শরণখোলা রাজাকারমুক্ত হয় দেশ স্বাধীনের দুদিন পর

১৬ডিম্বের দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও দুইদিন যুদ্ধ চলে বাগেরহাটের শরণখোলায়। ১৪ডিসেম্বর থেকে টানা পাঁচদিন সম্মুখযুদ্ধে পরাস্থ হয়ে গোপন সুড়ঙ্গ দিয়ে রাজাকাররা নদীতে পড়ে পালিয়ে যায়। ১৮ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে রাজাকার মুক্ত ঘোষনা করা হয় শরণখোলাকে। শেষ যুদ্ধে শহীদ হন পাঁচ বীর যোদ্ধা।

রাজাকাররা শরণখোলার তৎকালীন আওয়ামীলীগ নেতা নাছির উদ্দিন আকনের থানা সদর রায়েন্দা বাজারের বাসভবন দখল করে ক্যাম্প গঠন করে। শতাধিক রাজাকার আক্রমণের প্রস্তুতি নিয়ে ঘাটিতে অবস্থান করছিলো।

শেষ যুদ্ধের বর্ণনা দেন পূর্বাঞ্চল দলের কমান্ডিং অফিসার এবং যুদ্ধকালীন ইয়াং অফিসার ও স্টুডেন্ট ক্যাম্প কামন্ডার হেমায়েত উদ্দিন বাদশা। তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রায়েন্দা বাজারের থানা ভবন, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ও নাছির উদ্দিন আকনের বাসভবন দখল করে রাজাকাররা ক্যাম্প স্থাপন করে। ৯নং সেক্টরের সুন্দরবন সাবসেক্টর কমান্ডার মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিন আহমেদ ও সেকেন্ড ইন কমান্ড শামছুল আলম তালুকদারের নেতৃত্বে ১৪ ডিসেম্বর দুপুর ১টার দিকে রাজাকারদের ক্যাম্পে আক্রমন করা হয়। মোরেলগঞ্জের আব্দুল গফ্ফার সুবেদার ছিলেন পশ্চিমাঞ্চল দলের কমান্ডিং অফিসারের দায়িত্বে।

হেমায়েত উদ্দিন বাদশা বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, পুর্বাঞ্চলের এলএমজির কভারিং ফায়ারের দায়িত্বে ছিলেন রামপালের শ্যামল। তিনি উপর থেকে রাজাকার ক্যাম্পে ফায়ার করতে থাকেন আর অগ্রবর্তি দলের ২০-২৫ জন যোদ্ধা নাছির মিয়ার ভবনে রাজাকার ক্যাম্পের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার আনুমানিক ১০ মিনিটের মাথায় রাজাকারের গুলিতে অগ্রবর্তি দলের যোদ্ধা গুরুপদ শহীদ হন। গুলিতে তাঁর মাথার খুলি উড়ে যায়। বিকেল চারটা থেকে সাড়ে চারটার মধ্যে টিপু সুলতার ও আসাদুজ্জামান শহীদ হন। রাতে শহীদ আসাদুজ্জামান এবং আলাউদ্দিন। ১৫ ডিসেম্বর থানা ভবন এবং ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের রাজাকাররা ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা ওই দুই ক্যাম্প দখলে নেয়।

এর পর পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের সকল যোদ্ধা ঐক্যবদ্ধ হয়ে নাছির মিয়ার ভবনে আক্রমন করে। ১৭ ডিসেম্বর দিনভর যুদ্ধ চলে। রাতে রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধাদের গুলির মুখে টিকতে না পেরে বেশিরভাগ রাজাকার ওই রাতেই রায়েন্দা খালে সঙ্গে সংযুক্ত ১০০ফুট দীর্ঘ গোপন সুড়ঙ্গ পথ দিয়ে পালিয়ে যায়। ১৮ ডিসেম্বর সকাল ৯টার দিকে ক্যাম্পের মধ্যে ১৭-১৮ জন রাজাকার পাওয়া যায়। তাদেরকে সেখানেই মেরে ফেলা হয়।

পূর্বাঞ্চল দলের শেষ যুদ্ধের কমান্ডিং অফিসার হেমায়েত উদ্দিন বাদশা বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, ১৮ ডিসেম্বর সকাল ১০টার দিকে শরণখোলাকে রাজাকার মুক্ত ঘোষনা করে সাবসেক্টর কমান্ডার মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিন আহমেদ থানা ভবনে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেন। এদিন বিকেল ৪টার দিকে রায়েন্দা পাইলট হাইস্কুল মাঠে চার শহীদের জানাজার নামাজ শেষে রায়েন্দা গার্লস স্কুলের সামনে দাফন করা হয়। আর ১৫ ডিসেম্বর গুরুপদকে সমাহিত করা হয় সুন্দরবন সংলগ্ন সাউথখালী ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামের পানিরঘাট এলাকায়।