মোংলায় দুই চেয়ারম্যান সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে দুইটি মামলা: আসামী অর্ধশত

মোংলা প্রতিনিধি

আপডেট : ০৬:২২ পিএম, সোমবার, ১৯ এপ্রিল ২০২১ | ৮৬৪

ফাইল ফটো

সুন্দরবন ইউনিয়নের দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় মোংলা থানায় পৃথক দুইটি মামলা দায়ের হয়েছে। রোববার রাতে দ্বিগরাজ বাজার এলাকার অর্ধশত লোককে আসামী করে এ মামলা দায়ের করা হয়। বাঁশতলা দ্বিগরাজ বাজারে ১৬ এপ্রিল রাতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এক সংঘর্ষে আওয়ামীলীগের মনোনিত প্রার্থীর ১৩ জন সমর্থককে মেরে রক্তাক্ত জখম করে প্রতিপক্ষ চেয়ারম্যান প্রুপের লোকজন।

এব্যাপারে থানায় মামলা দায়েরের পর থেকে আসামী গ্রেফতারে অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। এ নিয়ে পুরো এলাকা জুড়ে সাধারন মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। তার পরেও এলাকার বিভিন্ন জায়গায় চলছে হামলা, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও অগ্নি সংযোগ।


মামলা এজারহার সুত্রে ও বাদী আবু সাইদ শেখ জানায়, গত ১৬ এপ্রিল বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে আমি, আমার ভাই আল মামুন শেখ, আল আমীন শেখ ও পিতা আবুল বাশার শেখ বাড়ি থেকে বের হই। দিগরাজ বাজারে যাওয়ার পথে ফকির বাড়ির সামনে আসা মাত্র মঈন উদ্দিন শেখ ও ফরিদ শেখ’র নেতৃত্বে কয়েকজন সন্ত্রাসী পূর্ব শত্রুতার জের ধরে পরিকল্পিতভাবে আমাদের উপর হামলা চালায়। এসময় তাদের এহেন কর্মকান্ডে প্রতিবাদ করলে সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আমাদের কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে চলে যায়। পরে স্থানীয়রা আমাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।

এঘটনায় মঈন উদ্দিন শেখ (৫৫), ফরিদ শেখ (৪৫), শুকুর শেখ (৪২), তাবরিজ শেখ (২৩), নাঈম শেখ (২০), আলতাফ হাওলাদার (৫০), ইব্রাহিম শেখ (৪৩), রুমি হাওলাদার (৩২), বাহারুল হাওলাদার (৪০), নুর ইসলাম শেখ (৪৮), তরিক শেখ (২৫), মহিদুল শেখ (৪২), ফারুক ঢালী (৩০)সহ আরো ১০/১২ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা করা হয়েছে।


অন্য মামলার দাবী আঃ মান্নান শিকারী জানায়, আবু সাইদের মারধরে ঘটনার ঘন্টা খানের পর এ সকল সন্ত্রাসীরা দ্রুত বাজারে গেলে আমি শুকুর শেখ এর মাছের ডিপুর সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ওই সকল সন্ত্রাসীরা আমার উপরও হামলা চালায়। এসময় তাদের মারধরে আমি অচেতন হয়ে পড়লে আমার মৃত্যুভেবে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে চলে যায়। পরে বাজারে থাকা অন্য ব্যাবসায়ীরা আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।

এঘটনায় মঈন উদ্দিন শেখ (৫৫), ফরিদ শেখ (৪৫), রুমি হাওলাদার (৩২), আলতাফ হাওলাদার (৫০), নুর ইসলাম শেখ (৪৮), ফরিদ শেখ (৫২), নেছার শেখ (৫০), তরিক ঢালী (৩৫), বাহারুল হাওলাদার (৪০), শুকুর শেখ (৪২), নাঈম শেখ (২০), তাবরিজ শেখ (২৩), মিলন ফকির (৪২), গোলাম শেখ (৩২) ও কমিরুল হাওলাদার (৩২)সহ আরো অজ্ঞাত নামা বেশ কয়েকজনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এদের সকলের বাড়ী দ্বিগরাজ ও কাটাখালীর বিভিন্ন এলাকায়।

এঘটনার সুত্র ধরে এদিন রাতে বাঁশতলা বাজারে দুই গ্রুপের লোকজনের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এছাড়া ১৭ এপ্রিল রাতে বাজারের দক্ষিন দিকে পাখিমারা ব্রিজের পুর্বপাশে কবির চেয়ারম্যানের এ সমর্থকের বাড়ীতে অগ্নি সংযোগ করে এক দল দুর্বৃত্তরা। এসময় বাড়ীর মালিক আগুন দেখে চিৎকার দিলে এলাকাবাসী এসে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে। এতে প্রায় কয়েক লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানায় বাড়ী মালিক নাহিদ খান।

সুন্দরবন ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান শেখ কবির উদ্দিন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, দীর্ঘ ১২টি বছর উপজেলার সুন্দরবন ইউনিয়নের মানুষ শান্তি শৃংঙ্খলাভাবে বসবাস করে আসছিল। আসন্ন ইউপি নির্বাচন নিয়ে প্রতিপক্ষের কারনে প্রতিনিয়ত সংঘাত লেগেই চলছে পুরো ইউনিয়ন জুড়ে। আমরা সকলেই আওয়ামীলীগের দল করে আসছি এবং এ দলকে মনেপ্রানে পছন্দ করি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে ইউপি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছে আমরা তা মাথা পেতে মেনে নিয়েছি। কিন্ত একটি পক্ষ মনোনয়ন পেয়ে সাধারন নিরিহ মানুষের উপর জুলুম অত্যাচার চালাচ্ছে। পাশাপাশি আমাকেও জড়িয়ে বিভিন্ন হয়রানী মুলক কর্মকান্ড চলছে এ ইউনিয়নে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

সৃন্দরবন ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের মনোনিত নৌকা প্রতিকের (বিনা প্রতিদন্ধীতায় নির্বাচিত) চেয়ারম্যান মোঃ ইকরাম ইজারাদার বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, দীর্ঘদিন যাবত এ ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান শেখ কবির উদ্দিন নৌকা প্রতিক না পেয়ে মানুষের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে তার বাহিনীর লোকজন দিয়ে অসহায় মানুষের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে। আমি কেন মনোনয়ন পেলাম তা নিয়ে পুর্ব থেকেই আমাদের লোকজন ও সমর্থকদের উপর কারনে-অকারনে সমস্যা সৃষ্টি করে আসছিল। গত শুক্রবার রাতে তুচ্ছ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমাদের লোকজনের উপর পুর্ব পরিকল্পিত ভাবে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এতে আমাদের কমবেশী ১৩ জন আহত হয়েছে। তাদের এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্ের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এব্যাপারে এর প্রতিকার চেয়ে নির্যানতের শিকার সাধারন জনগন থানায় মামলা দায়ের করেছে বলে জানায় নৌকা প্রতিকের বিনা প্রতিদ্বন্ধীতায় নির্বাচিত চেয়ারম্যান মোঃ একরাম ইজারাদার।

মোংলা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ইকবাল বাহার চৌধুরী বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, সুন্দরবন ইউনিয়নের মারামারীর ব্যাপারে গতরাতে পৃথক দুইটি মামলা দায়ের হয়েছে। এছাড়া সংঘাত ও সহিংসতা এড়াতে দ্বিগরাজ বাজার এলাকায় পুলিশের প্রতিনিয়ত অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এলাকায় বিশৃংঙ্খলাকারীদের প্রতিহত করতে পুলিশ সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে এবং এ মামলার আসামীদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে বলেও জানায় পুলিশের এ কর্মকর্তা।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত