মরে গেছে বাগেরহাটের ২৩টি নদী

আহসানুল করিম

আপডেট : ০২:৫২ পিএম, শুক্রবার, ৩০ মার্চ ২০১৮ | ১৩৩৮

সুন্দরবন দিয়ে বেষ্টিত উপকুলীয় জেলা বাগেরহাটে মরে গেছে ২৩টি নদী । এ জেলার ৯ টি উপজেলার বুক চিরে বহমান এ সব নদীতে এখন আর লঞ্চ -স্টিমার ও কার্গো ভ্যাসেল চলা চল করতে পারছেনা । এ নদী গুলোর অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে ভাটার সময় নদীতে হাটু পানিও থাকে না। শুকিয়ে যাওয়া এসব নদী দেখে এ জনপদের মানুষ এখন শুধু দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন-হাতড়ে বেড়ান নিকট অতিত।


এ জেলায় পলি জমে মরে যাওয়া ২৩টি নদী হচ্ছে পুটিমারী, বিশনা, দাউদখালী, মংলা, ভোলা, ঘষিয়াখালী, কালিগঞ্জ,খোন্তাকাটা, রায়েন্দা, বলেশ্বর, ভৈরব, তালেশ্বর, ভাষা, বেমরতা, দোয়ানিয়া, কুচিবগা, ছবেকী, রাওতি, বেতিবুনিয়া, কলমী ,দোয়ানিয়া, যুগীখালী, কুমারখালী, কালীগঙ্গা,ও চিত্রা নদী। এছাড়া অতিরিক্ত পলি জমে মরে গেছে বাগেরহাটের তিন’শতাধিক ছোট-বড় খাল।


এসব নদী শুকিয়ে যাওয়ার ফলে একদিকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নৌ বন্দর মংলার সাথে সারা দেশের সহজে র্কাগো ভ্যাসেলসহ নৌ যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে । এখন চলছেনা ঢাকা-খুলনা স্টিমার ও ঢাকা -বাগেরহাট লঞ্চ সার্ভিস । অন্য দিকে নদী ,খাল শুকিয়ে যাওয়ার ফলে কৃষকরা চাষাবাদ করতে শুস্ক মৌসুমে প্রয়োজনীয় পানি পাচ্ছেনা । আর বর্ষা মৌসুমে জলাদ্ধতায় প্রতি বছরই কৃষকের ফসল পানিতে ডুবে নষ্ট হচ্ছে ।


এ জেলায় লাখ লাখ হেক্টর ফসলি জমি ও খালে ভেড়ী বাধ দিয়ে অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষের ফলে ফসলি জমিতে স্বাভাবিক জোয়ারের পানি উঠতে পারছেনা। পানি উন্নয়ন র্বোডের (ওয়াপদা) ৫ টি পোল্ডারের ১৬৫ টি স্লুইচ গেটে সরকারী ভাবে কোন লোকবল নিয়োগ না থাকায় ভাটার পানি নামার সময় ফাপগেট (স্লুগেটের নিচের অংশ) গুলো সব সময় বন্ধ থাকায় ভরাট হয়েছে নদী। অন্য দিকে ফারাক্কা বাঁধের কারনে এসব নদী গুলোতে উজানের পানি না আসার ফলে দীর্ঘ সময় ধরে জোয়ারের পানি স্থির হয়ে থাকায় অতিরিক্ত পলি জমেও ভরাট হয়ে গেছে নদী-খাল। এ কারনে সমুদ্রের লবনাক্ত পানি দ্রুত ভাটায় নেমে যেয়ে ফসলি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত লবনাক্ততা ছড়িয়ে পড়ছে। হ্রাস পাচ্ছে ফসলি জমির উর্বরতা শক্তি। মরে শুকিয়ে যাচ্ছে বাগেরহাটের সবুজ প্রকৃতি ।


বাগেরহাটে অতিরিক্ত পলি জমে শুকিয়ে যাওয়া নদী ড্রেজিং ও খননের বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন র্বোডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈনুদ্দিন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান ,মংলা বন্দর থেকে ঘষিয়াখালী চ্যানেল হয়ে বন্দরের সাথে সহজ যোগাযোগের এই রুটটি সচল রাখতে রামপাল উপজেলা সদর হয়ে দাউদখালী নদীতে এবছর ড্রেজিং করা হয়েছে। জুনে এই চ্রানেলটি খুলে দেযা হবে।

জেলার কচুয়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ রাসেল আহম্মেদ বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, নদী খাল ভরাট হওয়ার ফলে দেশি প্রজাতির মাছ উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। অপর দিকে সমুদ্রের লোনা পানি বদ্দ হয়ে দেশি সরপুটি, পাবদা, শিং, মাগুর, ফোলই,খৈলশা, গজাল, চুচড়া, চাঁন্দা, রয়ভেদাসহ প্রায় অর্ধশত প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হতে চলেছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত