পূর্ব সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে মাছ ধরতে না দেওয়ায় 

ডিএফও’র সামনেই এসিএফ ও দুই বনরক্ষীকে বেদম  মারলেন ছাত্রলীগ নেতা ও তার বাহিনী, গ্রেপ্তার ১

মহিদুল ইসলাম, শরণখোলা

আপডেট : ১০:৫৭ পিএম, শুক্রবার, ২২ মার্চ ২০২৪ | ১৮৪

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার (ডিএফও) সামনেই শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা ও দুই বনরক্ষীর ওপর হামলা চালিয়েছেন শরণখোলা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও তার বাহিনী। অভয়ারণ্য এলাকায় মাছ ধরতে না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে বনবিভাগ জানিয়েছে।

ছাত্রলীগ নেতা ও তার বাহিনীর এলোপাতাড়ি মারধরে শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) শেখ মাহাবুব হাসান, ফরেষ্টার মতিউর রহমান ও স্পীডবোট চালক সিরাজুল ইসলাম গুরুতর আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে বনসংলগ্ন শরণখোলা বাজার খেয়াঘাট এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটে। আহতরা শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এঘটনায় রাতে শরণখোলা থানায় পাঁচ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ৭-৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে বনবিভাগ। শুক্রবার (২২মার্চ) সকালে জসিম নামে এক আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) শেখ মাহাবুব হাসান বলেন, শরণখোলা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আসাদুজ্জামান আসাদ হাওলাদার এবং তার সহযোগী সাইফুল ইসলাম রুবেল খলিফা সুন্দরবনে মাছের ব্যবসা করেন। কিন্তু তারা ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে বনের নিষিদ্ধ (অভয়ারণ্য) যেসব এলাকা রয়েছে সেসব এলাকায় মাছ ধরার অপচেষ্টা করেন। এমনকি তারা যাতে নির্বিঘ্নে অভয়ারণ্যে মাছ ধরতে পারেন সেজন্য আমাকে বিভিন্ন সময় চাপ প্রয়োগ করে আসছিলেন। তাদের এই অনৈতিক দাবি মেনে না নেওয়ায় আমিসহ (এসিএফ)) আমার স্টাফদের ওপর ক্ষুব্ধ হন ছাত্রলীগ নেতা আসাদ ও তার বাহিনী। এরই জের ধরে তারা এই হামলা চালিয়েছেন।

এসিএফ মাহাবুব হাসান বলেন, বৃহস্পতিবার (২১মার্চ) শরণখোলা বাজারসংলগ্ন প্রদীপন সাইক্লোন শেল্টারে আন্তর্জাতিক বন দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নূরুল করিম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে রেঞ্জ অফিস পরিদর্শন করে ডিএফও বাগেরহাটের উদ্দেশে রওনা হবার আগমুহুর্তে ছাত্রলীগ নেতা আসাদ ও রুবেলের নেতৃত্বে ১০-১২ লোক কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাদেরকে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করেন। বিভাগীয় বন কর্মকর্তার সামনেই তারা আমাদের মেরে রক্ষাক্ত করেন।

এসিএফ মাহাবুব হাসান আরো বলেন, ছাত্রলীগ নেতা আসাদ ও তার সহযোগী রুবেল খলিফার সুন্দরবনে নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তারা তাদের জেলেদের মাধ্যমে বিষ দিয়ে মাছ শিকার করান। এছাড়া হরিণ শিকারও করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তারা আমাদের বিভিন্ন স্টেশন ও ক্যাম্পের বনরক্ষীদের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে অভয়ারণ্যে মাছ ধরার চেষ্টা করে আসছিলেন।

শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. তাওহীদুল ইসলাম বলেন, আহত বনরক্ষীদের নাক-মুখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতে চিহ্ন রয়েছে। তাদের যথাযথ চিকিৎসা চলছে।

শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এইচ এম কামরুজ্জামান বলেন, ঘটনায় বন বিভাগের বগী ষ্টেশন কর্মকর্তা (এসও) ফরেষ্টার মো. জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। আসামীরা হলেন শরণখোলা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. আসাদুজ্জামান আসাদ হাওলাদার, তার সহযোগী সাইফুল ইসলাম রুবেল খলিফা, মাসুদুর রহমান রনি, আমির হাসান চয়ন, মো. জসিমসহ অজ্ঞাত আরো ৭-৮ জন। এদের মধ্যে জসিমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য অসামীদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

শরণখোলা উপজেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন আকন শান্ত বলেন, একজন রেঞ্জ কর্মকর্তাসহ বনরক্ষীদের মারধরের ঘটনাটি খুবই ন্যাক্কারজনক। এঘটনায় জড়িত সে আমাদের দলের যেই হোক তাদের কঠোর শাস্তি হোক এটাই চাই।

এব্যপারে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নূরুল কমির বলেন, ঘটনাটি আমার সামনেই ঘটেছে। হঠাৎ ১-১২ জন এসে আক্রমন করেন। আমার রেঞ্জ কর্মকর্তা এবং আরো দুই বনরক্ষী গুরুতর আহত হয়েছেন। বিষয়টি আমার গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত