের উদ্ধার করতে সক্ষম হই। পুলিশের সহায়তা সেখান থেকে এনে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে তাদের নিজ এলাকায় পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।


সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রানী প্রজনন কেন্দ্রে সেট ও অফিস ঘরের পাশে প্রায় সময়ই বাঘ ও অন্যান্য হিংস্র বন্যপ্রানী আনা-গোনা ও ডাকশোনা যাচ্ছে। গত সপ্তাহের দুই বার করমজনের পাশের খালের পাড়ে বাঘ দেখা গেছে বলেও জানায় থানার এ কর্মকর্তা।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত