এখনো উদ্ধার হয়নি সুন্দরবনে অপহৃত ১৩ জেলে

আপডেট : ১২:২১ এএম, বুধবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২২ | ৪৬৩

সুন্দরবন

বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জে থেকে মুক্তিপণের দাবিতে অজ্ঞাত পরিচয় বনদস্যুদের হাতে অপহৃত ১৩ জেলে এখনো উদ্ধার হয়নি। সুন্দরবনের গহীন অরণ্যে বনদস্যুদের কাছে আটকে থাকা জেলেদের ওপর চলছে নির্যাতন। দাবিকৃত মুক্তিপণ না পেলে এসব জেলেদের হত্যা করা হবে বলে হুমকি দিচ্ছে বনদস্যুরা। মুক্তিপণের টাকা শোধ করে দ্রুত ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য পরিবারের সদস্যদের কাছে মোবাইল ফোনে আকুতি জানিয়েছেন অপহৃত জেলেরা। এই অবস্থায় দিন যতো বাড়ছে আপহৃত এসব দরিদ্র জেলে পরিবারে উৎকন্ঠা ততোই বাড়ছে। কান্নার রোল পড়েছে অপহৃত জেলেদের পরিবারে। সন্তানকে ফেরত পেলে আর কোনোদিন সুন্দরবনে পাঠাবেন না বলেও প্রতিজ্ঞা করেছেন তারা।

মঙ্গলবার দুপুরে এসব তথ্য জানিয়েছেন বনদস্যুদের আস্তানায় জিম্মি থাকা জেলে সোহেল মল্লিকের মহাজন বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার রতিয়া রাজাপুর গ্রামের মৎস্য ব্যবসায়ী মো. ছগির আকন। সোহেল বাগেরহাট সদরের ডেমা গুচ্ছগ্রামের হতদরিদ্র হাবিব মল্লিকের ছেলে। এদিকে, অপহৃত জেলেদের উদ্ধারে মঙ্গলবার থেকে র‌্যাব ও কোষ্টগার্ডের পাশাপাশি বাগেরহাট পুলিশের ৪টি টিম সুন্দরবনে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে।

বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনে প্রথম অপহবনের ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের বেড়ির খাল ও হরমল খালে। ওইদিন রাতে কাঁকড়া আহরণে থাকা জেলেবহরে হানা দিয়ে অজ্ঞান পরিচয় একটি সশস্ত্র বনদস্যু দল ১০ জেলেকে মুক্তিপনের দাবীতে অপহরণসহ ৭ মন কাঁকড়াসহ মালামাল লুটে নেয়। সুন্দরবনের গহীন অরণ্যে আটকে রাখা জেলে প্রতি ১০ হাজার টাকা করে মোট ১ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে বনদস্যুরা। অপহৃত এসব জেলেদের বাড়ি বাগেরহাট সদরের ডেমা, মোংলা ও রামপাল এলাকায়। দ্বিতীয় অপহবনের ঘটনাটি ঘটে শনিবার রাতে চাঁদপাই রেঞ্জের শ্যালা নদীর চৌরি অফিস সংলগ্ন আলকি এলাকা থেকে ৯০ হাজার টাকা মুক্তিপণের দাবীতে এই ৩ জেলেকে অপহরনের পাশাপাশি বনদস্যুরা লুটে নিয়েছে ১০ হাজার টাকার মাছ। মুক্তিপনের দাবীতে অপহৃত এই ৩ জেলের বাড়ী খুলনার বটিয়াঘাটা এলাকায়। এরপরের দিন রবিবার রাত ৯টার দিকে চাঁদপাই রেঞ্জের হাড়বাড়ীয়া ও চরাপুটিয়া ফরেস্ট অফিসের মাঝামাঝি বুজবুজে এলাকা বরশি দিয়ে আছ আহরনকালে দুটি নৌকায় এসে ৪ জেলের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকার মাছ লুটে নিয়েছে বনদস্যুরা।


মৎস্য ব্যবসায়ী মো. ছগির আকন জানান, মঙ্গলবার সকালে বনদস্যুদের আস্তানা থেকে তার নৌকার জেলে সোহেল ফোন করে জানিয়েছেন, বনদস্যুরা মুক্তিপনের দাবীতে তাদের ওপর নির্যাতন করছে। মুক্তিপণের টাকা না পেলে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। সবাই কান্নাকাটি করছেন বলে জানিয়েছে সোহেল। জেলেদের আপহরণের বিষয়ে প্রশাসনের লোকদের সাথে মৎস্য ব্যবসায়ীদের কথা হয়েছে। বনদস্যুদের কোনো প্রকার টাকা না দিতে নিষেধ করা হয়েছে। যে কারণে আমরা বনদস্যুদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারছিনা। এই মৎস্য ব্যবসায়ী বলেন, র‌্যাবের তৎপরতায় বনদস্যু বাহিনীগুলো আত্মসমর্পনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণা করেন। এরপর গত ৪ বছর ধরে শান্ত ছিলো সুন্দরবনের পরিবেশ। গত কয়েক দিন ধরে সুন্দরবনে আকস্মিক মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে অজ্ঞাত পরিচয়ের একটি বনদস্যু বাহিনী। এতে আতংকিত হয়ে পড়েছি বনজীবী জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা।

সুন্দরবনে মুক্তিপনের দাবিতে অপহৃত জেলে সোহেল মল্লিকের বাবা বাগেরহাট সদরের ডেমা গুচ্ছগ্রামের হতদরিদ্র হাবিব মল্লিক ও মা ঝর্ণা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ছেলেডারে ডাকাতি ধইরে নিয়ে গেইছে। ছাড়ায়ে আনতি মেলা টাকা চাচ্ছে। আমরা গরিব মানুষ এতো টাকা কোয়ানে পাবো। আপনারা আমাগো ছেলেডারে ফেরত আইনে দেন। একবার আনতি পারলি আর কোনো দিন ওরে সুন্দরবনে কাড়া (কাঁকড়া) ধরতি পাঠাবো না।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মোরেলগঞ্জ থানার অফিসার ইন চার্জ মো. সাইদুর রহমান ও শরণখোলা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ইকরাম হোসেন জানান, অপহৃত জেলেদের উদ্ধারে র‌্যাব ও কোষ্টগার্ডের পাশাপাশি মঙ্গলবার থেকে বাগেরহাটের রামপাল, মোংলা, মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা থানা পুলিশের পৃথক চারটি টিম সুন্দরবনে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে। খুব দ্রুতই অভিযান সফল হবে বলে আশা করছেন তারা।


মোংলা কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন সদর দপ্তরের গোয়েন্দা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মামুনুর রহমান বলেন, এই মুহুর্তে সব তথ্য বলা যাবে না। আমরা অনেকটা অগ্রসর হয়েছি। অভিযান অব্যাহত আছে। তবে, সহসাই একটা ভালো খবর দিতে পারবো।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত