২০অক্টোবর ষষ্টি পুজার মধ্যদিয়ে আরম্ভ

বাগেরহাটের ঐতিহ্যবাহী শিকদার বাড়ির দুর্গাপূজা দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ

পি কে অলোক,ফকিরহাট

আপডেট : ০৯:৩৭ পিএম, সোমবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৩ | ৬১৪

বাগেরহাটের ঐতিহ্যবাহী শিকদার বাড়ির দুর্গাপূজা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্ববৃহৎ। আগামী ২০অক্টোবর ষষ্টিপূজার মধ্যদিয়ে সনাতন ধর্মালোম্বিদের এই সর্ববৃহৎ পূজা আরম্ভ হবে। করোনাকালীন সময়ে তিন বছর স্বল্প পরিসরে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর আবারও নতুন করে এবছর ৫০১টি প্রতিমা নির্মাণ করে সম্পূর্ণ জমকালো ও চোখ ধাঁধানো আয়োজনের মধ্য দিয়ে আগের রূপে ফিরছে ঐতিহ্যবাহী শিকদার বাড়ির এই দুর্গাপূজা।

জানা গেছে, বগেরহাট সদর উপজেলার খাঁনপুর ইউনিয়নের হাকিমপুর গ্রামের ঐতিহ্যবাহী শিকদার বাড়ির দুর্গাপূজা করোনা সংক্রমনের পূর্বে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রতিমা তৈরী করে ব্যপক সাড়া জাগিয়ে ছিল। যে করণে এই পূজা মন্ডপ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্ববৃহৎ হিসাবে স্বিকৃতি অর্জন করে। এবং সর্বশেষ ২০১৯ সালে ৮৫১টি প্রতিমা নির্মাণ করে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এবছর ৫০১টি প্রতিমা নির্মাণ করে পূজার আয়োজন করা হয়েছে।

কারিগর শিল্পিরা জানান, গত ছয়মাস ধরে ২০জন প্রতিমা শিল্পী রাত-দিন পরিশ্রম করে ৫০১টি প্রতিমা তৈরি করেছেন। এসব প্রতিমায় ফুটিয়ে তুলেছেন সত্য ত্রেতা দ্বাপর ও কলি যুগের নানা কাহিনী। তৈরির কাজ শেষে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন সাজসজ্জার কাজে। দেবী দুর্গা এবছর ঘটকে আগমন এবং ঘটকে গমন করবেন। আগামী ২০শে অক্টোবর থেকে ২৪শে অক্টোবর পর্যন্ত চলবে দুর্গাপূজার উৎসব। ব্যবস্থা করা হয়েছে আধুনিক লাইটিং ও সাউন্ড সিস্টেম। প্রতিবছর শিকদার বাড়ির পূজা মন্ডপে কোন না কোন বিশেষ আকর্ষণ থাকবেই। তবে এবারের পূজায় বিশেষ আকর্ষন রয়েছে ৬৫ফুট লম্বা ঘুমন্ত কুম্ভকর্ণের প্রতিমা। এছাড়াও রয়েছে কংস ও পুতুনা রক্ষসির বৃহৎ প্রতিমা।

এদিকে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু না হলেও এশিয়া মহাদেশের অন্যতম বৃহৎ এ পূজা মন্ডপ দেখতে এরই মধ্যে ভিড় করছে শতশত ভক্ত ও দর্শনার্থীরা। দর্শনার্থী ও ভক্তদের নিরাপত্তার জন্য সব ব্যবস্থা করেছেন আয়োজক কর্তৃপক্ষ। ৮২টি সিসি ক্যামেরা দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে মন্দির ও এর চার পাশের এলাকা। শুধু তাই নয়, লক্ষলক্ষ দর্শনার্থীদের নিরবচ্ছিন্ন মোবাইল সংযোগের সুবিধার জন্য স্থাপন করা হয়েছে ভ্রাম্যমাণ মোবাইল টাওয়ার। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকেও রাখা হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। শতাধিকপুলিশ সদস্যের পাশাপাশি ৬৮জন আনসার সদস্য ছাড়াও সাদা পোশাকে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

গোপালগঞ্জ থেকে প্রতিমা দেখতে আসা গুরুচরণ বিশ্বাস বলেন, করোনা শুরুর আগে এই মন্ডপে পূজা দেখতে এসেছিলাম, আবারও বড় করে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে যেনে প্রতিমা দেখতে এসেছি। এ মন্দির হিন্দুধর্মালম্বীদের জন্য গৌরবের ব্যাপার। খুলনার কয়রা থেকে আসা দীপক কুমার মন্ডল নামের আরেক দর্শনার্থী বলেন, মন্ডপ ঘুরে প্রতিমা দেখে অভিভূত হয়েছি। সব ধর্মের মানুষ এই দুর্গোৎসবে মিলিত হবে। আশা করছি দেশের সেরা এ পূজা মন্ডপে দেশ-বিদেশের ভক্ত ও দর্শনার্থীরা আসবেন এবং ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে অংশ নিবেন।

প্রতিমা শিল্পী (ভাস্কর) বিজয় কৃষ্ণ বাছাড় বলেন, বৈশাখ মাস থেকে অদ্যাবদী ২০জন প্রতিমা শিল্পী নিয়ে রাত-দিন কাজ করে ৫০১টি প্রতিমা তৈরি করেছি। এখানে সত্য ত্রেতা দ্বাপর ও কলি যুগের কাহিনী তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। দর্শককে আকৃষ্ট করতে মন্ডপের বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে ৬৫ ফুট লম্বা ঘুমন্ত কুম্ভকর্ণের প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে। আশা করছি পূর্বের বছর গুলির থেকে এবছর দর্শনার্থীরা বেশি আনন্দ উপভোগ করবেন।

সাজসজ্জার মূল দায়িত্বে থাকা ডেকোরেটর মালিক মো. রাজা বলেন, দুই মাস ধরে ১২জন শ্রমিক নিয়ে এ মন্ডপের সাজসজ্জার কাজ করছি। আমরা চেষ্টা করছি সাজসজ্জার মাধ্যমে দর্শকদের মনকে আকৃষ্ট করতে। আয়োজকদের পক্ষে শিশির শিকদার বলেন, খুলনা মোংলা-মহাসড়কের বাগেরহাট সদরের চুলকাটি বাজার সংলগ্ন হাকিমপুর গ্রামের শিকদার বাড়িতে এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তর পূজা মন্ডপের আয়োজন করতে পেরে আমরা আনন্দিত।

আগত দর্শকদের নিরাপত্তার জন্য আইন-শৃঙ্খলার পাশাপাশি শতাধিক নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত থাকবে। এছাড়াও ৮২টি সিসি ক্যামেরা ও মন্ডপের চারপাশে দেড় কিলোমিটার এলাকা জুড়ে লাইটিংয়ের ব্যবস্থা এবং মন্দিরের পাশের্^ পর্যাপ্ত শৌচাগারের স্থাপন করা হয়েছে যা দর্শনার্থীদের কোনো সমস্যা না হবেনা। আয়োজক লিটন শিকদার বলেন, ২০১০সাল হতে বাবার ইচ্ছা পূরণে নিজবাড়িতে দুর্গা পূজার আয়োজন করি। এবছরও পূর্বে ন্যায় ৫০১টি প্রতিমা তৈরী করে দুর্গাপূজার আয়োজন করেছি।

করোনা মহামারির পূর্বে ২০১৯সালে ৮৫১টি প্রতিমা নির্মাণ করেছিলাম। বাগেরহাট জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি নিলয় কুমার ভদ্রের সাথে আলাপ করা হলে তিনি বলেন পদ্মা সেতু চালু হওয়ার ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় দেশের ৬৪জেলার মানুষের মিলন মেলা হবে এবার শিকদার বাড়ী দূর্গা মন্দিরে। শুধু তাই নয়, প্রতি দিন লক্ষলক্ষ ভক্ত ও দর্শনার্থীদের আগমন ঘটবে ভারত ও নেপাল থেকে আসা দর্শনার্থীদের।

বাগেরহাট জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আবুল হাসনাত খান এর সাথে আলাপ করা হলে তিনি বলেন, হাকিমপুর শিকদারবাড়ী দূর্গা মন্দিরকে ঘিরে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, যানজট নিরাসনে বিশেষ ট্রাফিক ব্যবস্থাও গ্রহন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য ২০১০সাল থেকে শিকদার বাড়িতে ব্যক্তি উদ্যোগে দেশের বৃহত্তর দুর্গাপূজার আয়োজন করেন লিটন শিকদার নামের একজন বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী। তিনি ২০১৬সালে ৬০১টি প্রতিমা, ২০১৭ সালে ৬৫১টি প্রতিমা, ২০১৮ সালে ৭০১টি প্রতিমা ও সর্বশেষ ২০১৯সালে ৮৫১টি প্রতিমা নির্মাণ করে দেশ-বিদেশে ব্যপক সাড়া জাগিয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত