ভারতে আটকে পড়া বাংলাদেশী লাইটার জাহাজে বন্দরের পথে তিন হাজার নাবিক

করোনা ভাইরাসের ঝুঁকিতে মোংলা বন্দর

 মাসুদ রানা, মোংলা

আপডেট : ০৭:২৭ পিএম, সোমবার, ৬ এপ্রিল ২০২০ | ১৯৫৯

ভারতে দেশব্যাপী লকডাউন থাকা সত্বেও সেখানে আটকাপড়া প্রায় তিন শতাধিক বাংলাদেশী লাইটার জাহাজ মোংলা বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। করোনা ভাইরাসের মধ্যে মাস ব্যাপী সেখানে অবস্থান করার পর দু’দেশের মধ্যস্থতায় ভারতের সীমানা পার হয়ে আংটিহাড়া নৌ-রুট দিয়ে দেশের সীমানায় মোংলা বন্দরের আসতে শুরু করেছে।কাষ্টমস ও ইমিগ্রেশন পুলিশের কাগজপত্র সম্পন্ন করে রোববার রাত থেকে এ পর্যন্ত দু’দফায় ৬২টি লাইটার জাহাজ ভারতের সীমানা অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে বলে বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানিয়েছেন আংটিহারা নৌ চেক পোষ্টে’র ইমিগ্রেশন পুলিশের ইনচার্জ আসাদুজ্জামান।

বিশ্বব্যাপি মরন ঘাতক করোনা ভাইরাসের মধ্যে প্রায় মাস ব্যাপি ভারতে অবস্থান নেয়া লাইটারে থাকা প্রায় তিন হাজার শ্রমিক রয়েছে। তারা করোনা ভাইরাস বহনের আশংঙ্কা করছে প্রশাসন ও স্থানীয় মোংলায় বসবাসকারীরা। এসকল নৌ-শ্রমিকরা মোংলা বাজারে ও অন্যান্য জায়গায় ঘোরাফেড়া করলে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর আশংঙ্কা করছে তারা। তবে বন্দরে অবস্থান নেয়ার আগেই ব্যাবস্থা নেয়াসহ নাবিকদের কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যাবস্থা করবে উপজেলা প্রশাসন। এ নিয়ে আতংঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে মোংলা বন্দরসহ এর আশপাশের স্থানীয়রা।

ভারত-বাংলাদেশ দু’দেশের চুক্তি অনুযায়ী ব্যাবসার পরিধী বাড়াতে এ দেশের কল-কারখানা ও সিমেন্ট ফ্যাক্টরীর কাচাঁমাল নৌ-পথে পরিবহনের জন্য লাইটার দিয়ে বিভিন্ন মালামাল বহন করে আসছিল। দীর্ঘ প্রায় এক মাস পুর্বে থেকেই বাংলাদেশী প্রায় তিন শতাধিক লাইটার জাহাজ ভারত থেকে সিমেন্টের কাচাঁমাল পরিবহনের জন্য সেখানে অবস্থান করছে। কিন্ত বিশ্বব্যাপী মরন ঘাতক করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পরার ফলে দেশ-বিদেশী কিছু ব্যাবসা বানিজ্য আপাতত বন্ধ রাখা হয়। সে কারনেই গত ২৪ মার্চ প্রতিবেশী দু’দেশের মধ্যে পণ্য পরিবহনের লাইটার জাহাজ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এতে দীর্ঘ দিন ধরে চলাচলে নিষেধাজ্ঞার কারণে ভারত অংশে অবস্থানকারী এ সকল লাইটার জাহাজের প্রায় ৩ হাজার বাংলাদেশী নৌযান শ্রমিক লোকালয়ে যাতায়াত করতে না পারায় প্রয়োজনীয় বিশুদ্ধ পানি, খাবার, রসদ, মাস্ক, হ্যান্ড গ্লোভস ও চিকিৎসা সরঞ্জামসহ বিভিন্ন সংকটে চরম ভোগান্তির মধ্যে পরে নৌযান শ্রমিকরা।

দীর্ঘদিন পর হলেও দু’দেশের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিকে ভারতে আটকে থাকা এসব লাইটার জাহাজকে বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হলেও বাংলাদেশ থেকে ভারতে পুনরায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখে দেশটি। বাংলাদেশে ফেরার অনুমতি পাওয়ার পর পরই শনিবার সকাল থেকেই ভারতে আটকে থাকা দেশী লাইটার জাহাজ সমুহ বাংলাদেশের আংটিহারা নৌ চেক পোষ্টে এসে ভিড় করতে থাকে। পরে কাষ্টমস ও ইমেগ্রেশন ছাড় পত্র শেষে এসব লাইটার জাহাজের ষ্টাফদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও দু’দেশের সরকারের নিয়ম মাফিক সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে দেশে প্রবেশের প্রস্তুত নেয় লাইটার শ্রমিকরা। সকল কাগজপত্র সম্পন্ন শেষে রোববার সকাল থেকে লাইটার জাহাজগুলো আংটিহারা দিয়ে মোংলা বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়ার কথা থাকলেও সেদিন প্রবেশ করতে না পাড়ায় সোমবার সকালে দু’দফায় ৬২টি লাইটার ভারতের সীমানা পার হয়ে বাংলাদেশের নৌ-রুট দিয়ে মোংলা বন্দরের দিকে আসতে শুরু করে। তবে ভারত থেকে দেশে ফেরত আসা প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার নৌ-শ্রমিকরা করোনা ভাইরাস বহনে কতটুকু ঝুকি মুক্ত তা নিয়ে সঙ্কা দেখা দিয়েছে মোংলা বন্দরসহ এর আশপাশ এলাকায় বসবাসকারীদের মধ্যে।

বাংলাদেশ লাইটার শ্রমিক ইউনিয়নের মোংলা শাখার সভাপতি মোঃ ফিরোজ আলম বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানায়, ভারতের কলকাতা, বজবজ ও হলদিয়া বন্দর থেকে সিমেন্টের কাঁচামাল আনার জন্য প্রায় তিন শতাধিক লাইটার জাহাজ এক মাস আগে থেকে সেখানে অবস্থান করছিল। করোনা ভাইরাসের কারনে ভারতে পন্য পরিবহনের জন্য যাওয়া শ্রমিকসহ এ জাহাজ আটকা পরে ভারতে। আংটিহাড়া নৌ-রুট দিয়ে আসার সময় শ্রমিক সংগঠনের সহায়তায় এবং দু’দেশের কাষ্টমস ও ইমেগ্রশন শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরিক্ষা করিয়ে দেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে। তার পরেও যদি সমস্যা দেখা যায় তবে বন্দরে অবস্থান করে কেউ জাহাজ থেকে না নামার জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে বলে দেয়া হয়েছে।

মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রাহাত মান্নান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, দেশে এখন চরম সময় পার করতে হচ্ছে। তার মধ্যে সম্প্রতি ভারতে আটকে পরা প্রায় তিন জাহার বাংলাদেশী নৌ-শ্রমিকসহ বেশ কিছু লাইটার জাহাজ ভারতের সীমানা পার হয়ে মোংলা বন্দরের দিকে আসতে শুরু করেছে। তাই জেলা প্রশাসক ও খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। এছাড়াও দেশের সীমানায় আসার সাথে সাথে লাইটারসহ শ্রমিকদের সেখানেই থাকার ব্যাবস্থা নেয়া হবে এবং এব্যাপারে সেখানকার কাষ্টমস ও পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আর যারা মোংলা বন্দরের কাছাকাছি আসছে তাদের বন্দরেই হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যাবস্থা করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত