১৭ ডিসেম্বর বাগেরহাট মুক্ত দিবস

সিকদার মনজিলুর রহমান

আপডেট : ১০:৫৮ পিএম, বৃহস্পতিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ | ২৭০

প্রতিকী ছবি

উনিশ শ’ একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর সারাদেশ যখন বিজয়ের আনন্দে উত্তাল বাগেরহাটের আকাশে তখনও উড়ছিল চাঁদ তারা খচিত পাকিস্তানী পতাকা। তখনও নির্যাতন, হামলা, লুটপাট চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা।


১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী রাজধানী ঢাকায় রেসকোর্সে আত্মসমর্পণ করলেও বাগেরহাট হানাদার মুক্ত হয় একদিন পর ১৭ ডিসেম্বর এবং ১৮ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় । পাকিস্তান সরকারের তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী মাওলানা আবুল কালাম মুহাম্মদ ইউসুফ (একেএম. ইউসুফ) রাজাকার-আলবদর বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা জন্মস্থান বাগেরহাট জেলার শরণখোলায় হওয়ায় তখনও বাগেরহাট ও তার অধীনস্ত থানাগুলোও ছিল রাজাকার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে।

একেএম ইউসুফের দোসর খুলনা অঞ্চল প্রধান রাজাকার রজব আলী ফকির ও কুখ্যাত আকিজ উদ্দিন ফকির নেতৃত্বে বাগেরহাটে তখনও ব্যাপক লুঠপাট ও মুক্তিকামী মানুষকে হত্যা ও নির্মম নির্যাতন অব্যাহত ছিল। মদনের মাঠ ছিল রাজাকারদের ক্যাম্প, বর্তমান পানি উন্নয়ন বোর্ড। জেলা পরিষদ ডাক বাংলো ছিল রাজাকারদের বিচারালয় আর মাঠ টর্চার সেল। ১৬ ডিসেম্বর ঢাকাসহ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাগেরহাটের মুক্তিযোদ্ধারা উদগ্রীব হয়ে পড়ে। তারা শহর দখলের পরিকল্পনা করে।

১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে বাগেরহাট শহরের ডাকবাংলোতে অবস্থিত রাজাকারদের ক্যাম্প দখল করে সেখানে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো হয়। এইদিন সকালে জেলার চিতলমারীর সন্তোষপুরে অবস্থিত বাগেরহাট সাব-সেক্টরের হেড- কোয়াটার থেকে সাবসেক্টর কমান্ডার তাজুল ইসলাম মুক্তিযোদ্ধাদের ফল-ইন করিয়ে মোট দুটি গ্রুপে ভাগ করে বাগেরহাট শহরের দিকে রওনা হন। তাজুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন বড় দলটি মুনিগঞ্জ খেয়া পার হয়ে বাগেরহাট শহরে ঢোকে।

অন্যদিকে ছোট আরেকটি দল সুলতানপুরের পথে বাগেরহাট মাঝিঘাট দিয়ে নদী পার করানো হয়। দ্বিতীয় দলের নেতৃত্ব দেন কমান্ডার রফিকুল ইসলাম খোকন ও সৈয়দ আলী। শহরের উত্তর-পূর্ব দিক দিয়ে ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে মেজর জিয়া উদ্দিনের বাহিনী সম্মিলতভাবে বাগেরহাট শহর দখলের জন্য আক্রমন করেন। বাগেরহাট সদর থানায় রাজাকার ক্যাম্পে অবস্থানরত রাজাকার-আল বদর ও পাকিস্তানী বাহিনী প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে পাকিস্তান বাহিনী পালিয়ে যায়।

ঐ দিন দুপুরেই বাগেরহাট শত্রু মুক্ত হয়। বিজয়ের আনন্দে সাধারণ মানুষ উল্লাস ও আনন্দে ফেটে পড়ে। মুক্তিকামী জনতাকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা উত্তোলন করেন। বাগেরহাট শহর মুক্তি প্রসঙ্গে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা হাজরা জাহিদুল ইসলাম মন্নু জানান, ১৭ ডিসেম্বর দুপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মিলিত আক্রমণের মুখে বাগেরহাট সদর মুক্ত হলে কচুয়াসহ অন্যান্য থানার রাজাকার আলবদর বাহিনীর সদস্যরা কেউ পালিয়ে যায়, আর কেউ আত্মসমর্পণ করে।

আমাদের কচুয়া ছিল রাজাকার কমান্ডার মনিরুজ্জান তিনিও সদলবলে কচুয়া ছেড়ে পালিয়ে যান। কচুয়ায় রাজাকারদের ক্যাম্প ছিল তৎকালীন সিও অফিস বর্তমান উপজেলা পরিষদ ভবন । রাজাকারগন পালিয়ে গেলে কচুয়ার স্থানীয় জনগণ কচুয়ার পানীয়জলের দিঘীতে প্রচুর পরিমান আগ্নেয় অস্ত্র গোলাবারুদ এবং স্থানীয়দের বাড়িঘর থেকে লুট করে আনা হাড়িপাতিল ডেগ খোন্তা কুড়াল উদ্ধার করে । ঐ দিনই সমগ্র বাগেরহাট মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে এবং ১৮ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা বর্তমান স্বাধীনতা উদ্যান এলাকায় উড়ানো হয়।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত