ফকিরহাটে বিষ প্রয়োগকারী চক্রের কারনে অর্ধশতাধিক চাষি এখন পথে 

পি কে অলোক,ফকিরহাট

আপডেট : ০৭:০৭ পিএম, শনিবার, ১৫ অক্টোবর ২০২২ | ৬২৭

ফকিরহাটের বাহিরদিয়া-মানসা ইউনিয়নের লালচন্দ্রপুর গ্রামের কয়েকটি বিলে মৎস্য ঘেরে বিষ প্রয়োগ করে মাছ লুট ও ক্ষতি সাধন একটি চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তাদের একেরপর এক বিষ প্রয়োগের কারনে অর্ধশতাধিক মৎস্য চাষি এখন সর্বস্ব হয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে। ধারাবাহিক ভাবে একেরপর এক অজ্ঞাত ঐ চক্রটি মৎস্য ঘেরে বিষ প্রয়োগ করে মাছ লুট ও ক্ষতি সাধন করলেও হাতে-নাতে ধরাতে না পারায় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় দিশেহারা মৎস্য চাষিরা উর্দ্ধতন পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।


জানা গেছে, ফকিরহাটের বাহিরদিয়া-মানসা ইউনিয়নের লালচন্দ্রপুর গ্রামটি অবস্থিত। এই গ্রামের অধিকাংশ জনগন মৎস্য ঘের ও তার ভিতর ধান ও ঘেরের পাড়ে নানা ধরনের সবজির চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। কিন্তু এলাকার একটি আজ্ঞাত দৃস্কৃতিচক্র সেই সমস্ত মৎস্য ঘেরে বিষ প্রয়োগ করে সাদা ও চিংড়ী মাছ লুট ও মাছের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেই চলেছে। মৎস্য ঘেরে বিষ প্রয়োগ করার কারনে বিপুল পরিমানে সাদা ও চিংড়ী মাছ মারা যাওয়ায় চাষিরা সর্বশান্ত হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।


সরেজমিনে লালচন্দ্রপুর গ্রামের গিয়ে দেখা গেছে, দু’তিনটি বিলের অধিকাংশ জমির মালিক মৎস্য ঘের করে তার ভিতর ধান ও ঘেরের পাড়ে সবজির চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। চোখ ধাঁধাঁনো ফসল দেখে মন ভরে যায়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, অজ্ঞাত দৃস্কৃতি চক্রের কারনে মৎস্য চাষিরা সময়মত তাদের ঘেরে মাছ ছাড়লেও তা ধরে বিক্রয় করতে পারছেন না। সর্বশেষ চলতি মাসের ১০ই অক্টোবর সোমবার গভীর রাতে একটি দৃস্কৃতিচক্র উক্ত গ্রামের মৃতঃ আফছার উদ্দিন শেখের পুত্র ও সরকারী কর্মকর্তা ওমর ফারুকের এক একর মৎস্য ঘেরে বিষ প্রয়োগ করে মাছ ধরতে শুরু করে। এসময় পার্শ্ববর্তী ঘেরের মালিক পাহারা দিতে আসলে তার টর্চের আলো দেখে দুটি বিষের বোতল, বিষের প্যাকেট একটি বস্তা ও একজোড়া স্যান্ডের রেখে অজ্ঞাত ঐ চোরচক্রটি পালিয়ে যায়। তাদের দেওয়া বিষের কারনে মৎস্য ঘেরে থাকা সকল সাদা ও চিংড়ী মাছ মারা গিয়ে প্রায় দু’লক্ষ টাকার ক্ষতি সাধন হয়।
পার্শ্ববর্তী মৎস্য ঘের মালিক ও সরকারী চাকুরী জীবি মোঃ হায়দার আলী বাচ্চু শেখ জানান, এর আগে একই গ্রামের মৃতঃ জামসেদ ফারাজীর পুত্র হাফিজুর ফারাজির ১একর মৎস্য ঘেরে বিষ প্রয়োগ করে দু’লক্ষ টাকার মাছের ক্ষতি, ওবায়েদ শেখের পুত্র মফিজ উদ্দিন শেখের দেড়বিঘার মৎস্য ঘেরে বিষ প্রয়োগ করে দেড় লক্ষ টাকার মাছের ক্ষতি, প্রফুল্ল রায়ের পুত্র বিকাশ রায়ের তিন বিঘার মৎস্য ঘেরে বিষ প্রয়োগ করে দু’লক্ষ টাকার মাছের ক্ষতি, রতন রায়ের পুত্র রিপন রায়ের দু’বিঘা মৎস্য ঘেওে বিষ প্রয়োগ করে দেড় লক্ষ টাকার মাছের ক্ষতি, ফজর আলীর পুত্র ফরিদ উদ্দিনের একবিঘার মৎস্য ঘেরে বিষ প্রয়োগ করে দেড়লক্ষ টাকার মাছের ক্ষতি, আব্দুলর আজিজের পুত্র শফিকুর রহমানের মৎস্য ঘেরে বিস প্রয়োগ করে মাছের ক্ষতি, মৃতঃ আশোক কুমার ধর এর পুত্র কালাচাঁদ ধরের মৎস্য ঘেওে বিষ প্রয়োগ করে মাছের ক্ষতি, আনোয়ার রহমান এর পুত্র মোস্তফা কামাল এর মৎস্য ঘেরে বিষ প্রয়োগ করে মাছের ক্ষতি, অমর কুমার রায়ের পুত্র গোলক রায়ের মৎস্য ঘেরে বিষ প্রয়োগ করে মাছ লুট, অধির কুমার দে’র পুত্র বিমল কুমার দে’র মৎস্য ঘেরে বিষ প্রয়োগ কওে মাছ লুট, মৃতঃ চেঙ্গ রায়ের পুত্র গুরুপদ রায়ের মৎস্য ঘেরে বিষ প্রয়োগ করে মাছের ক্ষতি ও মোঃ খলিলুর রহমানের পুত্র বায়োজিত রহমানের মৎস্য ঘেরে বিষ প্রয়োগ করে মাছ লুট ও ক্ষতি সাধন করা হয়।

ইউপি সদস্য ঢালী আব্দুল খালেক উপরোক্ত বিষয়ে সত্যতা স্বিকার করে বলেন, দীর্ঘ দু’তিন মাস ধরে একটি অজ্ঞাত চক্র ধারাবাহিক ভাবে বিভিন্ন বিলের মৎস্য ঘেরে একেরপর এক মৎস্য ঘেরে বিষ প্রয়োগ করা মাছ লুট ও ক্ষতি সাধন করেই চলছে, কিন্তু অজ্ঞত ঐ চক্রটি হাতে-নাতে আটক না হওয়ায় তারা বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত রয়েছেন। এ ব্যাপারে তারা উর্দ্ধতন পুলিশ কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত