প্রস্তুত ৯১টি আশ্রয় কেন্দ্র, প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম

ধেয়ে আসছে ঘুর্ণিঝড় হামুন, সিডর বিধ্বস্ত জনপদে আতঙ্ক

মহিদুল ইসলাম, শরণখোলা

আপডেট : ১০:২৫ পিএম, মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৩ | ৪৬৮

ঘুর্ণিঝড় ‘হামুন’ ধেয়ে আসার খবরে সিডর বিধ্বস্ত জনপদ উপকূলীয় বাগেরহাটের শরণখোলার মানুষের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সোমবার রাত থেকে হালকা বৃষ্টিপাত ও দমকার বাতাস শুরু হয়েছে। ঝড়ের গতি প্রবল হলে আমনের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। পূর্ব সুন্দরবনেও সতর্কতা জারি করা হয়েছে। উপজেলার সাউথাখলী ইউনিয়নের বগী, গাবতলা, তাফালবাড়ী, সোনাতলা, খুড়িয়াখালী, রায়েন্দা ইউনিয়নের রায়েন্দা বাজার পূর্বমাথা ও খোন্তাকাটা ইউনিয়নের রাজৈর এলাকায় বেড়িবাঁধের বাইরে বসবাসকারী সহস্রাধিক পরিবার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।


এদিকে, ঝড়ের পূর্ব ও পরবর্তী করণীয় বিষয়ে মঙ্গলবার (২৪ অক্টোরব) সকাল ১০টায় উপজেলা প্রশাসন ও দর্যোগ ব্যবস্থানা কমিটি জরুরি সভা কেরেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি দুর্যোগকালীন কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। দুপুরে উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিও প্রস্তুতি সভা করেছে। ইউনিয়ন পরিষদগুতেও একটি করে কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। এছাড়া ৯১টি সাইক্লোন শেল্টার (ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র), একাধিক মেডিক্যাল ও সেচ্ছাসেবক টিম প্রস্তুত রাখাসহ পর্যাপ্ত শুকনা খাবার, মোমবাতি মজুদ রাখা হয়েছে। এদিকে, মোংলা বন্দনে ৫নম্বর বিপদ সংকেত জারি হওয়ার পরে সিপিপি, রেডক্রিসেন্ট ও এনজিও সেচ্ছাসেবকরা সকাল থেকে মাইকিং অব্যাহত রেখেছে। উপজেলার খোন্তাকাটা, রায়েন্দা ও সাউথখালী ইউনিয়নের বলেশ্বর নদের পারে বসবাসকারীদের সতর্ক থাকাসহ সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহনের জন্য মাইকিংয়ের মাধ্যমে আহবান করছেন সেচ্ছাসেবকরা।


উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রায়হান উদ্দিন আকন শান্তর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জরুরি সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সহসভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রায়েন্দা ইউপির চেয়ারম্যান আজমল হোসেন মুক্তা, খোন্তাকাটা ইউপির চেয়ারম্যান জাকির হোসেন খান মহিউদ্দিন, সাউথখালী ইউপির চেয়ারম্যান ইমরান হোসেন রাজিব, ধানসাগর ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান স্বপনসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, এনজিও এবং সেচ্ছাসেবি সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। গাবতলা এলাকার বেড়িবাঁধের বাইরের বাসিন্দা রুস্তম হাওলাদার, হেমায়েত হাওলাদার, রাজৈর এলাকার নীলচাঁনসহ অনেকেই জানান, ঝড়ের নাম শুনলেই সিডরের সেই ধ্বংসজজ্ঞের কথা মনে পড়ে। তারা বাঁধের বাইরে থাকেন।

জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলেই ঘরবাড়ি তলিয়ে যায়। চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় তখন। এবারের ঝড়ে তাদের কি পরিস্থিতি হবে সেই আতঙ্কে রয়েছেন তারা। উপজেলা কৃষি বিভাগের উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোস্তফা মশিউল আলম জানান, এবছর ৯হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেতের চারায় ফুল এবং থোড় এসেছে। এই মুহুর্তে ঝড় হলে আমনের ব্যাপক ক্ষতি হবে। ঝড়ের গতি কম হলে তেমন ক্ষতি হবে না। শুধু বৃষ্টি হলে ফসলের জন্য আর্শিবাদ হবে। পূর্ব বনবিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) শেখ মাহাবুব হাসান জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। সাগর তীরবর্তী সুন্দরবনের দুবলার চর, আলোরকোল, কচিখালী ও কটকার বনে বড় বড় ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে। শরণখোলা রেঞ্জে সতর্কতা জারি করে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীরে নিরাপদে অবস্থান করতে বলা হয়েছে।

এছাড়া দুর্যোগের মধ্যে সুন্দরবনে যাতে কোনো পর্যটক প্রবেশ না করে সেব্যাপারেও ট্যুর অপারেটরদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শরণখোলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. রায়হান উদ্দিন আকন শান্ত বলেন, আমরা জরুরি সভা করে সব ধরণের প্রস্তুতি গ্রহন করেছি। উপজেলায় একটি ও চারটি ইউনিয়ন পরিষদে আলাদা আলাদা কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে জনগণকে সতর্ক ও প্রস্তুত থাকতে প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে। মোংলা বন্দর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশিদ বলেন, মোংলা বন্দরে ৫নম্বর বিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে। প্রবল ঝড়ের আশঙ্কা না থাকলেও দমকা হাওয়া হতে পারে। তবে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত