মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে আনন্দ

তালার জালালপুর বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ

তালা প্রতিনিধি

আপডেট : ০৯:৪০ পিএম, মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২০ | ১০৪১

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযোদ্ধা চলাকালে ১৫ আগষ্ট রাতে রাজাকার আলবদর ও পাকিস্থানী হানাদার বাহীনি কর্তৃক সাতক্ষীরা তালা উপজেলার জালালপুর গ্রামের ইউনিয়ন পরিষদের সামনে কপোতাক্ষোর পাড়ে বধ্যভুমিতে নাম জানা ১৮ জনসহ না জানা আরো অনেকে নিরিহ মানুষকে হত্যা করে।কিন্তু দেশ স্বাধীনের পরে জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনের বধ্যভুমিতে নিহতদের স্মরণে কোনো স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়নি।

তালা উপজেলাসহ জালালপুর ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি সংরক্ষন কমিটির এই বধ্যভুমিতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মানের দাবী জানিয়ে আসছিলেন। ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি সংরক্ষন কমিটির কমিটির দাবীর প্রেক্ষিতে ২০০৭ সালে ইউপি চেয়ারম্যান সরদার রফিকুল ইসলাম ইউনিয়ন পরিষদে একটি রেজুলেশন করা হয়। সাথে সাথে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে পতাকা ষ্ট্যান্ডার্ডের পাশে একটি স্মৃতি ফলক নির্মান করা হয়। সেই থেকে সরকারি ভাবে ২৫ মার্চ এই স্মৃতি ফলক বেদিতে পুস্পস্থপক অর্পন করে আসছেন ।
এরই ধারা বাহিকতায় বর্তমান সরকারের বধ্যভূমি সূমহ সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ (২য় পর্যায়ে ) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা ব্যায়ে জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদেও সামনে কপোতাক্ষ পাড়ে দীর্ঘদিন অরক্ষিত গণকবরটি সংরক্ষনে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হচ্ছে।


সাতক্ষীরার তালা উপজেলার জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে দীর্ঘদিন অরক্ষিত বধ্যভূমিটি স্মৃতিস্তম্ভতে রুপ নেওয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে আনন্দ ফিরে এসেছে। প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা ব্যায়ে সাতক্ষীরার ঠিকাদারী প্রতিষ্টাণ মেসার্স শফি এন্টারপ্রাই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ কাজটি বাস্তবায়ন করছেন। সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট মুস্তফা লূৎফুল্লাহ ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর এ বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করনে।বর্তমানে কাজের ৭৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।

তালা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি সংরক্ষন কমিটির একটি সূত্র জানায়, ১৯৭১ সালের ১৫ আগষ্ট রাতে তালা উপজেলার জালালপুর গ্রামে রাজাকার আলবদরের বুলেটে নিহত হন ১৮ জনসহ অনেকে। এরা হলেন-শ্রীমন্তকাটি গ্রামের শহীদ আব্দুল বারী (২৮) কৃষ্ণকাটি গ্রামের বদির শেখ (৩২), জালালপুর গ্রামের অন্নদা সেন (৮৫), আছিয়া বিবি (৪৫), অনিমা দাশ (২৬), দিপংকর দাশ (১), দুলাল চন্দ্র বর্ধন (১৫), হরিপদ ঘোষ (৭৫), অধীর চন্দ্র ঘোষ (৬৫), সাহেব সেন (৩০), উমাপদ দত্ত (৪০), বাদল প্রমানিক (৫০), অশোক প্রমানিক (৩৫), মোবারক মোড়ল (২০) সহ নাম না জানা আরও অনেকেই নিহত হন।


সাতক্ষীরার জেলা ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি উপাধ্যক্ষ মহিবুল্লাহ মোড়ল বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, ১৯৭১ সালের ১৫ আগষ্ট রাতে তার বাবা আব্দুল বারী সহ ১৮ জন শহীদ হন। কিন্তু স্বাধীনতার পরে জালালপুর ইউনিয়নে বধ্যভূমিতে ঐ গনহত্যার কোন স্মৃতি সংরক্ষন করা হয়নি। দীর্ঘদিন বধ্যভুমিটি অবহেলিত ছিলো। বর্তমানে স্থানীয় সংসদ সদস্যের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান করা হচ্ছে।


জালালপুর বধ্যভূমি স্মৃতি সংরক্ষন কমিটির আহবায়ক যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মোড়ল আব্দুর রশিদ বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, ১৯৭১ সালে ১৮ জন শহীদের মধ্যে অনিমা দাশ নামে একজন গৃহবধু মারা যান। তার সাথে থাকা এক বছরের শিশু দিপংকর দাশ হানাদারদের গুলিতে নিহত হয়। কিন্তু কোনো বধ্যভূমি ছিলো না এখানে। দীর্ঘদিন অরক্ষিত থাকা বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ রুপ নেওয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে আনন্দ ফিরেছে। বর্তমানে বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ নির্মাণাধীন এ-স্মৃতিস্তম্ভ দেখতে আসছেন।


তালা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি সংরক্ষন কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রজিত দাশ বাপি বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, ২০০৭ সালে কমিটির দাবীর প্রেক্ষিতে জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের রেজুলেশন করে তৎকালিন ইউপি চেয়ারম্যান সরদার রফিকুল ইসলাম ইউনিয়ন পরিষদের সামনে পতাকা ষ্ট্যান্ডার্ডের পাশে স্মৃতি ফলক নির্মান করেন। সেই থেকে সরকারি ভাবে ২৫ মার্চ এই বেদিতে পুস্পস্থপক অর্পন করা হয়।



জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য পলাশ কুমার ঘোষ বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, নিজস্ব অর্থায়নে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি সংরক্ষন কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রজিত দাশ বাপি বধ্যভূমির খাল ও ডুবা ভরাট করেন। সেখানে বর্তমানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান করা হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এ বধ্যভূমিতে নির্মাণাধীন স্মৃতিস্তম্ভ দেখতে আসছেন।


জালালপুর ইউনিয়নের চেয়াম্যান এম মফিদুল হক লিটু বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, দীর্ঘদিন ইউনিয়ণ পরিষদের সামনে একটি ছোট স্মৃতিস্তম্ভ ছিলো। বর্তমানে সরকার নতুন করে বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান করায় এলাকার মানুষ খুবই খুশি হয়েছেন। তবে এখানে সরকারি সম্পত্তি থাকায় একটি দর্শনীয় পার্ক হলে আরও মানুষের সমাগম বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।

তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইকবাল হোসেন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, কাজটি দ্রুত এগিয়ে চলেছে। এতে স্থানীয় এলাকাবাসিসহ মুক্তিযোদ্ধারা খুশি হয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত