ফকিরহাটে লবন পানি ঢুকে বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্থ ; স্রোত নিয়ন্ত্রণের জলকপাট সংস্কারহীন

পি কে অলোক, ফকিরহাট

আপডেট : ০৯:১৪ পিএম, বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল ২০২২ | ৫৯৫

ফকিরহাটে জলস্রোত নিয়ন্ত্রণের জলকপাট সংস্কারহীন থাকায় লবন পানি ঢুকে বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। জরুরীভাবে এগুলো মেরামতের দাবী করেছেন ক্ষতিগ্রস্থরা।

জানা গেছে, ফকিরহাটের লখপুর ইউনিয়নের খাজুরা ৬ গেট ও ভবনা’র খড়িবুনিয়ার ২ গেটের অধিকাংশ পাট (দরজা) দীর্ঘদিনেও সংস্কার করা হয়নি। ফলে গেটগুলির দরজার স্থান ফাঁকা থাকায় পূর্ণিমার জোয়ারে লবন পানি উঠে ফকিরহাট সহ আশেপাশের অন্তত ১০টি বিলের রোপা বোরো ধানের ফসল পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। এতে শতশত একর জমির বোরো ধান নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। স্থানীয় ধান ও মৎস্য চাষিরা গেটগুলি মেরামত করার জোর দাবী জানিয়ে বলেন, তাড়াতাড়ি গেটগুলি মেরামত করা না হলে কৃষককুল চরম ক্ষতির সম্মুখিন হবেন।

জানা গেছে, রূপসার ভৈরব নদী হতে একটি ছোট্ট খাল খাজুরা ৬ গেটের উপর দিয়ে মিনেদার বিল, খড়িবুনিয়া বিল, মাসকাটা বিল, চাকুলী বিল, শ্যামগঞ্জ বিল, ঝিনাইখালী বিল, কুমারখালী বিল ও বিঘা বিলের মধ্যদিয়ে একদিকে শ্যামবাগাত অন্যদিকে বাইনতলা গৌরম্বা এলাকায় গিয়ে মিশেছে। একটি খাল উঠে ভাগে ভাগে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে মিশেছে। কিন্তু নদী-খালের প্রবেশ মুখে পানি উন্নয়ন র্বোড খাজুরা ৬ গেট নামক স্থানে একটি গেট নির্মাণ করার পর গেট ও তার পাট গুলি ভাল থাকলেও পানির চাপে তা ভেঙ্গে যায়।

এরপর পানি উন্নয়ন বোর্ড পাটগুলি মেরামত করলেও পরে আর কোন খোঁজ নেয়নি। ফলে গেটের অধিকাংশ স্থানে ফাঁকা হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় জোয়ারের পানি উঠলে তা সরাসরি কৃষকের জমিতে পৌঁছে যাচ্ছে।


লখপুর ইউনিয়নের জাড়িয়া মাইট কুমরা গ্রামের কৃষক ও মৎস্য চাষি মোঃ রফিকুল ইসলাম, মুজাহিদ শেখ, আব্দুর রশিদ, মুকাররাম শেখ, খোকন শেখ ও সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ জালাল উদ্দিন শেখ জানান, চলতি পূর্ণিমার গোনে জোয়ারের লবন পানি উঠতে শুরু করে। এ অবস্থায় ক্ষেতের উঠতি ধান বাঁচানোর জন্য দিনে ও রাতে স্যালোমেশিন বসিয়ে তা দিয়ে পানি সেচ দিচ্ছেন। কিন্তু জোয়ারের লবন পানি একবার ধানের ক্ষেতে প্রবেশ করলে ধান বাচানো যায় না। লবন পানিতে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

গোলাম রসুল, আলমগীর হোসেন, মহব্বত আলী, আহম্মদ শেখ, হাসান আলী ও রাজু মল্লিকসহ একাধিক চাষি বলেন, ৪/৫ দিন আগে হতে তাদের ধানের ক্ষেতে জোয়ারের লবন পানি উঠতে শুরু করেছে। লবন পানিতে তাদের উঠতি ফসল নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ আলতাপ হোসেন বলেন, খাজুরা ৬ গেট ও ভবনার খড়িবুনিয়ার ২ গেট ও তার পাটগুলি মেরামত করার জন্য আমি সহ এলাকাবাসী স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে বারবার অবহিত করেছি। কিন্তু তিনি সে বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।

৯নং ওয়ার্ড সদস্য মোঃ শাহীন ফারাজী বলেন, জোয়ারের লবন পানি জোয়ারের সময় প্রবল বেগে উপরের দিকে ধেয়ে আসছে। পানির চাপে বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। জোয়ারের লবন পানি উঠা বন্ধ করতে হলে ২টি গেটের পাট মজবুত করে নির্মাণ করতে হবে। তা না হলে জোয়ারের লবন পানি ওঠা বন্ধ করা যাবে না।

লখপুর ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অভিজিৎ গাউন ও সুমন বাকচি বলেন, আমরা বেশ কয়েকটি বিলে সরেজমিনে দেখেছি - লবন পানি উঠা বন্ধ করতে না পারলে কৃষকরা ব্যপক ক্ষতির সম্মুখিন হবেন।


এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষ্ণা সরকার বলেন, আমি খবর পেয়ে আমার উপ-সহকারীদের ঘটনা স্থলে পাঠিয়েছি। তারা বিষয়টি দেখছে এবং কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করছেন।

লখপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম,ডি সেলিম রেজা বলেন, আমি ছয় গেটের পাট মেরামতের বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেছি। তাঁরা বলেছেন, ৬ গেট পূনঃ নির্মানের জন্য একটি টেন্ডার হয়েছে। ঠিকাদার অচিরেই কাজ শুরু করবেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত