সিডরে পরিবারের একমাত্র বেঁচে থাকা মোস্তফার কষ্টগাঁথা

স্বজনদের কথা মনে পড়লে কান্নায় বুক ভেঙে যায় !

মহিদুল ইসলাম, শরণখোলা

আপডেট : ০৩:৩৪ পিএম, বৃহস্পতিবার, ১৫ নভেম্বর ২০১৮ | ১৬৯১

সিগনাল শুনতে পায়নি। তাই বুঝে উঠতে পারেনি ঝড়ের গতিবিধি। প্রবল গতিতে যখন ঝড় শুরু হয় তখন আশ্রয় কেন্দ্রে যাবার জন্য ঘর থেকে বের হতেই বলেশ্বর নদ থেকে পাহাড় সমান ঢেউ এসে সবাইকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। মা-বাবা, চার ভাই-বোন, দাদি ও বোনের ছেলেসহ মারা যায় পরিবারের আটজন। স্বজনদের কথা মনে করলেই চাপা কান্নায় বুক ভেঙে যায়। কথাগুলো ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর প্রলয়ঙ্করি ঘূুর্ণিঝড় সিডরে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া পরিবারের একমাত্র সদস্য বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ সাউথখালী গ্রামের মোস্তফা মোল্লার।

সিডরের বিভীষিকাময় সেই রাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে মোস্তফা বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, যখন ঝড় শুরু হইছে তহন মোরা সবাই সাইকোন সেন্টারে (শেল্টা) যাওয়ার লইগ্যা ঘরদিয়া বাইর ওই। এর মদ্যেই বলেশ্বর দিয়া পাহাড়ের নাহান ঢেউ আইয়া সবাইরে ভাসাইয়া লইয়া যায়। ঢেউয়ে মোরে একটা চাম্বল গাছের মাথায় উডায়। সারা রাইত ওই গাছের ডাল ধইর‌্যা বইয়া থাহি। সকালে গাছ দিয়া নাইম্যা দেহি ঘরবাড়ির কোনো চিনা (চিহ্ন) নাই। মা-বাপ, ভাই-বইন কেউরই কোনো খোঁজ নাই।

মোস্তফা ভারাক্রান্ত কন্ঠে জানান, বাড়ির পাশের খালের চরে ওইদিন (১৬নভেম্বর) দুপুরে খুঁজে পাওয়া যায় মা মর্জিনা বেগম আর বাবা সোবাহান মোল্লার লাশ। পরেরদিন ধান ক্ষেত থেকে উদ্ধার হয় বোন রাবেয়া ও ভাই লোকমানের মরদেহ। প্রতিবেশীদের সহায়তায় নিজ হাতেই দাফন করেছেন স্বজনদের। প্রায় দুই মাস পর জানতে পারেন তার আরেক বোন সালমা, ভাই শামীম এবং দাদি হামেতন বিবির লাশ দাফন হয়েছে অন্য একটি গণকবরে। বোনের এক বছর বয়সের ছেলে সাব্বিরকে আর খুঁজেই পাওয়া যায়নি। তাদের কথা মনে পড়লে রাতে ঘুমাতে পারেন না। চাপা কান্না আর কষ্টে বুকটা ভেঙে যেতে চায়।

সিডরে সব হারানো ১১ বছরের সেই কিশোর মোস্তফা এখন দুই সন্তানের বাবা। পার্শ্ববর্তী চালিতাবুনিয়া গ্রামের তার চাচা শাহজাহান মোল্লা ২০০৯ সালে অসহায় মোস্তফার সাথে মেয়ে শাহনাজের বিয়ে দেন। তাদের কোলজুৃড়ে এসেছে দুটি ফুটফুটে সন্তান। রাব্বি (৭) স্থানীয় সিএসবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। আর মেয়ে এলমার বয়স দেড় বছর। বলশ্বের পাড়ে মাথাগোজার ঠাই সামান্য জমি টুকু বেড়িবাধে চলে গেছে। বর্তমানে শ্বশুরের বাড়িতেই থাকছেন পরিবার নিয়ে। আগে বলেশ্বর নদীতে মাছ ধরে সংসার চলতো। যখন যে কাজ পান এখন তাই করেই জীবীকা নির্বাহ করছেন।



তবে, মোস্তফার একটাই আক্ষেপ, একটা টেকসই বেড়িবাধ থাকলে সিডরে তার পরিবারের সবাইকে হারাতে হতোনা !

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত