১০দিন পর আবার সাগরে জেলেরা : শরণখোলায় মহাজনদের ক্ষতি ৪কোটি টাকা

লঘুচাপে উপকূলের মৎস্যজীবিদের সর্বনাশ

মহিদুল ইসলাম, শরণখোলা

আপডেট : ০৫:৪৯ পিএম, বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | ৮৬৫

এবারের লঘুচাপে চরম ক্ষতি হয়েছে উপকূলীয় মৎস্যজীবিদের। একেকটি ট্রলারে জেলেদের খাদ্যসামগ্রী, জ্বালানী তেল, বরফ ও অন্যান্য মিলিয়ে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা বিনিয়োগ করে পুঁজি হারিয়েছেন মহাজনরা। সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে টানা ১০দিন মাছ ধরতে না পারায় বাগেরহাটের শরণখোলার দুইশোর মতো শুধুমাত্র ইলিশ আহরণকারী ট্রলারে কমপক্ষে চার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে মৎস্যসংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন। লঘুচাপটি দীর্ঘদিন অবস্থান করার কারণে এামন লোকসানে পড়তে হয়েছে তাদের।

ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান, ৬৫ দিন অবরোধ শেষে ২৩ আগস্ট থেকে সাগরে মাছ ধরা শুরু হয়। পর পর দুই গোনে (ট্রিপ) তেমন একটা মাছ পড়েনি। তৃতীয় গোনে (গত ১সেপ্টেম্বর) জেলেরা অনেক আশা নিয়ে সাগরে গিয়ে জাল ফেলতে না ফেলতেই দুর্যোগের মুখে পড়ে সমস্ত ট্রলার কূলে ফিরে আসে। সাগর ছেড়ে এসব ট্রলার সুন্দরবন ও উপকূলের বিভিন্ন নদ-নদী আশ্রয় নেয়। আবহাও কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) ভোরে নতুন করে প্রস্তুতি নিয়ে আবার সাগরে ছুঁটেছে ট্রলারগুলো।

মৎস্য ব্যবসায়ীরা বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, গত কয়েক বছর ধরে সাগরে ঘনো ঘনো লঘুচাপ-নিম্নচাপের সৃষ্টি হচ্ছে। এবং তা অবস্থান করছে দীর্ঘসময়। এর প্রভাব উপকূলের নদ-নদীতেও পড়ছে। এবছর ইলিশ মৌসুমের শুরু থেকেই কয়েকদফা দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হয়েছে জেলেদের। ফলে এবার আসল পুঁজি অনেকেই ঘরে তুলতে পারবেনা বলে হতাশায় পড়েছেন তারা।


মৎস্য আড়তদার কবির হাওলাদার বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, টানা ১০দিন লঘুচাপের প্রভাবে সাগরে নামতে পারেনি জেলোর। তার পাঁচটি ফিশিং ট্রলারে এবার ১০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। নতুন করে আবার বাজারঘাট, জ্বালানী, বরফ মিলে আরো ১০-১২ লাখ টাকা খরচ করে ট্রলারগুলো সাগরে ছাড়তে হয়েছে। বিলাশ রায় কালু জানান, সাড়ে তিন লাখ টাকা খচর করে তার দুটি ট্রলার সাগরে পাঠিয়ে ছিলেন। দুর্যোগের কারনে তার আরো এক লাখ ৮০ হাজার টাকা বাড়তি খরচ হয়েছে। এভাবে শরণখোলার সব ইলিশ মহাজনদের প্রত্যেকের অন্ততঃ দুই লাখ টাকার করে লোকসান গুণতে হয়েছে।

মৎস্য ব্যবসায়ীদের নেতা এম সাইফুল ইসলাম খোকন জানান, দুর্যোগের সময় তার ট্রলার সাগর থেকে উঠে পাথরঘাটার মহিপুরে আশ্রয় নেয়। সেখানে অবস্থানকালে টাকাপয়সা, খাদ্যসামগ্রী শেষ হয়ে যাওয়ায় বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে হয়ে জেলেদের। পরে আরো প্রায় দুই লাখ টাকার তেল, বরফ, বাজারসদয় করে ট্রলার সাগরে পাঠাতে হয়েছে।

বাগেরহাট জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি ও জাতীয় মৎস্যজীবি সমিতির শরণখোলা উপজেলা সভাপতি মো. আবুল হোসেন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, এবারের লঘুচাপ আমাদের সর্বশান্ত করেছে। প্রত্যেক ট্রলার মালিকের দেড়-দুই লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। নতুন করে আবার বিনিয়োগ করতে হয়েছে ট্রলারে। আমাদের উপজেলায় সাগরগামী দুই শতাধিক ফিশিং ট্রলারে লোকসান হয়েছে প্রায় ৪ কোটি টাকা। লঘুচাপ এতো দীর্ঘসময় এর আগে কখনো অবস্থান করেনি। যার ফলে ক্ষতির পরিমানটা বেশি হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত