চাহিদামতো মধু উৎকোচ না দেওয়ায়

সাত মৌয়ালকে হাত-পা বেধে মারধর করেছে বনরক্ষীরা

মহিদুল ইসলাম, শরণখোলা

আপডেট : ০৬:১৭ পিএম, শনিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২১ | ৮০২

অন্যসব বছরের তুলনায় এমনিতেই এবছর বনে মধু পাওয়া যাচ্ছে খুবই কম। প্রথম ট্রিপে চালান বাঁচবে না অনেকের। তার ওপর বনরক্ষীরা উৎকোচ হিসেবে মধু দাবি করছে দ্বিগুণ। প্রতিবছর মণপ্রতি এক কেজি করে দিলেও এবার তাদের চাহিদা দুই কেজি। এনিয়ে শুরু হয় বনরক্ষী-মৌয়ালদের মধ্যে দ্বন্দ্ব। একপর্যায়ে তুলকালাম কান্ড ঘটে যায়। প্রতিবাদী সাত জন মৌয়ালকে বেদম মারধর করে আটকে রাখে বনরক্ষীরা। পরে নিজেদের দোষ এড়াতে তাদের বিরুদ্ধে দেওয়া হয় বন মামলা। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার (১৬এপ্রিল) বিকেলে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের কোকিলমনি টহল ফাঁড়িতে।

এছাড়া, টহল ফাঁড়ির বনরক্ষীদের কাছে মৌয়ালদের গচ্ছিত রাখা এক লাখ ৫০ হাজার টাকা, প্রথম চালানে আহরিত প্রায় ৫০ মণ মধু এবং ৩০ হাজার টাকার বাজারসদায় তাও আত্মসাত করা হয়েছে। নির্যাতনের শিকার মৌয়ালদের বরাত দিয়ে তাদের স্বজনরা ওইদিন (শুক্রবার) রাতে শরণখোলা প্রেসক্লাবে এসে এসব অভিযোগ করেন।


আটক মৌয়ালদের মধ্যে পাঁচ জনের নাম জানা গেছে। এরা হলেন, উপজেলা সাউথখালী ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামের শহিদুল হাওলাদার (৩৫), সলেমান হাওলাদার (৩০), রফিকুল গাজী (৪০), আফজাল (৪৫) এবং রায়েন্দা ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের বেল্লাল হোসেন (২৮)।


এদিকে, মৌয়ালদের মারধর, টাকা, মধু, রসদ আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করেছে বনবিভাগ। তাদের অভিযোগ, বনের কর্তন নিষিদ্ধ গোলপাতাসহ গরাণ ও অন্যান্য কাঠ কাটে মৌয়ালরা। অবৈধভাবে কাঠ কাটার বিষয়ে জানতে চাওয়ায় তারা বনরক্ষীদের ওপর চড়াও হয়। এনিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বাকতিন্ডা হয়। পরে অনৈতিক কর্মকান্ডের দায়ে সাত জনকে আটক করে তাদের বিরুদ্ধে বন আইনে মামলা দায়ের করা হয়।


জানা গেছে, শরণখোলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের সমস্ত মৌয়াল মধু সংগ্রহে যাওয়ার সময় তাদের সঙ্গে থাকা টাকাপয়সা, রসদসামগ্রী সবই কোকিলমনি টহল ফাঁড়িতে গচ্ছিত রেখে যান। এসময় কোকিলমনি ফাঁড়ির পুকুরে মিষ্টি পানি ড্রাম ভরে নিয়ে যান মৌয়ালরা। আবার মধু সংগ্রকৃত সমস্ত মধু এনে মজুদ করেন ওই ফাঁড়িতে। এজন্য মৌয়ালরা প্রতিমণে এক কেজি করে মধু দিয়ে থাকেন বনরক্ষীদের। কিন্তু এবার তারা দুই কেজি করে মধু দাবি করেন। এনিয়ে সৃষ্টি হয় দ্বন্দ্ব।


বনবিভাগের হাতে আটক মৌয়াল শহিদুলের স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন, রফিকুলের স্ত্রী নাছিমা বেগম, সলেমানের স্ত্রী তাসলিমা বেগম, আফজালের স্ত্রী খাদিজা বেগম জানান, মোবাইল ফোনে তাদের স্বজনরা জানিয়েছে বনরক্ষীরা এবার তাদের কাছে মণপ্রতি দুই কেজি করে মধু দাবি করছে। এনিয়ে কথা কাটাকাটির হলে বনরক্ষী রিয়াজ তার সহকর্মীদের নিয়ে শহিদুলকে ধরে এলোপাতাড়িভাবে মারতে থাকেন। এসময় অন্য মৌয়ালরা এগিয়ে গেলে তাদেরকে মারধর করেন বনরক্ষীরা। ঘটনাটি জানতে পেয়ে ফাঁড়িসংলগ্ন কোস্টগার্ড স্টেশনের সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।

আটকদের বরাত দিয়ে স্বজন আরো জানান, তাদের হাত-পা বেধে মারধর করাসহ বিভিন্ন প্রকার শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। এমনকি আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা বা খাবার পর্যন্ত দেয়নি তারা। পরে বনরক্ষীরা সাত জনকে আটক করে তাদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন। এছাড়া, ফাঁড়িতে মজুদ রাখা ৫০মণ মধু, নগদ দেড় লাখ টাকা, ৩০হাজার টাকার বাজারসদায় ফেরত দিতেও অস্বীকার করে বনরক্ষীরা।


জানতে চাইলে পূর্ব বন বিভাগরে শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদীন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, মৌয়ালদের মারধর বা মধু আত্মসাতের বিষয়টি সঠিক নয়। মৌয়ালরা অভয়ারণ্যে প্রবেশ করে গোলপাতা ও জ্বালানি কাঠ কাটায় তাদেরকে আটক করে বন আইনে মামলা দেওয়া হয়েছে। তারপও এব্যপারে আরো তদন্ত করে দেখা হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত