প্রকৌশলীর ক্ষেতে মরুভূমির  ফল সাম্মামের বাম্পার ফলন, বছরে আয় ১৫ লাখ টাকা 

শেখ শাহিনুর ইসলাম শাহিন, মোল্লাহাট

আপডেট : ০৭:১১ পিএম, বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ৯৩৪

মোল্লাহাট উপজেলার মধুমতি নদীর পাড়ে চর উদয়পুর এলাকায় মরুভূমির ফল সাম্মাম চাষে সফলতা পেয়েছেন ফয়সাল আহমেদ নামের এক প্রকৌশলী। প্রতি আড়াই মাস পর পর মাত্র দেড় একর জমি থেকে সাড়ে চার লক্ষ টাকার সাম্মাম বিক্রি করেন তিনি। জমি প্রস্তুত, বীজ রোপন, মাচা তৈরি, আগাছা পরিস্কার, সার-ঔষধসহ সব ধরণের ব্যয় বহন করে বছরে অন্তত ১৫ লক্ষ টাকা আয় করেন তিনি। ফয়সালের সফলতায় এলাকার অনেকেই সাম্মাম চাষের আগ্রহ প্রকাশ করছেন। কৃষি বিভাগ বলছে সাম্মাম চাষে আগ্রহীদের প্রশিক্ষন ও কারিগরি সহযোগিতা করা হবে।



সরেজমিনে ফয়সালের খামারে গিয়ে দেখা যায়, বাস ও লাইলোনের সেতুর তৈরি মাচায় সবুজ লতাগুল্ম গাছে তরমুজ আকৃতির ফল ঝুলছে। চারিদিক থেকে পাকা সাম্মামের মৌ মৌ ঘ্রান আসছে। প্রতিটি সাম্মামের ওজন দুই থেকে তিন কেজি হয়ে থাকে। প্রতিকেজি সাম্মাম ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি পাইকারি বিক্রি করেন ফয়সাল। ক্ষেতের পরিচর্যা ও দেখভালের জন্য ১২ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করে এই খামারে।



প্রকৌশলী ফয়সাল বলেন, সাম্মাম অনেক পুষ্টিকর একটি ফল। আমাদের দেশে সাম্মামের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমার ক্ষেতে ফলনও ভাল হয়েছে। পাইকাররা ট্রাকে করে পার্শ্ববতি জেলা গোপালগঞ্জ ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্মাম নিয়ে যায়। প্রচুর শীত ছাড়া বছরের অন্যান্য সময়ে এই ফল চাষ করা যায়। রোপন থেকে শুরু করে, বিক্রি পর্যন্ত ৭৫দিন সময় লাগে। বছরে চারবার চাষ করা যায় এক জমিতে। প্রতিবার চাষ করতে সার, বীজ ও মাচা তৈরি করতে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। সাম্মাম ও অন্যান্য ফল মিলিয়ে ভালই আয় হয় আমার। এলাকার ১২ জন মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে আমার এখানে। এছাড়া মানুষকে সহযোগিতাও করার সুযোগ রয়েছে আমার। কারও উচু জমি থাকলে সাম্মাম চাষ একটা লাভজনক ব্যবসা হতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।



পরিচর্যায় নিয়োজিত শেফালি পোদ্দার বলেন, দুই বছর ধরে ফয়সালের খামারে কাজ করছি। এখান থেকে যা আয় করি তা দিয়েই ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনার পাশাপাশি সংসার চলে যায়।



সালাম শেখ নামের আরেক শ্রমিক বলেন, ১২ জন শ্রমিক এখানে কাজ করি। সাম্মামের পাশাপাশি বারোমাসি তরমুজ, বেগুন, পেঁপে ও আখসহ নানা ধরনের ফল উৎপাদন করা হয়। প্রতিদিন সকালে দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকারি ফল বিক্রেতারা এখান থেকে ফল কিনে নিয়ে যায়। প্রথম দিকে ফলন কম হলেও, ধীরে ধীরে আমাদের ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে।



ফয়সাল আহমেদের বাবা শেখ টিপু সুলতান বলেন, ফয়সাল যখন বললো, সে চাকুরী ছেড়ে দিয়ে কৃষি কাজ করতে চায়, তখন আমি বিরোধীতা করেছিলাম। পরবর্তিতে তার সফলতা দেখে তার সকল কাজে সার্বিক সহায়তা করছি



মোল্লাহাট উপাজেলা কৃষি কর্মকর্তা অনিমেষ বালা বলেন, সাম্মাম মূলত মরু অঞ্চলের ফল।আমাদের দেশে ফলটি সাম্মাম হিসাবে পরিচিতি পেলেও অনেকে এটাকে রকমেলন বা হানিডিউ মেলনও বলে। আমাদের দেশে এর খুব একটা চাষ হয় না। তবে অনেক কৃষক এখন বিদেশি এই ফল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। ফয়সাল আহমেদ বাগেরহাটে প্রথম বানিজ্যিক ভাবে ফলটির চাষ শুরু করেছেন। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাকে সব ধরণের কারিগরি সহযোগিতা করা হচ্ছে। আরও কেউ যদি সাম্মাম চাষ করতে চায়, তাহলে তাকেও আমরা সহযোগিতা করব।



মোল্লাহাট উপজেলার গাড়ফা গ্রামের শেখ টিপু সুলতানের বড় ছেলে ফয়সাল আহমেদ। খুলনা পলিটেকনিক থেকে ২০১০ সালে ম্যাকানিক্যাল ট্রেডে ডিপ্লোমা পাশ করে, বেসরকারি চাকুরী শুরু করেন। সর্বশেষ ২০২০ সালে ৪৫ হাজার টাকা বেতনের চাকুরী ছেড়ে বাড়িতে এসে চর উদয়পুর এলাকায় মধুমতি নদীর পাড়ে চাষাবাদ শুরু করেন। প্রথম দিকে নিজস্ব জমিতে বিভিন্ন সবজি চাষ করেন। পরবর্তীতে সাম্মাম চাষ শুরু করেন। প্রথম বছরেই সফলতা পাওয়ায়। জমির পরিমান বাড়াতে থাকেন। বর্তমানে দেড় একর জমিতে প্রায় ১০ হাজার সাম্মাম গাছ রয়েছে। এছাড়াও সাড়ে সাত একর জমিতে ৭ হাজার টমেটো, শতাধিক টপলেডি জাতের পেঁপে, ১৫‘শ ব্লাক বেবি বারোমাসি তরমুজ, ৩ হাজার ফিলিপাইনের কালো আখ, ৬‘শ বেগুন গাছ রয়েছে। এসবের পাশাপাশি বিভিন্ন জাতের আম, লিচু, কাঠালসহ নানা জাতের ফল গাছ রয়েছে ফয়সালের খামারে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত