মোংলা বন্দরে বিশেষ সতর্কতা

ঘূর্ণিঝড় বুলবুল’র প্রভাবে সুন্দরবন উপকূলে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া

মোংলা প্রতিনিধি

আপডেট : ০৬:৩৭ পিএম, শুক্রবার, ৮ নভেম্বর ২০১৯ | ১৬৮৮

বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করা প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’র প্রভাবে ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর ও সংলগ্ন সুন্দরবনের নদ নদী খুবই উত্তাল রয়েছে। এজন্য আবহাওয়া অধিদফতর শুক্রবার সকালে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে মোংলা বন্দরসহ সুন্দরবন উপকূলের আশপাশের এলাকায় শুক্রবার দুপুর থেকে হালকা থেকে মাঝারী বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়া বইতে শুরু করেছে। এদিকে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বঙ্গোপসাগরের সুন্দরবন উপকূলের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া টর্ণেডোর কবলে পড়ে একটি ফিসিং ট্রলার ডুবে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে সাগর থেকে ভাসমান এক জেলেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করেছে র‌্যাব ও দুবলা ফিসারম্যান গ্রুপের সদস্যরা।

অপরদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’র প্রভাবে মোংলা সমুদ্র বন্দরে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। একই সঙ্গে খোলা হয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষের তিনটি কন্ট্রোল রুম। বন্দরে এই মুহূর্তে মেশিনারি, কিংকার, সার, জিপসাম, পাথর, সিরামিক ও কয়লাসহ মোট ১৪ টি বাণিজ্যিক জাহাজ অবস্থান করছে। এসব জাহাজে পণ্য খালাসে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বানিজ্যিক জাহাজের পন্য খালাস-বোঝাইয়ের কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে জানায় বন্দর ব্যাবসায়ীরা।


মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডার শেখ ফকর উদ্দিন শুক্রবার দুপুরে মোবাইল ফোনে বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, এ মুহুর্তে বন্দরে জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানামার কাজ বন্ধ না করা হলেও পরবর্তিতে অবস্থার অবনতি হলে বন্দরের অপারেশন কাজ বন্ধ করে দেয়া হবে। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের আগাম প্রস্তুতি হিসেবে কন্ট্রোল রুম খোলাসহ বন্দরের সকল নৌযান ও স্থাপনায় সতর্কতা জারী করা হয়েছে। যাতে আবহাওয়ার অবনতি হলেই নৌযানগুলো নিরাপদ আশ্রয় নিতে পারে। এ ছাড়া বড় বড় বিভিন্ন স্থাপনার উপরও বিশেষ নজর রাখা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’র পর্যবেক্ষণে উপজেলা প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষ পৃথক কন্ট্রোল রুম খুলেছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রাহাত মান্নান এ তথ্য জানিয়ে বলেন, প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের কারণে উপজেলার সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুতি মূলক সভা করা হয়েছে। বিকালে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সাইকোন শেল্টার গুলি প্রস্তুত রাখার কথা বলা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে মাইকিং করে জনসাধারণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ নাহিদুজ্জামান ও সিপিপি’র উপজেলা সহকারী পরিচালক মোঃ আলমগীর হোসেন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ মিলে এ উপজেলার মোট ৭৮টি সাইক্লন শেল্টার দুর্গতদের জন্য প্রস্তুত এবং দুর্যোগের পুর্বে, চলাকালীন ও পরে ৯৯০ জন সেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যাতে লোকজনকে সচেতন, উদ্ধার ও নিরাপদ আশ্রয় নিতে পারেন। এদিকে সুন্দরবনে মৎস্যজীবিদের বৃহৎ সংগঠন ‘দুবলা ফিসারম্যান গ্রুপে’র সভাপতি কামাল উদ্দিন আহম্মেদ বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, বুলবুল’র প্রভাবে সাগরের সুন্দরবন উপকূলসহ সংলগ্ন নদ নদীগুলো খুবই উত্তাল রয়েছে। প্রচন্ড ঢেউয়ের কারণে মাছ ধরার ট্রলার ও নৌকাগুলো টিকতে না পেরে তীরে ফিরে আসতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বঙ্গোপসাগরের সুন্দরবন উপকূলের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া টর্ণেডোর কবলে পড়ে একটি ফিসিং ট্রলার ডুবে গেছে। ডুবে যাওয়া ট্রলারের জেলে জাহাঙ্গীর আলম (৪৫) কে সাগরে ভাসমান মুমুর্ষ অবস্থায় র‌্যাব ও দুবলা ফিসার ম্যান গ্রুপের জেলেরা উদ্ধার করে চিকিৎসা দিচ্ছেন। উদ্ধার হওয়া জেলের বাড়ি বৃহত্তর চট্রগ্রামের ফটিকছড়ি এলাকায়। তার অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় এবং কতজন নিখোজ রয়েছে এর বেশী কিছু জানাতে পারেননি তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে আসন্ন রাস মেলা উদযাপন কমিটির সভাপতি ও ‘দুবলা ফিসারম্যান গ্রুপে’র সভাপতি কামাল উদ্দিন আহম্মেদ বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, দুর্যোগপূর্ণ এ আবহাওয়া বহাল থাকলে এবারে ১০ নভেম্বর থেকে সুন্দরবনের দুবলার চরে রাস উৎসব অনুষ্ঠিত না হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। তবে আবহাওয়ার উন্নতি হলে যথারীতি রাস উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। তবে ঘুর্নিঝড়েরর কারনে এবারের রাস মেলা না হওয়ার সম্ভাবনা বেশী।

পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মাহমুদুল হাসান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, সকল জেলেদের পাশ পারমিট বন্ধ করা হয়েছে, পাশাপাশী ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থান পর্যবেন করা হচ্ছে, অবস্থা প্রতিকূল হলে দুবলার চরে জেলেদের মাছ ধরার অনুমতি দেওয়া হবে না। এরই মধ্যে বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত