টিউশন পড়িয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে দিনমজুরের ছেলে শুভ

টাকার অভাবে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন অনিশ্চিত

মহিদুল ইসলাম, শরণখোলা

আপডেট : ০৬:৪৪ পিএম, রোববার, ৭ জুন ২০২০ | ৭৬৮

জিপিএ-৫ পেয়েছে দিনমজুরের ছেলে শুভ

প্রাইভেট পড়ানো তো দুরের কথা, স্ত্রী-সন্তানদের তিন বেলা খাবার যোগান দিতেই হিমসিম খেতে হতো দিনমজুর বাবার। তাই পঞ্চম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়া শুভ মিস্ত্রি বাবার কষ্ট দেখে সেই ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই তার নিচের কাসের ছাত্র-ছাত্রীদের টিউশনি করাতে শুরু করে। এ থেকে যা টাকা পেতো তা দিয়ে নিজের পড়াশুনা চালিয়েছে। সংসারে অভাব-অনটন তবুও দমে যায়নি। অদম্য ইচ্ছেশক্তি আর চেষ্টা আজ তাকে সফলতা এনে দিয়েছে। শত কষ্টের মাঝেও এবার এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে সে।

বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা ধানসাগর ইউনিয়নের পূর্ব আমড়াগাছিয়া গ্রামের হতদরিদ্র দিনমজুর বিরাংশু মিস্ত্রি ও রিনা রাণী দম্পতির পাঁচ সন্তানের হারাধন একমাত্র ছেলে শুভ মিস্ত্রি। আমড়াগাছিয়া বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭১জন পরীক্ষার্থীর মধ্য থেকেও একমাত্র জিপিএ-৫ প্রাপ্ত সে। তার স্বপ্ন ডাক্তার হওয়ার। কিন্তু টাকার অভাবে তার সেই স্বপ্ন পুরণ এমনকি কলেজে ভর্তিও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

পঞ্চম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়া শুভ মিস্ত্রি বলে, প্রাইভেট পড়তে না পারায় জেএসসিতে অল্পের জন্য জিপিএ-৫ পাইনি। সংসারে অভাব। তিন বেলা খাওয়ার নিশ্চয়তা ছিল না। তাই কাস সিক্স থেকেই আমার নিচের কাসের ছাত্র-ছাত্রীদের টিউশনি করিয়ে পড়ার খচর যুগিয়েছি। টিউশনির ফাঁকে যে সময় পেতাম সেটুকু নিজে পড়েছি। বাবার প্রাইভেট পড়নোর সামর্থ ছিলনা। নিজের টিউশনির টাকা দিয়ে পরীক্ষার আগে দুই মাস শুধুমাত্র ম্যাথের প্রাইভেট পড়েছি। নিয়মিত প্রাইভেট পড়তে না পারলেও স্কুলের শিক্ষকরা পরামর্শ দিয়ে যথেষ্ট সহযোগীতা করেছেন। তাই এসএসসিতে ভালো রেজাল্ট করতে পেরেছি। আমার ইচ্ছা ভবিষ্যতে ডাক্তারি পড়ার। কিন্তু বাবার সেই খরচ দেওয়ার সামর্থ নেই।

শুভর বাবা বিরাংশু মিস্ত্রি বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, আমার চার মেয়ের পর একমাত্র ছেলে শুভ। ছোটবেলা থেকেই ও মেধাবী। টাকার অভাবে ছেলেকে প্রাইভেট পড়তে দিতে পারিনি। নিজের চেষ্টায় সে এ পর্যন্ত এসেছে। শিক্ষকরাও সহযোগীতা করেছেন। ছেলের ইচ্ছা সে ডাক্তার হবে। কিন্তু এখন কলেজে ভর্তির টাকা জোগাড় করাও আমার পক্ষে অসম্ভম। মাত্র পাঁচ কাঠা বাড়ির জমি ছাড়া আর কোনো জমিজমা নেই। করোনার এই সময় কাজকামও নেই। বর্তমানে সংসার চালাতেই কষ্ট। ছেলেকে ডাক্তারি পড়াবো বিভাবে!

শুভর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সরোয়ার হোসেন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, দরিদ্র পরিবারের সন্তান শুভ খুব মেধাবী ছাত্র। এবার আমার বিদ্যালয় থেকে ৭১জন পরীক্ষা দিয়েছে। এর মধ্যে একমাত্র শুভই জিপিএ-৫ পেয়ে বিদ্যালয় ও আমাদের সবার মুখ উজ্জল করেছে। সবার সহযোগীতা পেলে সে উচ্চ শিক্ষায় সফল হবে। তার সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করি।


দিন মজুর বিরাংশু মিস্ত্রি ও মা’ রিনা রাণী মিস্ত্রি ছেলের স্বপ্ন পুরণে সমাজের বিত্তবানদের সহযোগীতা চেয়েছেন। কোনো হৃদয়বান ব্যক্তি সহযোগীতা করতে চাইলে ০১৪০৫৩৫৩৩০৬ এই নম্বরে যোগাযোগের অনুরোধ জানিয়েছে শুভর পরিবার।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত