প্রতিবাদ করলে হামলা-মামলা, করছে মারধরও, সেল্টার দিচ্ছে এলাকার প্রভাবশালীরা

মুক্তিযোদ্ধা আর সংখ্যালঘুদের হটিয়ে চিংড়ী ঘের এখন সন্ত্রাসীদের দখলে

মোংলা প্রতিনিধি

আপডেট : ০৬:০০ পিএম, সোমবার, ১৯ জুলাই ২০২১ | ৬৭২

মোংলায় একটি বড় চিংড়ী ঘের নিয়ে দু’গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ চলে আসছে বহুদিন থেকে। ক্ষমতার দাপটে এক গ্রুপ দখলে গেলে, হামলা আর সন্ত্রাসী দিয়ে অন্য গ্রুপ ঘেরটি দখলে নিচ্ছে। এ নিয়ে এলাকা ঝুড়ে দু’গ্রুপের মধ্যে চলছে উত্তেজনা, আসহায় আর নিরিহ মানুষের মাঝে বাড়ছে আতংঙ্ক। দখল ও লুটপাটের মধ্যে বাদ পরেনি মুক্তিযোদ্ধা ও সংখ্যালঘু পরিবারও। এঘটনায় দখলদার প্রভাবশালী সন্ত্রাসীদের ভয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিতে পারছেন না নিরিহ ভুক্তভোগীরা। এলাকায় এ চিংড়ী ঘের নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে চলছে ক্ষোভ ও উত্তেজনা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, মোংলা উপজেলার মিঠাখালী ইউনিয়নের খোনকারের বেড় মৌজায় ১৮০ একর ভুমিতে ২০ বছর ধরে ভুমি মালিকদের কাছ থেকে লিজ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা শাহ আলী, মোঃ মিজান ও নুরুল আমিনসহ এলাকার কিছু গন্যমান্য ব্যাক্তিরা মিলে চিংড়ি ও বিভিন্ন প্রজাতির সাদা মাছ চাষ করে আসছিলেন। ২০২০ সালে নতুন করে এ জমিতে অন্য কাউকে ভুমি মালিকগন লিজ না দিয়ে নিজেরাই একাত্রিত হয়ে যৌথভাবে মাছ চাষ শুরু করেন। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ওই মৎস্য ঘেরে ১৪ লক্ষ টাকার বাগদা ও সাদা মাছের পোনা ছেড়ে মাছ চাষ শুরু করেন তারা। কিছু দিন যেতে না যেতেই স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যাক্তি ও নব্য আওয়ামী যুবলীগ নেতা ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যানের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে ওই মৎস্য ঘেরের প্রতি। তিনি তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে এলাকার একের পর এক নিরিহ মানুষের উপর অহেতুক অত্যাচার নির্যাতন শুরু করে।

স্থানীয় বাসিন্দা ভুমির মালিক ও মিঠাখালী ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আঃ ওয়াদুদ শেখ, লিজ গ্রহীতা সোনাইলতলা ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আঃ সালাম, ভুমির মালিক হিন্দু সম্প্রদায়ের তুষার রায়, তিমির রায়, মিহির ও রমেন বালাসহ অনেকে অভিযোগ করেন, ঘেরটিতে এবছর প্রচুর বাগদা চিংড়ী মাছের ফলন হয়েছে। ভরাগোনের শেষের দিকে মাছ ধরার সময় আসার একদিন আগে গেল মাসের ১২ জুন রাতে অর্ধশত সন্ত্রাসী নিয়ে ওই মৎস্যঘেরের মাছ লুটপাট চালায় স্থানীয় ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান নব্য যুবলীগ নেতা আরিফ, টিপু, সাইফুল মোল্লার নেতৃত্বে আলম ফকির, আঃ রহমান, রুস্তুম শেখ, জোবায়ের সহ অর্ধশত সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে তাদের মৎস্য ঘেরের প্রায় ৪০ লক্ষ টাকার চিংড়ী মাছ লুট করে নিয়ে যায়।

এ ঘটনার পর পরই বহু মুল্যবান মৎস্যঘেরটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য টিপু হাওলাদার ও সাইফুল মোল্লাহ যুবদল থেকে খোলস পাল্টিয়ে নব্য আওয়ামীলীগ হয়ে রাতে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে স্থায়ীভাবে ঘেরটি দখলে নেয়। দখলের বিষয়ে কোথাও কোন অভিযোগ করলে বাড়ীতে থাকতে দেয়া হবেনা বলে হুমকি দেন এ সকল সন্ত্রাসীরা। একই সাথে অধিকাংশ ভুমি মালিকদের বাড়ীতে গৃহবন্দি করে রাখা হয় তাদের সন্ত্রাসী বাহিনীর লোকজন দিয়ে। এর ফলে ভুক্তভোগী ভুমি মালিকরা প্রশাসনের কাছে কোন অভিযোগ করতে পারেনি বলে জানান অসহায় হয়ে পড়া অনেকে।

এতে ওই চিংড়ী ঘেরের একাংশের স্থানীয় জমির মালিক শওকাত হোসেন শেখ ও মর্তুজা আলী প্রতিবাদ করলে ১৩ জুলাই রাত সাড়ে ৮টার দিকে আমড়াতলা বাজার থেকে বাড়ী আসার পথে আরিফ ফকিরের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী পুর্ব পরিকল্পনায় তাদের উপর হামলা চালায়। এসময় হাতুড়ী ও লোহার রড দিয়ে ওই দুই যুবককে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে উল্টো মোটরসাইকেল যোগে বাই সাইকেল চুরি করে পালানোর অপবাদ দেয় এ সন্ত্রাসী গ্রুপটি। আহতদের রক্তাক্ত অচেতন অবস্থায় সাইকেল চোর বলে পুলিশের হাতেও তুলে দেয় তারা। বাইসাইকেলের মালিক বনি আমিন নামের একজনকে সাজিয়ে থানায় একটি চুরির অভিযোগ দেয়। যার ফলে চটেরহাট পুলিশ তাদের আটক দেখাতে বাধ্য হয়।

কিন্ত সাইকেল চুরির বিষয়টি সন্দেহ হলে মোংলা থানার অফিসার ইনচার্জ ও এ এসপি সার্কেল ১৪ জুলাই ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও তদন্তে গেলে ঘটনা অন্য দিকে মোড় নেয়। পরে আহত দুই যুবককে ছেড়ে দিয়ে জনগনের চিংড়ী ঘের দখলের মুল পরিকল্পনাকারী প্যানেল চেয়ারম্যান যুবলীগ নেতা আরিফ ফকিরসহ ১১জনের নামে মামলা হয় মোংলা থানায়।


ঘের থেকে আরিফসহ অন্যান্য সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলেও ১২ ঘন্টার মাথায় আরেক দলীয় ক্ষমতাবান ঘেরটি দখলে নেয়। বর্তমানে ঘের দখলদার টিপুর বিরুদ্ধেও রয়েছে বহু অভিযোগ।

জমির মালিক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আঃ ওয়াদুদ শেখ বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, দখলদার আর দেশ বিরোধী পাকিস্থানীদের হটিয়ে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। অথচ স্বাধীন দেশে আজ আমরা মুক্তিযোদ্ধারা নিজ ভুমি রক্ষা করতে পারছিনা। সন্ত্রাসীদের কবল থেকে নিজ ভুমি আর জীবন রক্ষায় প্রশাসনের সহায়তা চান এই বীরমুক্তিযোদ্ধা ও অসহায় সংখ্যালঘু মানুষ গুলো।


তবে মৎস্য ঘের দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে সরকার দলীয় রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য নব্য আ’লীগ নেতা টিপু হাওলাদার বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে জানান, তাদের ওই মৎস্য ঘেরে ভুমির মালিকানা আছে। যারা মৎস্য চাষ করছিল, দীর্ঘদিন থেকে এ জমির কোন হারির টাকা বা মাছের কোন অংশ পায়নি তাই তারা গত ২০ দিন পুর্বে ঘের দখলে নিয়ে মাছ চাষ করছেন।


মোংলা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ইকবাল বাহার চৌধুরী বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে জানান, চুরি ঘটনা তদন্তে গিয়ে পেয়েছি অন্য ঘটনা। তাই যুবলীগনেতা আরিফসহ ১১জনের বিরুদ্ধে মামলা নেয়া হয়েছে। আসামীরা পলাতক রয়েছে তবে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। আর চিংড়ী ঘের দখলে বিষয়টি জমি যার ঘের তার এটাই নিয়ম তবে কেউ যদি জমির হাড়ির টাকা না দিয়ে জোর পুর্বক চিংড়ী ঘের দখল করে থাকে, তদন্ত চলছে এবং এ এসপি স্যারও বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছে, দোষিদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়া হবে বলে জানায় তিনি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত