বেতাগায় নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে ব্যাগিংপদ্ধতিতে

ফকিরহাটে বেগুন চাষ এখন বেশ জনপ্রিয়

পি কে অলোক.ফকিরহাট

আপডেট : ০৮:০০ পিএম, রোববার, ৮ নভেম্বর ২০২০ | ৯৪৯

ফকিরহাটের বেতাগায় নিরাপদ সবজি উৎপাদনে ব্যাগিং পদ্ধতিতে বেগুন চাষ এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কৃষি অফিসের হাতে কলমে প্রশিক্ষন আর নানা প্রকার তদারকির কারনে এলাকার কৃষকরা এ পন্থা অবলম্বল করেছেন। যে করনে ব্যাগিং পদ্ধতিতে বেগুন চাষ এ অঞ্চলে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। জানা গেছে, কৃষি নির্ভর এই দেশে খাদ্যে সয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করলেও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করনে এ অঞ্চলে তেমন কোন ব্যাবস্থা গড়ে উঠছে না। সে বিষয়টি অনুধাবন করে প্রথম পর্যায়ে একজন কৃষক তাঁর জমিতে পরীক্ষা মূলক ভাবে ব্যগিং পদ্ধতিতে বেগুনের চাষাবাদ শুরু করেন। তার দেখা দেখী চলতি বছর প্রায় ২০জনের অধিক কৃষক তাদের নিজেদের জমিতে ব্যাগিং পদ্ধতিতে বেগুন চাষ করেন। নিরাপদ সবজি উৎপাদন ও বাজারজাত করণে বেশ কয়েকজন কৃষক বেগুন চাষে সফলতা আনতে সক্ষম হয়।


স্থানীয় কৃষকরা বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানিয়েছেন, উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তাদেরকে ২০১৮সালে উপজেলার প্রান্তিক কৃষকদের ব্যাগিং পদ্ধতিতে বেগুন চাষের উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। আর সেই থেকে তারা উপজেলার বেতাগায় প্রথম পরীক্ষা মূলক ভাবে এই পদ্ধতিতে বেগুনের চাষ করা শুরু করেন। ব্যাগিং পদ্ধতির বেগুন চাষে কোন প্রকার কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। যার কারণে স্থানীয় বাজারে এই বেগুনের চাহিদাও অনেক বেশি। কৃষকদের মতে এ অঞ্চলে বর্তমানে প্রায় ২০জন চাষী ৩৪,৫০০ চারায় এই পদ্ধতিতে বেগুনের চাষ করছেন। ব্যাগিং পদ্ধতিতে বেগুন চাষ এ অঞ্চলে একেবারেই নতুন একটি পদ্ধতি। যা অন্য কোন স্থানে হচ্ছে বলে তাদের জানা নেই। এর আগে চাঁপাই নবাবগঞ্জের ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম চাষ হচ্ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় রোগবালাই ও পোকার সংক্রমণ থেকে বেগুন রক্ষায় শুরু হয়েছে ব্যাগিং পদ্ধতিতে বেগুন চাষ। এই পদ্ধতির চাষে কোন ধরণের বালাই নাশকের ব্যবহার ছাড়াই ভালমানের বেগুন উৎপাদন করা সম্ভব। এই প্রযুক্তিতে বালাইনাশক স্প্রে করার প্রয়োজনও হয় না। ফলে স্প্রে করার খরচ বেঁচে যায়। কীটনাশক ব্যবহারের পরিবর্তে বেগুনে পলিব্যাগ ব্যবহার করা হয়। আর এই ব্যাগ যত্ন সহকারে ব্যবহার করলে ৫বছর ব্যবহার করা যাবে। তবে যদি কোন পলিব্যাগ ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে যায় তবে তা একত্রিত করে গর্তে ফেলে আগুন ধরিয়ে মাটি দিয়ে বুজিয়ে ফেলানো হয়। যার ফলে পরিবেশেরও কোন ক্ষতি হয় না। এই পদ্ধতিতে বেগুন উৎপাদনে একদিকে যেমন ক্ষতিকারক কীটনাশকের ব্যবহার বন্ধ হচ্ছে, সেই সঙ্গে মানুষ পাচ্ছে নিরাপদ ও বিষমুক্ত সবজি।


দেশে যত সবজি উৎপাদন হয় তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কীটনাশক প্রয়োগ করা হয় বেগুন চাষে। যার ফলে শতকরা ২৫থেকে ৩০ভাগ বেগুন নষ্ট হয় পোকার আক্রমণে। বেতাগা ইউনিয়নের ধনপোতা গ্রামের চাষী সরজিৎ কুমার পাল বলেন, ২০১৮সালে উপজেলা কৃষি অফিসের একটা প্রশিক্ষণে যোগ দেন তিনি। যেখানে বেগুনের উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদ সম্পর্কে জানতে পারি। তখন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় আমি ব্যাগিং পদ্ধতিতে বেগুন চাষ শুরু করি। তাতে আমি ভাবতেও পারিনি এই পদ্ধতির চাষে প্রথম হিসাবে এতটা স্বাবলম্বী হতে পারবো। এর আগে আমি নরমাল পদ্ধতিতে বেগুন চাষ করতাম তাতে প্রতি মণে পোকা-মাকড়ে নষ্ট বেগুন হত প্রায় ৮-৯ কেজি। আর এই পদ্ধতির চাষে প্রতি মণে বেগুন পোকা-মাকড়ে নষ্ট হচ্ছে মাত্র ২-৩ কেজি। কৃষক সরজিৎ কুমার পালের সাফল্য দেখে উদ্ভুদ্ধ হওয়া কৃষক শংকর কুমার দাশ, রিপন কুমার পাল, সুবল ও আনন্দ কুমার বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, প্রথমে ভেবেছি এই পদ্ধতির চাষে লাভ হয় কিনা? এমন দ্বিধার কারণে সাহস পায়নি। তবে সরজিৎ পালের সাফল্য দেখে আমরাও উদ্ভুদ্ধ হয়ে এই পদ্ধতিতে বেগুন চাষ শুরু করি। আর এই পদ্ধতির চাষে ব্যাপক ফলন যেমন হয়েছে, তেমন পূর্বের তুলনায় বহুগুন কমেছে বেগুন নষ্টের পরিমাণ।


এব্যাপারে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার তন্ময় কুমার দত্তের সাথে আলাপ করা হলে তিনি বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, আমরা কৃষকদের এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান করি। তারই ধারাবাহিকতায় উপজেলার বেতাগা ইউনিয়নের মাসকাটা বিলে পরিক্ষা মূলক ভাবে এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু হয়। আর এই পদ্ধতির চাষে কৃষকরাও বেশ স্বাবলম্বী হয়েছেন।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ নাছরুল মিল্লাত এর সাথে আলাপ করা হলে বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে তিনি বলেন, বেগুনের প্রধান শক্র ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা দমনের জন্য কৃষকরা মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ করে থাকেন। যা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর। শুধু তাই নয়, এতে বেগুনের উৎপাদন খরচও বেড়ে যায়। মানবদেহে সহনীয় মাত্রার চেয়ে ১৪গুণ বেশি কুইনালফস বেগুনে পাওয়া গেছে। এই সমস্যাটি সমাধানে ব্যাগিং প্রযুক্তি প্রয়োগ করে রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে বেগুনকে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। আর ব্যাগ ব্যবহারের ফলে যে কোনো পাখি, ইঁদুর ও প্রতিকূল আবহাওয়া থেকেও বেগুন রক্ষা পাবে। ব্যাগের ব্যবহার শেষ হলে ব্যাগগুলো একসঙ্গে পুুড়িয়ে ফেলতে হয়। ব্যাগিং পদ্ধতিতে তুলনা মুলক ভাবে নিরাপদ ও বিষমুক্ত বেগুন উৎপাদন করা সম্ভব। যে কেউ চাইলে অন্যান্য ফল-ফসলে ব্যবহার করতে পারবেন। আমরা পরিক্ষা মূলক ভাবে সফলতা পেয়েছি এই পদ্ধতির বেগুন চাষে।


এব্যাপারে খুলনা বিভাগের শ্রেষ্ট ও ফকিরহাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান স্বপন দাশ এর সাথে আলাপ করা হলে তিনি বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন আমরা খাদ্যে সয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারলেও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করণে তেমন একটা সফলতা অর্জন করতে পারিনী। তাই আমরা এলাকার কৃষকদেরকে আইপিএম আইসিএম ক্লাবের মাধ্যমে তাদেরকে সুসংগঠিত করে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করনে ব্যাপক সহযোগীতা প্রদান করেছি। যাহার ফলে তাঁরা এখন নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে ব্যাগিং পদ্ধতি ও অর্গানিক পদ্ধতি ব্যাবহার করছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত