বাগেরহাট জেলা পরিষদের কান্ড 

শতবর্ষী পুকুরে মার্কেট  নির্মানের উদ্যোগ, ক্ষোভে উত্তাল শরণখোলা 

স্টাফ রিপোর্টার

আপডেট : ১১:৩১ পিএম, শনিবার, ২৪ জুন ২০২৩ | ৩০৯

শরণখোলা উপজেলা সদর রায়েন্দা বাজারে সর্বসাধারনের খাবার পানির একমাত্র পানির উৎস্য সরকারী শতবর্ষী পুকুর ভরাট করে মার্কেট নির্মানের উদ্যোগ নিয়েছে বাগেরহাট জেলা পরিষদ। এজন্য জেলা পরিষদ রায়েন্দা পুকুরটির দক্ষিণ পাড় ভরাট করে মার্কেট নির্মানের জন্য সাত ব্যক্তিকে ইজারা বন্দোবস্ত দিয়েছে। বাগেরহাট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামরুজ্জামান স্বাক্ষরিত ইজারা বন্দোবস্ত দেয়া পত্রের একটি অনুলিপি মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে আসার পর বিষয়টি প্রকাশ পেলে শুরু হয় তোলপাড়। এই অবস্থায় ক্ষুদ্ব সবশ্রেনী পেশার মানুষ একজোট হয়ে পুকুর রক্ষার দাবীতে মাঠে নেমেছে। গত চারদিন ধরে পুকুর-জলাশয় ভড়াট না করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়ন ও রায়েন্দা পুকুরটি ভরাট করে মার্কেট নির্মাণ বন্ধে মিছিল, সমাবেশ, মানববন্ধনসহ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয়রা।


জেলা পরিষদের রায়েন্দা পুকুরটি ভরাট করে মার্কেট নির্মানের জন্য বরাদ্দপ্রাপ্ত সাতজনের মধ্যে রয়েছে, মোংলা উপজেলার স্থায়ী বসিন্দা বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক অম্বরিশ রায়, শরণখোলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শিশির কুমার সাহা ও তার স্ত্রী উজ্জালা সাহা, উপজেলা আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান খান ও তার স্ত্রী শিরিন সুলতানা রুমী, জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মো. ইমরান উদ্দিন শুভ ও তার স্ত্রী মৌসুফা নুর মুমু। এদের মধ্যে শিশির কুমার সাহা ও আসাদুজ্জামান খানের নামে এর আগে জেলা পরিষদের ডাকবাংলো মার্কেটে দুইটি দোকান বরাদ্দ নিয়েছেন বলে এলাকাবাসী জানান।


শরণখোলা উপজেলা সদরের স্থানীয় বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম সাগর, জিয়াউল হাসান রোকন, মিরাজ আকন জানান, জেলা পরিষদ অনৈতিক ভাবে শতবর্ষী এ পুকুরটির পূর্ব পাশে ইতিমধ্যে মার্কেট নির্মান করে সংকুচিত করে ফেলেছে। দক্ষিন পাশে আবার মার্কেট নির্মান করা হলে পুকুরটির অস্তিত্ব হারাবে। চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শিক্ষার্থী ওই পুকুরের পানি ব্যবহার করে থাকে। সরকার পুকুর ও জলাধার রক্ষায় কঠোর আইন প্রনয়ন করছে। তাই অনতিবিলম্বে জেলা পরিষদের আত্মঘাতি ওই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবী জানাই। অন্যথায় আন্দোলন চলিয়ে যাওয়াসহ উচ্চ আদালতে আইনের আশ্রয় নেয়া হবে বলেও জানান তারা।


উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রায়েন্দা ইউপি চেয়ারম্যান মো. আজমল হোসেন মুক্তা জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে পুকুরটি সাধারন মানুষের জন্য সংস্কার করা প্রয়োজন। তা না করে মার্কেট নির্মানের ইজারা দিয়েছে। জেলা পরিষদের এই সিদ্ধান্ত জনস্বার্থ পরিপন্থি।

শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নুর ই আলম সিদ্দিকী জানান, বাগেরহাট জেলা পরিষদের মালিকানাধীন শরণখোলা উপজেলা সদরের রায়েন্দা পুকুরটির দক্ষিন পাশ ভরাট করে সমার্কেট নির্মানের জন্য সাত জনের নামে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত ইজারা বন্দোবস্ত দেয়ার একটি পত্র মঙ্গলবার হাতে পেয়েছি। বঙ্গোপসাগর উপকূলে খাবার পানির জন্য সংরক্ষিত একমাত্র সরকারী পুকুরটি স্থানীয় জনসাধারনের জন্য খুবই গুরুত্বপুর্ণ। এই অবস্থায় স্থানীয়রা পুকুর রক্ষায় আন্দোলন শুরু করেছে। বিষয়টি উর্ধতন কর্র্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।


শরণখোলা উপজেলা চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন শান্ত জানান, জেলা পরিষদ অনৈতিক ভাবে ইতিমধ্যে এই পুকুরটির পূর্ব পাশে মার্কেট নির্মান করে সংকুচিত করে ফেলেছে। এখন দক্ষিন পাশে আবার মার্কেট নির্মান করা হলে পুকুরটির অস্তিত্ব হারাবে। শতবর্ষী এ পুকুরটি রায়েন্দা বাজারের হাজার হাজার মানুষের মিষ্টি পানির চাহিদা পুরন করে আসছে। সংরক্ষিত এ পুকুরটিতে দীর্ঘদিন ধরে মাছ চাষও বন্ধ রয়েছে। জেলা পরিষদকে অনতিবিলম্বে জনস্বার্থে পুকুরটি ভরাট করে মার্কেট নির্মান বন্ধ করার দাবী জানান এই জনপ্রতিনিধি।

এবিষয়ে বাগেরহাট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামরুজ্জামান টুকু বলেন, এ বিষয়ে কেউ লিখিত আপত্তি দিলে তদন্ত করে প্রয়োজনে ইজারা বাতিল করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত