বাগেরহাটে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ক্ষেতের পোকা দমনে পার্চিং পদ্ধতি

এস এম সামছুর রহমান

আপডেট : ০২:৫৫ পিএম, বুধবার, ৩১ অক্টোবর ২০১৮ | ১১৮৩

উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে কৃষকের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ধান েেতর পোকা দমন করার পাচিং পদ্ধতি। তিকারক পোকার আক্রমণ থেকে তে রায় এ পদ্ধতি একটি কৃষি বান্ধব প্রযুক্তি। এতে পোকামাকড় দমনে তাদের জমিতে আর প্রচুর পরিমানে কীটনাশক দিতে হচ্ছে না। এ কারণে কৃষকেরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, রা পাচ্ছে পরিবেশও। সরকারও আনুষ্ঠানিক ভাবে এবছর ৮ মার্চ থেকে প্রতিবছর জাতীয় পার্চিং উৎসব পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

পার্চিং পদ্ধতিতে একর প্রতি েেত ১৪ থেকে ১৬ টি গাছের ডাল পুতে দিতে হয়। এই ডালের উপর বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বসে তিকারক পোকা খেয়ে ফেলে। এর ফলে জমিতে কীটনাশক খরচ কম ও পরিবেশের ভারসাম্য রা পায়। এছাড়া কৃষকরাও এ পদ্ধতি ব্যবহার করে আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন বলে কৃষিবিদরা মনে করছেন।

বাগেরহাট সদর, রামপাল ও ফকিরহাট উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকদের আমন তে সবুজের সমারোহ। বাতাসে সবুজ শিষ দুলছে। েেতর মধ্যে গাছের ডাল পোতা রয়েছে। ওই পার্চিং (খুঁটিতে) ফিঙ্গে, শালিক, দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বসে আছে। সুযোগ বুঝে ধানেেত থাকা তিকর পোকা ওইসব পাখিরা খেয়ে ফেলছে।

রামপাল উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক আবু হান্নান সেখ বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, এ বছর আমি েেত পার্চিং পদ্ধতির প্রযুক্তি ব্যবহার করেছি। এতে খরচ নেই। বাড়ীর গাছ থেকে ডাল কেটে েেত পুতে দিয়েছি। ওই ডালে বসা পাখিরাই েেতর তিকারক পোকা খেয়ে ফেলছে। এতে যেমন আর্থিক উপকার হচ্ছে, তেমনি পরিবেশের ভারসাম্য রা পাচ্ছে।

একই উপজেলার সগুনা গ্রামের বিধান চন্দ্র পাল বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান জানান, কৃষি কর্মকর্তাদের অনুরোধে এবার পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করেছি। এতে অনেক উপকার হয়েছে। প্রায় ৮০ ভাগ কীটনাশক কম লেগেছে। আগামীতে সব ক্ষেতে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করবো।

পার্চিং পদ্ধতিকে বেগবান করতে এবছরের ৭ ফেব্রুয়ারী বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার তৎকালিন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ নাসরুল মিল্লাত রামপালের কুমলাই এলাকায় স্থানীয় কৃষক-কৃষানী, শিক্ষক ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে পার্চিং উৎসব পালন করেন। এখবরটি প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায় প্রচার হলে বিষয়টি কৃষিমন্ত্রীর নজরে আসলে তিনি এই পদ্ধতিতে সারা দেশে পার্চিং উৎসব পালনের নির্দেশ দেন। ফলে সরকার আনুষ্ঠানিক ভাবে এবছর ৮ মার্চ থেকে প্রতিবছর জাতীয় পার্চিং উৎসব পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।

কৃষিবীদ নাসরুল মিল্লাত বর্তমানে ফকিরহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, ‘ আমি ২০১২ সালে মৌসুম ব্যাপী আইপিএম ট্রেনিং গ্রহন করি। সেই ট্রেনিং হতে পার্চিং ধারণাটি লালন করি। আবার ব্রি, গাজীপুরে ধান বিষয়ক ট্রেনিংয়ে পার্চিং এর কথা শুনি যে, ধান ক্ষেতের পাখি গুলোর পেটে ৮০% ক্ষতিকর পোকা পাওয়া গিয়েছে। ২০১৬ ও ২০১৭ সালে ব্লু-গোন্ড ডিএই প্রোগ্রামের মৌসুম ব্যাপী কৃষক ট্রেনিং, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রশিক্ষণে ৫টি ব্যাচে ফ্যাসিলিটেটর ছিলাম। সেই সব প্রশিক্ষণে পার্চিং সেশন/কাস-এ তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক ফ্যাসিলিটেট করেছিলাম। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে চাকুরীকালে মাঠ পর্যায়ে ধানক্ষেত পার্চিং অর্থাৎ ডাল পুঁতার বিষয়টি কৃষকদের মাঝে উদ্বুদ্ধকরণের জন্য চেষ্টা করি। মাঠ পর্যায়ে কাজ করার সময় অনেক চাষীর ক্ষেত পর্যবেক্ষণ করি। পার্চিং এর কারণে কোন কোন চাষী কোন প্রকার কীটনাশক ব্যবহার করে না। কোন চাষী ৩/৪ বার কীটনাশকের বিপরীতে পার্চিং এর মাধ্যমে শুধু ১বার কীটনাশক ব্যবহার করে। সব কৃষককে বোঝানোর জন্য উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদেরও বেশ কষ্ট হয়। কৃষিমন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশনায় শতভাগ পার্চিং নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিজস্ব উদ্ভাবনী চিন্তার দ্বারা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রদর্শনীভুক্ত চাষী, আইএফএমসি প্রকল্পের কৃষক গ্রুপসহ বিভিন্ন কৃষক গ্রুপ নিয়ে মাঠের সমস্ত চাষী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, বালাইনাশক বিক্রেতা, জন প্রতিনিধি, ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য, চেয়ারম্যান গণকে নিয়ে সামান্য নাস্তার আয়োজনে এই পার্চিং উৎসব করার পরিকল্পনা করি। বিভাগীয় উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জেলা, অঞ্চলের স্যার গণকে আমন্ত্রণ করি এবং পার্চিং উৎসব বাস্তবায়ন করি। মাঠের দূরের চাষীদেরকে চিঠির মাধ্যমে অনুরোধ পত্র পাঠানোর ব্যবস্থা ও গ্রহন করি।

পার্চিং এর ফলে পাখি ক্ষতিকর পোকা ধরে খেয়ে ফেলবে, কীটনাশকের ব্যবহার ব্যাপকহারে কমবে, পরিবেশ দূষণ রোধ হবে, মানব স্বাস্থ্যে ঝুকি হ্রাস পাবে এটা কৃষকদের বোঝাতে সক্ষম হই। এর ফলে কৃষকদের মাঝে সাড়া জেগেছে, সামাজিক আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। পার্চিং এর ব্যাপারে কৃষক গণ নিজেদেরকে বিবেকের তাড়নায় তাড়িত হচ্ছে, নিজের স্বার্থে নিজের জমিতে পার্চিং করা জরুরী।’

এবিষয়ে জানতে চাইলে বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবীদ মোঃ আফতাব উদ্দিন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, এবছরের ফেব্রুয়ারী মাসে তৎকালিন রামপাল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাছরুল মিল্লাত প্রথম পার্চিং উৎসব পালন করেন। পরে মিডিয়ায় দেখে মাননীয় কৃষিমন্ত্রী এটিকে সারা দেশে পালনের নির্দেশ দেন। আশার কথা হলো, কৃষকরা এখন তাদের লাভ বুঝতে পেরেছে। বাগেরহাট জেলায় পার্চিং পদ্ধতি আগের থেকে অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত