বাগেরহাটে পানিবন্দি লাখো মানুষ, ভেঁসে গেছে ১৭ হাজার খামারের মাছ 

স্টাফ রিপোর্টার

আপডেট : ১০:২৩ পিএম, শুক্রবার, ৩০ জুলাই ২০২১ | ৮৫১

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে তিন’দিন ধরে বাগেরহাটে অবিরাম বৃষ্টিপাত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে কমে আসলেও উপকূলীয় এখনো পানিবন্দি হয়ে রয়েছে শরণখোলা উপজেলার ৭০ হাজারের অধিক মানুষসহ জেলার লাখো মানুষ। শরণখোলা উপজেলা প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে, উপজেলার ৯০ ভাগ মানুষ এখনো পানিবন্দি। পানিবন্দি হয়ে পড়া নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষদের শুকনা খাবার দেয়া হচ্ছে। উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের মধ্যে থাকায় ও নদীর পানিতে উচ্চতা থাকায় বৃষ্টির পানি নামতে না পারায় জলাবদ্ধতা কমছেনা।

শুক্রবার থেকে জেলার মোংলা, রামপাল, মোরেলগঞ্জ ও বাগেরহাট সদর উপজেলার নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করলেও এখনো এসব উপজেলায় ৭০ হাজারের অধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে রয়েছে। এদিকে উপকূলীয় বাগেরহাটে টানা বৃষ্টির পানিতে ১৭ হাজার চিংড়ি ঘের ও পুকুর ভেসে গেছে। এতে ক্ষতির পরিমান দাঁড়িয়েছে প্রায় ১১ কোটি টাকা বলে জানিয়েছে মৎস্য বিভাগ। গত তিন দিনের টানা বর্ষণে জেলার মোংলা, রামপাল, শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ ও বাগেরহাট সদর উপজেলাতে সবচেয়ে বেশি মাছের ঘের ভেসে গেছে। গত মে বাগেরহাটে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে জোয়ারের পানিতে ৬ হাজারের অধিক মাছের ঘের ভেসে যায়। সেসময়ে চাষীদের ক্ষতি হয় ৯ কোটি টাকার। বাগেরহাট জেলায় ছোটবড় ৬৭ হাজার মাছের ঘের রয়েছে। চলতি অর্থ বছরের ৩৩ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে চিড়িসহ পুকুর-খামারের মাছ অথৈই পানিতে ভেঁসে যাওযায় লক্ষ্যমাত্রা পুরণ নিয়ে শংঙ্কা দেখা দিয়েছে।


শরণখোলা উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা খাতুনে জান্নাত বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে জানান, শরণখোলা উপজেলাটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের মধ্যে থাকায় ও নদীর পানিতে উচ্চতা থাকায় বৃষ্টির পানি নামতে না পারায় জলাবদ্ধতা কমছেনা। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা বলা হচ্ছে জলাবদ্ধ পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা করতে। উপজেলার ৯০ ভাগ মানুষ এখনো পানিবন্দি হয়ে রয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়া নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষদের শুকনা খাবার দেয়া হচ্ছে। এছাড়া যাদের খাবার প্রয়োজন তারা ৩৩৩ নম্বরে ফোন করলে বাড়ীতে খাবার পৌছে দেয়া হচ্ছে।


বাগেরহাট জেলা চিংড়ি চাষী সমিতির সভাপতি ফকির মহিতুল ইসলাম বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, বাগেরহাটে টানা বৃষ্টির পানিতে কয়েক হাজার মাছের ঘের ভেসে গেছে। এতে ২০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে চাষীদের। গত কয়েক বছর ধরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেন উপকূলের মানুষদের গলারকাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই উপকূলীয় জেলার আশি ভাগ মানুষ মাছ চাষের উপর নির্ভরশীল। এই খাতের আয় দিয়ে তাদের সংসার চলে। বারবার দুর্যোগে মাছ চাষীরা সর্বশান্ত হয়ে যাচ্ছে। দেশের রপ্তানি আয়ের বড় ভূমিকা রাখে বাগেরহাট জেলা। অনেক চাষী ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঝণ নিয়ে মাছের চাষ করে থাকে। এই খাতকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের সাহায্য দরকার। সুদমুক্ত ঝণের ব্যবস্থা করতে সরকারের দাবি জানান এই চিংড়ি চাষী নেতা।


বাগেরহাট মৎস্য বিভাগের বিভাগীয় মৎস্য কর্মকর্তা (ডিএফও) এ এস এম রাসেল বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, গত দুই দিনের অতি বৃষ্টি ও প্রবল জোয়ারের পানিতে জেলার ৪৭টি ইউনিয়নে ১৭ হাজার চিংড়ি ঘের ও পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। সব মিলিয়ে মাছের ঘের ভেসে ১১ কোটি টাকার ক্ষতির হিসাব পেয়েছি। বৃষ্টিপাতের ধারা অব্যাহত থাকলে ক্ষতির পরিমান আরও বাড়তে পারে বলে আশংকা করছেন এই মৎস্য কর্মকর্তা।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত