শীত মৌসুমে বিশ্বঐতিহ্য  ষাটগম্বুজে পর্যটকদের ভিড়

আলী আকবর টুটুল

আপডেট : ১২:২১ এএম, বুধবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭ | ১৪২৩

শীত মৌসুমে বিশ্বঐতিহ্য বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদে দেশি-বিদেশী পর্যটকদের ভিড়। প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখোরিত হচ্ছে মসজিদ এলাকা। পর্যটকদের সমাগম বাড়ায় তাদেরকে বেশি আনন্দ দিতে কর্তৃপক্ষ মসজিদ প্রাঙ্গনে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলগাছ রোপন করে শোভা বৃদ্ধি করেছে। রাতে মসজিদের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্য মসজিদ, জাদুঘরসহ আশপাশে স্থাপনাগুলোতে আলোক সজ্জার ব্যবস্থা করা হয়। মসজিদের বাইরের গেটের সামনে দর্শনার্থীদের জন্য গাড়ি পার্কিং ও বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভিতরেও তৈরি করা হয়েছে বসার স্থান। ষাটগম্বুজ মসজিদের সামনে ঘোড়াদিঘির পানিতে ফোটা পদ্ম ফুল আরও আকর্ষনীয় করে তুলেছে জায়গাটিকে। দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে দিঘির পাশে তৈরি করা হয়েছে পর্যটক শেড। পাশেই বিভিন্ন সামগ্রীর পসড়া সাজিয়ে বসেছে দোকানীরা। শীত মৌসুমে বেচাকেনা ভালোই হয় তাদের।

এছাড়াও মসজিদের মূল গেট থেকে ঢুকেই ডান পাশে রয়েছে বাগেরহাট জাদুঘর। আর জাদুঘরে এ অঞ্চলের আধ্মাতিক পীর খানজাহান আলী (রহঃ) এর ঠাকুর দিঘিতে পোষা মৃত কালো ও ধলা পাহাড়ের (কুমির) দেহাবশেষ মমি করে রাখা আছে। আরও রয়েছে খানজাহানের ব্যবহৃত নানা নিদর্শন। আছে পোড়া মাটির বিভিন্ন ধরণের তৈজসপত্র। যা আগত পর্যটকদের খান জাহান সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে।

মঙ্গলবার বিকেলে ষাটগম্বুজ মসজিদের প্রধান ফটকে টিকিট কাউন্টারে পর্যটকদের লম্বা লাইন দেখা যায়। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত দর্শনার্থীরা টিকিটের জন্য দীর্ঘক্ষন অপেক্ষা করছে।

টিকিট কাউন্টারে থাকা বুকিং ক্লার্ক খান আবু তালেব বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নির্ধারিত মূল্যে আমরা টিকিট বিক্রি করি। দেশি পর্যটক প্রতি ২০ টাকা, সার্কভুক্ত দেশের বিদেশী পর্যটকদের কাছ থেকে ১ শ টাকা, সার্কভুক্ত দেশের বাইরে বিদেশী পর্যটকদের কাছ থেকে ২শ টাকা নেয়া হয়। এছাড়া স্কুল শিক্ষার্থী এবং ৫ বছরের শিশুদের কাছ থেকে ৫ টাকা নেয়া হয়। শীত মৌসুমের শুরু থেকে দর্শনার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত পর্যটকদের ভিড় থাকবে। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৬০ থেকে ৭৫ হাজার টাকার টিকিট বিক্রি হচ্ছে। টাকার পরিমান আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।

ষাটগম্বুজ মসজিদের পশ্চিমপাশে ঐতিহ্যবাহি ঘোড়া দীঘির পাড় জুড়ে পর্যটকদের বিশ্রামের জন্য তৈরী করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন বসারস্থান। মসজিদে আগত দর্শনার্থীরা এখানে বসে ষাটগম্বুজ মসজিদ ও আশপাশের এলাকা দেখতে পারেন।

বগুড়ার সাতরাস্তার মোড় থেকে আগত সংস্কৃতি কর্মী সিক্তা কাজল বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, স্কুলে পড়া অবস্থায়ই ষাটগম্বুজ মসজিদ দেখার প্রতি আমার আগ্রহ জন্মে। তাই বন্ধু বান্ধব মিলে চলে আসলাম। আসলে এখানে এসে আমি খুবই আনন্দিত। ষাটগম্বুজ মসজিদ ও মসজিদের সামনের ঘোড়া দিঘি দেখে আমি অভিভূত হয়েছি।

টাঙ্গাইল থেকে আসা রহিম উদ্দিন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, মুসলিম স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন ষাটগম্বুজ মসজিদ। আসলে ষাটগম্বুজ মসজিদ না দেখলে বোঝাই যায় না যে মুসলিম স্থাপত্যবিদরা কত দক্ষ ছিলেন। সত্যিই আমি অনেক বেশি আনন্দিত। আমার গর্ব হয় মুসলিম স্থাপত্য নিয়ে।

স্ব-পরিবারে বেড়াতে আসা কুষ্টিয়ার শিক্ষক কাঞ্চন কুমার বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, বিশ্বঐতিহ্যবাহি এ মসজিদটিকে এক নজর দেখার খুব ইচ্ছা ছিল। কর্ম ব্যবস্তার কারনে আসতে পারিনি। তাই এবার পরিবারের সকলকে নিয়ে চলে আসলাম। আমার স্ত্রী-সন্তানেরা খুবই খুশি হয়েছে এখানে এসে।

ফরিদপুরের সংস্কৃতি কর্মী আশিক নুর বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, ষাটগম্বুজ মসজিদ দেখে আমার খুব ভাল লেগেছে। এ মসজিদ বাংলাদেশকে বিশ^বাসীর কাছে পরিচিত করেছে।

বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজের শিক্ষার্থী মৌমিতা সুলতানা মীম বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, ষাটগম্বুজ মসজিদ বাগেরহাট বাসির গর্ব। এ মসজিদ নিয়ে আমি গর্ব করি। এ মসজিদটি দেখতে প্রায়ই আসি। যতবার আসি তত ভাল লাগে। প্রতিবারই মনে হয় নতুন করে আসছি।

মসজিদ প্রঙ্গনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য এমএ বারেক বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, আমরা সার্বক্ষনিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছি। শীত মৌসুমে দেশি-বিদেশী পর্যটক বৃদ্ধি পায়। আমাদের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরাও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন।

বাগেরহাট জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান মো. গোলাম ফেরদৌস বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, শীত মৌসুসে ষাটগম্বুজ মসজিদে দেশি-বিদেশী পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। দিনদিন পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।

ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এ কারনে আগত দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মান করেছি। পাশাপাশি দর্শনার্থীদের কাছে মসজিদকে আরো আকর্ষনীয় করতে ঘোড়া দীঘির দু’পাড়ে পর্যটক শেড ও বসার জন্য কনক্রিটের বেঞ্চ তৈরি করেছি। এছাড়াও বিভিন্ন স্থাপনা নির্মানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মসজিদের পাশে দর্শনার্থীদের জন্য গণ সৌচাগারের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে জনবল সংকট থাকায় পর্যটকদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয়। তারপরও আশা করছি, এ মৌসুমে গত বছরের থেকে বেশি রাজস্ব আয় হবে বলে জানান তিনি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত