বুদ্ধিমত্তায় ৯৯৯ এ ফোন

১৮ঘন্টা পর বেঁচে ফিরল গহীন সুন্দরবনে হারিয়ে যাওয়া ৬ কিশোর

মহিদুল ইসলাম, শরণখোলা

আপডেট : ০৪:৫৯ পিএম, বৃহস্পতিবার, ২৮ মে ২০২০ | ৮১৬

সুন্দরবনে ঘুরতে গিয়েছিল ছয় কিশোর। বুধবার সকাল ১০টার দিকে রওনা হয়ে হাটতে হাটতে গহীন বনে পথ হারিয়ে ফেলে তারা। সন্ধ্যা নেমে আসতেই প্রবল বেগে বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। তখন হিংস্র বাঘের কথা মনে পড়ে তাদের। ভয়ে যবুথবু ওই ছয় কিশোর প্রাণে বাঁচতে গাছের ডালে বসে ভিজতে থাকে। ক্ষুদায় কাতর হয়ে পড়ে তারা। এসময় তাদের মধ্যে এক কিশোরের বুদ্ধিমত্তায় ৯৯৯ এ ফোন করার প্রায় ১৮ঘন্টা পর বৃহস্পতিবার ভোর ৪টার দিকে পুলিশ উদ্ধার করে।

বনে পথভোলা ওই ছয় কিশোরের বাড়ি বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার দক্ষিণ আমড়াগাছিয়া গ্রামে। ছয় বন্ধু মিলে সুন্দরবন দেখার জন্য পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশন থেকে বনবিভাগের অজান্তে তারা বনে প্রবেশ করে।

উদ্ধার হওয়া কিশোররা হল, দক্ষিণ আমড়াগাছিয়া গ্রামের ইসাহাক খলিফার ছেলে জয় খলিফা (১৬), ফারুক খলিফার ছেলে সাইমুন (১৬), শহিদুল খলিফার ছেলে জুবায়ের (১৭) ও মাইনুল ইসলাম (২১), জাহাঙ্গীর তালুকদারের ছেলে আ. রহিম (১৭) ও রায়েন্দা বাজারের জাহাঙ্গীর হাওলাদারের ছেলে ইমরান (১৯)।

পুলিশ জানায়, বুধবার সকাল ১০টায় ওই ছয় কিশোর কৌতুহলবশত উপজেলার রাজাপুর এলাকা থেকে সুন্দরবনে প্রবেশ করে। কিছুক্ষণ পর তারা দিক হারিয়ে বনের গহীনে চলে যায়। পথ খুঁজে না পেয়ে সন্ধ্যা হলে তারা বনের বিভিন্ন গাছে আশ্রয় নেয়। কিশোরদের মধ্যে রায়েন্দা সরকারি পাইলট হাই স্কুলের এসএসসি পরিক্ষার্থী জয় খলিফা বুদ্ধি খাটিয়ে তার মোবাইল থেকে ৯৯৯ এ ফোন করে বনে হারিয়ে যাওয়া এবং উদ্ধারে সহায়তা চায়। এই তথ্য পেয়ে শরণখোলা থানা ও ধানসাগর নৌ-পুলিশ বনরক্ষী ও স্থানীয়দের নিয়ে সুন্দরবনে তল্লাশি চালায়। তারা মাইকিং করে কিশোরদের সন্ধান পাওয়ার চেষ্টা করে। এরপর মোবাইলে যোগাযোগের মাধ্যমে ভোর ৪ টায় সময় তাদের উদ্ধারে সক্ষম হয় পুলিশ। তারা লোকালয় থেকে প্রায় ৫-৬ কিলোমিটার গহীন বনে ঢুকে পড়ছিল বলে পুলিশ জানায়।

বুদ্ধিমত্তায় ছয় বন্ধু মিলে বেঁচে যাওয়া মো. জয় খলিফা বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানায়, তার সামান্য পানি ও চিপস নিয়ে বন দেখতে যায়। কিন্তু তারা পথ ভুলে যাবে তা ভাবতে পারেনি। খাবার-পানি শেষ হলে তারা ক্ষুধায় দুর্বল হয়ে পড়ে। সন্ধ্যা নেমে আসতেই প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হয়। তখন তাদের মধ্যে বাঘ আতঙ্ক দেখা দেয়। সবাই গাছের ডালে আশ্রয় নিয়ে ভিজতে থাকে। এরই মধ্যে তার মনে পড়ে ৯৯৯ এর কথা। তার মোবাইলে ব্যালেন্সও শেষ। কিন্তু সে জানতো ৯৯৯ এর সাহায্য পেতে মোবাইলে ব্যালেন্সের প্রয়োজন হয় না। তখন সে ফোন করে সহযোগীতা চায়।

শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসকে আব্দুল্লাহ আল সাইদ বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, প্রায় ১৮ঘন্টা পর বন থেকে কিশোরদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। সময় মতো উদ্ধার করতে না পারলে বড় ধরণের ক্ষতির আশঙ্কা ছিল। দুপুরে সবাইকে মিষ্টি খাইয়ে তাদের অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত