সংকেত হলেই

ঘূর্ণিঝড় আতঙ্কে জেলে ও উপকুলীয় মানুষের কাটে নির্ঘূম রাত

মো.মাসুদ রানা,মোংলা

আপডেট : ০৬:৩৫ পিএম, শনিবার, ১৩ জুন ২০২০ | ৮২২

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি ঘনিভুত হওয়ায় মোংলাসহ সুন্দরবন উপকুলবাসীর মাঝে ঘুর্নিঝড় হওয়ার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দু’দিন ধরে লাগাতার ভারী বর্ষণ ও স্বাভাবিকের তুলনায় জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপকুলের ওয়াপদা ও বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ার ভয়ে বড় ধরনের ঘূর্নিঝড়ের আশংকায় উপকূলের ল ল মানুষের নির্ঘূম রাত কেটেছে। অপরদিকে সল্প সময়ের জন্য মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা তাদের নৌকা ও ট্রলার নিয়ে সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী ও খালে নিরাপদে এবং এলাকায় ফিরে এসেছে।

সাগরে লঘুচাপ সৃস্টি হওয়ার ফলে শুক্রবার থেকে শনিবার রাত পর্যন্ত প্রচন্ড বাতাস আর বর্ষনে সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকার নিম্নাঞ্চলের মানুষ কিছুটা আতংকিত হয়। এছাড়া জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়ে রাস্তাঘাট, শহর এলাকায় রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় মানুষের মাঝে নতুন করে ভীতি সৃষ্টি করে। শুক্রবার ও শনিবার ভোর রাতে উপকূলীয় এলাকার লাধিক মানুষ ভয়াবহ ঘূর্নিঝড়ের আশংকায় রাত জেগেছিল। এ দিকে দুর্যোগপুর্ন আবহাওয়ার খবরের কারনে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত বহাল রাখায় সতর্ক অবস্থায় মোংলা সমুদ্র বন্দর। তবে শনিবার সকালের পালা থেকে কোম্পানীরা জাহাজের পন্য খালাস-বোঝাইয়ের জন্য শ্রমিকের গ্যাং বুকিং করলেও চিন্তিতছিল বন্দর ব্যাবহারকারীরা ও ইষ্টিভিডরস মালিকরা। আকাশ মেঘাচ্ছন্য ও বৃস্টি থাকায় বন্দরের পন্য খালাস-বোঝাই কাজ কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। হারবার সূত্র জানিয়েছে, পন্য খালাস বোঝাই কাজের জন্য বন্দর চ্যানেল ও জেটিতে পন্য খালাসের অপেক্ষায় দেশী-বিদেশী ১২টি বানিজ্যিক জাহাজ অবস্থান করছে।

উপকূলীয় সুন্দরবন সংলগ্ন মংলার জয়মনি গ্রামের আলতাফ মিয়া ও ছলেমান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, সিডর, আইলায়, বুলবুল ও সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘুর্নিঝড় আম্পানে বিধ্বস্থ এলাকার মানুষ আকাশ গুমোট দেখলেই আতঙ্কে পড়ে। এরমধ্যে এবছর রেকর্ড ছাড়িয়ে বৃষ্টি ও পশুর নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় যেন ঘুর্নিঝড়ের হার মানিয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘুর্নিঝড় আম্পান আর নদী উওাল ঢেউয়ের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকা সুন্দরবন সংলগ্ন জেলে ও বসবাসকারীদের দুর্দশার সীমা নেই। পশুর ও শ্যালা নদী সংলগ্ন মোংলা উপজেলার বুড়িরডাঙ্গা, কানাইনগর, চিলা ও জয়মনির ঘোলে প্রায় ১৫/২০ হাজার জেলে পরিবার বসবাস।

সম্প্রতি ঘুর্নিঝড় আম্পানে কেড়ে নিয়েছে তাদের বেঁেচ থাকার শেষ সম্বলটুকু। মৎস্য বিভাগের হিসাব মতে এ সকল এলাকায় ১৮/২০ হাজার জেলে থাকলেও সরকারী নিবন্ধিত রয়েছে ৬ হাজার ৬৫৫ জন জেলে। এছাড়া উপজেলায় ইউনিয়নগুলোতে ক্ষতি হয়েছে ১০ হাজারেরও বেশী পরিবারের এবং ১৮ কিলোমিটারেরও বেশী বেড়ীবাধ ভেঙ্গে নদীতে বিলিন হয়ে যায় বলে জানায় উপজেলা প্রশাসন। গত মাস থেকে ২ মাসের জন্য সুন্দরবনে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় নিবন্ধিত জেলেদের জন্য চাল বরাদ্ধ হলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। আর ঘুর্নিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত জেলেসহ অন্যান্যদের তালিকা তৈরী করলেও তা কবে নাগাত আলোর মুখ দেখবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই বলে জানায় উপকুলবাসী।

এছাড়া যারা ঘরবাড়ী হারিয়েছে তাদের কবে নাগাত পুর্নবাসন করা হবে তাও ঠিক করে বলতে পারছেন না কেউ। ঘুর্নিঝড়ের সময় জীবন বাচাতে আশ্রায় নেয়া জেলের জাল, নৌকাসহ সব কিছুই কেড়ে নিয়ে ঘুর্নিঝড় আম্পানে। নদীতে মাছধরা অবস্থায় সংকেত পেয়ে ফিড়ে আসলেও আশ্রয় কেন্দ্রের অভাবে আশ্রয় নিয়ে খাদ্য গুদাম সাইলোতে কিন্ত আম্পানে কেড়ে নিয়ে মাথা গোজার ঠাইটুকুও।

চিলার ইউনিয়নের জয়মনি এলাকার মোঃ হান্নান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, বয়সে এত নদীর পানি বৃদ্ধি আর কখনও দেখিনি। এই উপকূলের মানুষ বার বার তিগ্রস্থের শিকার হয়েও এক অজানা আতঙ্কে ভূগতে থাকে তারা। আমাদের এই এলাকা কোন ক্রমেই নদীর পাড় রা করা দুরুহ হয়ে পড়েছে।

সাগর থেকে পশুর নদী হয়ে ফিরে আসা ফিশিং ট্রলারের মাঝি শাখাওয়াত হোসেন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, গত ৩ দিন ধরে সাগরে প্রচন্ড ঢেউয়ের কারণে জাল পাতা সম্ভব হয়নি। সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় পানি ঢুকে পড়ায় বন্যপ্রানী গুলো মাটির টিলায় ও উচু জায়গায় আশ্রয় নিতে দেখা গেছে। শত শত মাছ ধরা ট্রলারগুলো লোকালয়ে ফিরে এসেছে। এবার এই ভয়াবহ পানি বৃদ্ধি ও অতি বর্ষনের কারণে সকলের মাঝেই একটি নতুন করে ঘূর্নিঝড়ের আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে, যার নাম আম্পান।

উপূলীয় এলাকার মোংলা পশুর নদীর তীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারী মানুষগুলো আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছে, কখন জানি আঘাতহানে নতুন ঘূর্নিঝড়ে রুপনিয়ে। তবে আবহাওয়া অফিসের বড়ধরনের কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগের বিপদ সংকেত না থাকার পরও অজানা ভীতি কাজ করছে তাদের মাঝে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত