শরণখোলায় স্বামীকে হত্যার চেষ্টা, স্ত্রী আটক

মহিদুল ইসলাম, শরণখোলা

আপডেট : ০৪:০১ পিএম, শনিবার, ২৩ মার্চ ২০১৯ | ১৮৬৬

শরণখোলায় ঘুমন্ত স্বামীকে ধারালো দা দিয়ে গলা কেটে লেপ দিয়ে ঢেকে রাখে পাশেই বসে থাকে স্ত্রী কুমকুম আক্তার শিমু (২৫)। ছেলের ঘর থেকে গোঙানির শব্দ টের পেয়ে মা-বাবা ছুঁটে এসে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকতেই পালিয়ে যায় ঘাতক স্ত্রী। শ্বাসনালী অক্ষত থাকায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান স্বামী রুমান মৃধা (৩০)। পালিয়ে বেশিদুর যেতে পারেনি শিমু। এরই মধ্যে পার্শ্ববর্তী মোরেলগঞ্জ উপজেলার কেয়ার বাজার বাসস্ট্যান্ডে পুলিশ ও জনতার হাতে ধরা পড়ে যায়। শুক্রবার দিনগত রাত আড়াইটার দিকে উপজেলার ধানসাগর ইউনিয়নের দক্ষিণ বাঁধাল গ্রামের নজির মৃধার বাড়িতে নৃশংস এ ঘটনা ঘটেছে।


ওই রাতেই পুলিশের সহায়তায় পরিবারের লোকেরা মুমুর্ষূ অবস্থায় রুমানকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে দ্রুত খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় তাকে। বর্তমানে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন। এঘটনায় রুমানের মা বাদি হয়ে শনিবার দুপুরে শরণখোলা থানায় মামলা দায়ের করেছেন।


মামলার বাদি আহত রুমানের মা রেনু বেগম বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, রাত আড়াইটার দিকে ঘরের মধ্যে গোঙানির শব্দ শুনতে পান তিনি। বউয়ের কাছে কিসের শব্দ জানতে চাইলে বলে বিড়ালে ঝগড়া বাধিয়েছে। তখন ছেলের বাবাকে (নজির মৃধা) ঘুম থেকে উঠিয়ে রুমের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখেন রুমানকে লেপ দিয়ে ঢেকে রাখা। ঘরের মেঝে ও বিছানা রক্তে ভেজা। লেপ সরিয়ে ছেলেকে গলা কাটা অবস্থায় দেখে তারা চিৎকার, কান্নাকাটি করতে থাকেন। আশপাশের লোকজন আসার আগেই ঘাতক স্ত্রী কুমকুম আক্তার শিমু ঘর থেকে বেরিয়ে পালিয়ে যায়।

রেনু বেগম বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, তার ছেলে ‘গ্রুপ ফোর’ নামের একটি ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি কোম্পানিতে চাকরি করে। রুমান যশোরে কর্মরত অবস্থায় নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কোটাকোল এলাকার শেখ হারুন অর রশিদের মেয়ে কুমকুম আক্তার শিমুর সাথে মোবাইলে পরিচয় হয়। শিমু তখন ঝিনাইদাহে একটি বাইং হাউজে কাজ করতো। একপর্যায়ে তাদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠায় আট মাস আগে তারা নিজেরাই বিয়ে করে। বিয়ের পর থেকেই শিমু তাদের বাড়িতেই থাকে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনোদিন ঝগড়াঝাঁটি হয়নি।


তিনি আরো জানান, ছেলে বাড়িতে না থাকলে বউ গোপনে মোবাইলে কথা বলতো। তাদের ধারণা বউয়ে অন্য কারো সাথে সম্পর্ক আছে। তার ছেলেকে হত্যা করে বউ হয়তো অন্য প্রেমিকের সাথে যেতে চেয়েছিলো।


অপরদিকে, স্ত্রী কুমকুম আক্তার শিমু অভিযোগ করেন, বিয়ের পর থেকে তার স্বামী যৌতুৃকের জন্য তাকে মারধর করতো। নির্যাতন সইতে না পেরে স্বামীকে জবাই করে মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন।


এব্যাপারে স্থানীয় ই্উপি মেম্বার আসাদুজ্জামান স্বপন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, রাতে ওই বাড়ি থেকে রুমানের এক চাচাতো ভাই মোবাইল ফোনে তাকে ঘটনা জানান। সঙ্গে সঙ্গে তিনি থানায় ফোন করে জানালে দ্রুত পুলিশ এসে রুমানকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। এসময় পুলিশ ও এলাকাবাসী তল্লাশি শুরু করেন। একপর্যায়ে ভোর চারটার দিকে স্থানীয় লোকজন কেয়ার বাসস্ট্যান্ড থেকে শিমুকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।


শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দিলীপ কুমার সরকার বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, এ ঘটনায় ছেলের মা বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। মামলার একমাত্র আসামী স্ত্রী কুমকুম আক্তার শিমুকে আটক করা হয়েছে। ঘটনার কারণ উদঘাটনের চেষ্টা চলছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত