অপহরণ করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবী, নারী সহ চক্রের ৭ সদস্য আটক

মোংলা প্রতিনিধি

আপডেট : ১১:০২ পিএম, বুধবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৪ | ২১৫

সুন্দরী এক নারীকে দিয়ে রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের এক কর্মকর্তাকে কৌশলে ডেকে এনে আটক রেখে মুক্তিপন ও চাদাঁ আদায়ের অভিযোগে এক নারী সহ চক্রের ৭ সদস্যকে আটক করেছে রামপাল থানা পুলিশ। মঙ্গলবার রাতভর অভিযান চালিয়ে মোংলা ও রামপালের বিভিন্ন এলাকায় থেকে তাদের আটক করা হয়। এ চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেফতারেপুলিশের অভিযান চলমান রয়েছে। বুধবার দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানায় মোংলা-রামপাল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মুশফিকুর রহমান তুষার। এ নিয়ে ভয়ভীতি, হত্যার হুমকি, অপহরণ ও মারধরে অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে। এলাকায় জনমনে আতংক বিরাজ করছে।


পুলিশ জানায়, সম্প্রতি মোংলা ও রামপাল সহ উপকুলীয় এলাকায় গড়ে উঠেছে একটি বড় প্রত্যারক চক্র। যারা নারীদের দিয়ে প্রথমে মোবাইল ফোনে সম্পর্কের গড়ে তোলে, পরে দেখা করার কথা বলে ডেকে এনে আকটে রেখে মোটা অংকের মুক্তিপন ও চাদাঁ আদায় করতো বলে এমন বেশ কয়েকটি অভিযোগ আসে পুলিশের কাছে। পুলিশও তৎপর হয়ে খুজতে থাকে তাদের।



সম্প্রতি আত্নসমর্পনকরা বনদস্যু রফিকুল ইসলামের ছেলে শাহীন শেখ মোবাইল ফোন ব্যাবহার করে কথিত প্রেমিকা টিনাকে সাথে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যাবহার করে একটি প্রতারক সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। তারা ওই নারী সদস্যকে দিয়ে প্রেমের ফাঁদ পাতে। এরই মধ্যে গত ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে সুরাইয়া আক্তার টিনা নামের এক নারী প্রতারক রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাওয়ার মেক প্রজেক্ট ম্যানেজার আদিল মাহমুদকে ফোন করে বলে তার স্বামীর সাথে ম্যানেজারের স্ত্রীর অবৈধ সম্পর্ক এব তার কিছু গোপন ছবি আছে সেগুলো তাকে দেখাবে বলে ডাকে। এতে সে বিশ্বাস না করে ফোনটি কেটে দেয়। পরে ১৩ ডিসেম্বর পুনরায় অপর একটি নাম্বর দিয়ে তার সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং দেখা করার কথা বলে। তার কথার স্বরল বিশ্বাসে দেখা করার কথা স্বীকার করলে মোংলা-খুলনা মহাসড়কের বেলাই ব্রিজ এলাকায় আসতে বলে। রাত সাড়ে ৭টার দিকে ম্যানেজার আদিল মাহমুদ সেখানে দেখা করতে গেলে সেই সুন্দরী নারীকে দেখতে পায় এবং তার সাথে কথা বলে। কিছুক্ষনের মধ্যে কিছু বুঝে উঠার আগেই প্রতারকদের অন্যান্য সদস্যরা তাকে চারদিক থেকে গিড়ে ফেলে এবং মারধর শুরু করে। কিছু পর তার হাত-পা ও চোঁখ-মুখ বেধে একটি মাহেন্দ্র যোগে অপহরণ করে বেশ কিছু দুড়ে নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে তার কাছে থাকা একটি টিভিএস মোটরসাইকেল, একটি আই-ফোন ও সাথে থাকা নগদ ১৭ হাজার ৫শ টাকা, এটিএম কার্ড ছিনিয়ে নেয়। কাছে থাকা তার মোবাইল দিয়ে স্ত্রীকে ফোন করে মুক্তিপন হিসেবে ১০ লক্ষ টাকা চাদাঁ দাবী করে চক্রটি। সেখানে তাকে হত্যার ভয় দেখিয়ে এবং মারধর করে এক ঘন্টার মধ্যে তার স্ত্রীর কাছ থেকে ৪৯ হাজার ৯৭০ টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। পরে বাকি টাকা আগামী ৩/৪ দিনের মধ্যে দিবে এ স্বীকারুক্তিতে, না দিলে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে চোখ বাঁধা অবস্থায় রাত সোয়া ১০টার দিকে অন্য একটি নির্জন জায়গায় ছেড়ে দিয়ে চলে যায় তারা। জীবনের ভয়ে এ ঘটনা কাউকে না বললেও ১৬ জানুয়ারী সকাল ৮ টার দিকে ফয়লা স্টান্ড এলাকায় মাহেন্দ্র ড্রাইভারকে দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয় আদিল মাহমুদ। পুলিশ এসে ড্রাইভর আটক করে এবং তার দেয়া তথ্যমতে বিভিন্ন এলাকা থেকে মোঃ টিটু মোল্লার মেয়ে সুরাইয়া আক্তার টিনা (১৮), রফিকুল ইসলামের ছেলে শাহিন শেখ (২২), মোঃ আবুল হাসেম শেখ’র ছেলে মোঃ আব্দুল্লা শেখ (২০), ইব্রাহিম মোল্লা টুকুর ছেলে আসলাম মোল্লা আকাশ (২০), গোলাপ শেখ’র ছেলে ইমন শেখ (১৯), উজির পাই’র ছেলে ফেরদাউস হাসান জয় (১৯) ও মৃত শহিদুল ইসলামের ছেলে মোঃ রমজান শেখ (২০) সহ ৭ জনকে আটক করে রামপাল থানা পুলিশ। এদের সকলের বাড়ি রামপাল উপজেলার শ্রীফলতলা গ্রামের বিভিন্ন এলাকায়।



উদ্ধার করা হয় আদিল মাহমুদের ব্যাবহৃত মোটরসাইকেল ও কিছু নগদ টাকা। তবে ছিনিয়ে নেয়া আইফোনটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলে জানায় পুলিশ। আটক এ চক্রের সদস্যদের রাতে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং বেশ কিছু চাঞ্চর‌্যকর তথ্য পেয়েছে পুলিশ বলেও জানায় সহকারী পুলিশ সুপার।



উপকুলীয় এলাকায় গড়ে ওঠা এ চক্রকে এখনই দমন করতে না পারলে, মোংলা বন্দর ও শিল্পাঞ্চলের মানুষ ও ব্যাবসায়ীরা রাস্তায় বের হওয়াই দায় হয়ে দাড়াবে বলে মনে করেণ স্থানীয়রা।



মোংলা-রামপাল সার্কেল সহকারী পুলিশ সুপার মুশফিকুর রহমান তুষার বলেন, গত মাসে এমন একটি অভিযোগ পুলিশের কাছে আসলে এটা নিয়ে গোপনে আমার কাছ করতেছিলের তারা। হঠাৎ ১৬ জানুয়ারী সন্ধ্যায় মাহেন্দ্র ড্রাইভারকে দেখে আমাদের খবর দিলে প্রথমে তাকে গ্রেফতার করি এবং জিজ্ঞাসাবাদের আসামীদের নাম বলে সে। তার দেয়া তথ্যমতে এলাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিযোন চালিয়ে প্রধান অভিযুক্ত সহ ৭জনকে আটক করা হয়। এদের বিরুদ্ধে এর আগেও বহু অভিযোগ রয়েছে থানায় এবং এ চক্রের সথে জড়িত অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি। আদিল মাহমুদ বাদি হয়ে আটককৃদের সহ অজ্ঞাতনামা বেশ কয়েক জনের নামে মামলা দায়ের শেষে বুধবার দুপুরে তাদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠিনো হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত