চরম বিদ্যুৎ বৈষম্যের শিকার 

শরণখোলা-মোরেলগঞ্জে ২৪ ঘন্টায় লোডশেডিং ১৬ থেকে ১৭ ঘন্টা

মহিদুল ইসলাম,শরণখোলা

আপডেট : ০৯:১১ পিএম, শনিবার, ৬ আগস্ট ২০২২ | ৫৯৫

প্রতিকী ছবি

পল্লী বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছে বাগেরহাটের শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জবাসী। দিনে ৪ থেকে ৫ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকলেও রাতে থাকে অতিরিক্ত দুই ঘন্টা। গড়ে ২৪ ঘন্টায় লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে ১৬ থেকে ১৭ ঘন্টা। ফলে একদিকে বিদ্যুৎ না থাকা অন্যদিকে তীব্র তাপদাহে দুর্ভোগ নেমে এসেছে জনজীবনে।


অপরদিকে, বর্তমানে ভরা মৌসুম চলছে ইলিশ আহরণের। বিদ্যুতের ওপর নির্ভর করেই চলে ইলিশ আহরণ। কারণ বরফ না হলে মাছ আহরণের পর তার সংরক্ষণ করা মোটেই সম্ভব না। বিদ্যুৎ সংকটে বরফ কলগুলোতে উৎপাদন প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ইতোমধ্যে বরফ না পেয়ে অনেক জেলের লাখ লাখ টাকার ইলিশ মাছ নষ্ট হয়েছে। পর্যাপ্ত বরফ সরবরাহ না থাকায় ভরা মৌসুমেও শত শত ফিশিং ট্রলার এখনো সাগরে যেতে পারেনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার ৯টি উপজেলায় গড় হিসাবে দিন-রাত মিলিয়ে বাগেরহাট সদরে দুই ঘন্টা, মোংলায় এক ঘন্টা, রামপালে দুই ঘন্টা, ফকিরহাটে তিন ঘন্টা, মোল্লাহাটে তিন ঘন্টা, চিতলমারিতে দুই ঘন্টা, কচুয়ায় তিন ঘন্টা লোডশেডিং দেওয়া হয়। কিন্তু শরণখোলা ও মোরেলগজ্ঞ উপজেলায় লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে গড়ে ১৭ ঘন্টা। লোডশেডিংয়ের এমন বৈষম্যে দিন দিন ক্ষোভ বাড়ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বিদ্যুতের লোডশেডিং দেওয়ার দাবি জানান তারা।

শরণখোলার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শেখ মোহাাম্মদ আলী বলেন, জ্বালানী সাশ্রয়ে সরকারের দেওয়া সিদ্ধান্তকে আমরা শ্রদ্ধা জানাই। তবে বৈষম্যমূলক লোডশেডিংয়ে সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগের মধ্যেই সরকারবিরোধী চক্র রয়েছে।

মোরেলগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি মেহেদী হাসান লিপন বলেন, জাতীয় গ্রীডের অজুহাত দিয়ে আমাদের এই দুই উপজেলায় সিডিউলের চেয়ে অতিরিক্ত লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে।

শরণখোলা উপজেলা সদর রায়েন্দা বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান বাবুল বলেন, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী রাত ৮টার মধ্যে বাজারে সমস্ত দোকানপাট বন্ধ করা হয়। কিন্তু এরপর সারারাত বিদ্যুৎ থাকেনা বললেই চলে। এতে ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নিয়ম মাফিক লোডশেডিং দেওয়ার দাবি জানাই।

মেসার্স মেঘা বরফ কলের মালিক মো. গোলাম মোস্তফা তালুকদার বলেন, দিনে কিছুটা বরফ জমা হলেও রাতে বিদ্যুৎ না থাকায় তা আবার গলে যায়।

শরণখোলা মৎস্য আড়ৎদার সমিতির সভাপতি আ. রহিম হাওলাদার বলেন, বরফের অভাবে লাখ লাখ টাকার মাছ নষ্ট হচ্ছে। মৌসুম চলে যাচ্ছে, অথচ শত শত ট্রলার সাগরে যেতে পারছে না।

শরণখোলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন শান্ত বলেন, এতো বেশী লোডশেডিং দেশের অন্য কোথাও দেওয়া হচ্ছে বলে আমার মনে হয় না। বিষয়টি জেলা সমন্বয় কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হবে। এভাবে লোডশেডিং দেওয়া হলে সরকারের এতো উন্নয়ন ম্লান হয়ে যাবে।

এ ব্যাপারে পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির শরণখোলা সাব-জোনাল অফিসের সহকারি জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) মো. আশিক মাহামুদ সুমন বলেন, আমাদের এখানে দিনে ৭ মেগাওয়াট এবং রাতে ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু বাগেরহাট গ্রীড থেকে দেওয়া হচ্ছে তিন থেকে চার মেগাওয়াট। সেই হিসাবে লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত