মোংলায় কিশোরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার, স্বামী আটক

মোংলা প্রতিনিধি

আপডেট : ১১:২৩ পিএম, শনিবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ৯২৯

মোংলায় ঘরের আড়ার সাথে গলায় ফাঁস লাগানো ঝুলন্ত অবস্থায় এক কিশোরীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে মোংলা পোর্ট পৌর শহরের ছত্তার লেন এলাকার মোস্তাফিজুর রহমানের বাড়ীর একটি কক্ষ থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় কিশোরীর পরিবারের দাবী হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখার অভিযোগে স্বামী মহসিনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

পুলিশ ও নিহতের পরিবার জানায়, মোংলা পোর্ট পৌর শহরের শ্রমিকল্যাণ সড়কের বাসিন্দা বাবুল হোসেনের ছোট মেয়ে বর্নালী (২০) কে জোর পুর্বক বিয়ে করেন মাদ্রাসা রোডের বাসিন্দা এনামুল খাঁনের ছেলে মহসিন খাঁন। তারা দুজনেই শহরের ছত্তার লেন এলাকার মোস্তাফিজুর রহমানের বাড়ীতে একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে গোপনে বসবাস করতেন। তবে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বর্নালীকে বিয়ে করার কোন বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি মহসিন।

পিতা-মাতার অমতে বিয়ের ৪ মাসের মাথায় শনিবার সকালে দুজনের মধ্যে পারিবারিক সমস্যা নিয়ে বাক-বিতন্ডা হলে স্বামী মহসিন স্ত্রী বর্নালীকে মেরে ঘরে আটকে রেখে বাহির থেকে দরজা বন্ধ করে চলে যান। পরে কৌশলে মহসিন তার স্ত্রীর মোবাইল ফোন আনার জন্য শ্যালক জুবায়ের হোসেন মারুফকে (১৪) ওই ঘরে পাঠান মহসিন বলে অভিযোগ নিহত বর্নালীর পরিবারের। পরে দরজা খুলে বর্নালীর লাশ ঘরের আড়ার সাথে ঝুলতে দেখেন তারা।

নিহত বর্নালীর ছোট বোন ও মা গোলজান বিবির দাবী, সস্প্রতি বর্নালী ও মহসিনের একসাথের একটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে বর্নালী। ওই সময় থেকেই এ নিয়ে মহসিনের আগের স্ত্রীর সাথে মহসিনের ঝগড়া হয়। সেই রাগে মহসিন শনিবার বর্নালীকে বেধরক মারধর করে ঘরের দরজা আটকে অন্যত্র চলে যায় মহসিন। তবে এ ঘটনার জন্য মহসিনই পুরোপুরি দায়ী, আমরা এর সঠিক বিচার চাই বলে দাবী বর্নালীর স্বজনদের।

শনিবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ঘরের আড়ার সাথে ফাঁস লাগানো লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে ময়না তদন্তের জন্য সুরাতহাল রিপোর্ট তৈরী করেছে মোংলা থানা পুলিশ। এ ঘটনায় স্বামী মহসিনকে আটক করা হয়েছে তবে বিয়ে ও কিশোরীর গলায় ফাঁস লাগানো ঘটনা নিয়ে পরিবারসহ এলাকাবাসীর ভিন্ন ভিন্ন মত থাকায় আরো অধিকতর তদন্ত ও আসল ঘটনা উদঘাটনের জন্য রাতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানায় পুলিশ।


বর্নালীর জমজ বোন বাবলী (২০) ও বড় বোন সুইটি (২৩) বলেন, মহসিনের আগের বউ আছে। তারপরও ৪ মাস আগে আমাদের বোনকে জোর পুর্বক ভয়ভীতি দেখিয়ে বিয়ে করে মহসিন। মহসিন আমাদের বোন বর্নালীকে নিয়ে পৌর শহরের সাত্তার লেনে ভাড়া বাড়ীতে থাকতো। আর প্রায়ই বর্নালীকে মারধর করতো মহসিন। কিছুদিন আগেও মহসিন আমাদের বোন বর্নালীকে মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দেয়। সম্প্রতি বর্নালী ও মহসিনের একসাথের ছবি ফেসবুকে পোষ্ট করে বর্নালী। এ নিয়ে মহসিনের আগের স্ত্রীর সাথে মহসিনের ঝগড়া হয়। সেই রাগে মহসিন শনিবার আমাদের বোন বর্নালীর সাথে প্রথম ঝগড়া হয়, পরে মেরে ঘরের দরজা আটকে চলে যান। তবে এ ঘটনার জন্য মহসিনই পুরোপুরি দায়ী, আমরা এর সঠিক বিচার চাই বলে জানায় দুই বোন।

এদিকে এ ঘটনার খবর পেয়ে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোংলা সার্কেল মোঃ আসিফ ইকবাল ও মোংলা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং মহসিনকে প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেন। তবে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বর্নালীকে বিয়ে করার কোন বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি মহসিন। বর্নালীর লাশের আঘাতের কোন চিহ্ন না থাকায় ঘটনাস্থল থেকে প্রথম পর্যায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে পুলিশ মহসিনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এরপর শনিবার সন্ধ্যায় বর্নালীর লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। লাশের ময়না তদন্তের জন্য রবিবার সকালে বাগেরহাট সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে বলেও জানিয়েছেন ওসি মনিরুল ইসলাম।


স্বামী মহসিনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর রবিবার সকালে বাগেরহাট আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হবে তাকে। প্রাথমিকভাবে লাশের শরীরের কোথাও কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। কিন্তু আত্মহত্যার প্ররোচনাকারী স্বামী মহসিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারপরও বিয়ে ও আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে পরিবারসহ এলাকাবাসীর ভিন্ন ভিন্ন মত থাকায় আরো অধিকতর তদন্ত শেষে পরর্বতীতে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আসিফ ইকবাল।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত