টাকা,সোনাদানা,গুরু-ছাগল,হাঁস-মুরগি,ভ্যান-ইজিবাইক, সোলার,ব্যাটারী,ঘেরের মাছ লুটে নেয় চোরেরা

করোনার লকডাউনে শরণখোলায় শতাধিক চুরি

মহিদুল ইসলাম, শরণখোলা

আপডেট : ০৬:৪৪ পিএম, শুক্রবার, ৫ জুন ২০২০ | ৮৭৬

করোনার লকডাউনের মধ্যে বাগেরহাটের শরণখোলায় চুরির হিঁড়িক পড়েছে। সিঁধ কেটে টাকা-পয়সা, সোনাদানা থেকে শুরু করে গৃহস্থের গুরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, ভ্যান-ইজিবাইক, সোলার প্যানেল, ব্যাটারী এমনকি ঘেরের মাছ পর্যন্ত লুটে নিচ্ছে চোর ও দুর্বৃত্তরা। এনিয়ে, গত ২৫এপ্রিল লকডাউনের শুরু থেকে দুই মাসে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ও হাটবাজারে শতাধিক চুরির ঘটনা ঘটেছে।

চোরের উপদ্রব বৃদ্ধি পাওয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী। চোর ঠেকাতে রাত জেগে পাহারাও দিচ্ছে গ্রামের মানুষ। এভাবে একের পর এক চুরির ঘটনা ঘটলেও প্রশাসনের এব্যাপারে কোনো তৎপরতা না থাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে মানুষের মধ্যে। এতে এলাকার আইনশৃঙ্খলারও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। উপজেলার চারটি ইউনিয়নের সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাধ্যমে এসব চুরির তথ্য পাওয়া গেছে।

তবে, শরণখোলা থানা পুলিশ চুরির বিষয়টি স্বীকার করতে নারাজ। তারা বলছে, দু-একটি ছিঁচকে চুরির ঘটনা ঘটলেও এনিয়ে থানায় কেউ অভিযোগ করেনা।

বুধবার (৩জুন) একরাতে পর পর পাঁচ বাড়িতে সিঁধ কেটে চোরেরা সোনাদানা, মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে। খোন্তাকাটা ইউনিয়নের পশ্চিম রাজৈর গ্রামে বুধবার রাত তিনটার দিকে ইউনুচ মোল্লার ঘরে সিঁধ কেটে তার স্ত্রীর গলায় থাকা পাঁচ আনা ওজনের সোনার চেইন ও ১০হাজার টাকা দামের একটি মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। একই রাতে আলামিন হাওলাদারের ১০হাজার টাকা দামের মোবাইল ফোন, শামিম হাওলাদারের ৮হাজার টাকার মোবাইল ফোন, জাহাঙ্গীর আলম বাচ্চুর বাড়ির জানালার পাশে থাকা ১৫হাজার টাকা দামের মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। ওই রাতে দুলাল শিকদারের ঘরে সিঁধ কাটার সময় লোকজন টের পাওয়ায় চোরেরা পালিয়ে যায়।

ধানসাগর ইউনিয়নের উত্তর ও দক্ষিণ বাধাল গ্রামে কয়েকটি চুরি হয়েছে। গত ২জুন রাতে বিপুল হালদারের ৭০হাজার টাকা দামের অটোভ্যান নিয়ে যায়। এর আগে হানিফ সরদারের বাড়িতে সিঁধ কেটে ১০হাজার টাকা ও একজোড়া সোনার কানের দুল, বাশার সরদারের ৩৫হাজার টাকা দামের মোবাইল, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের রাতে মোস্তফা হাওলাদারের অটোভ্যান ও আলতাফের ইজিবাইকের ব্যাটারী নিয়ে যায় চোরেরা।

ঈদের আগের দিন ২৪মে রাতে রাজাপুর বাজারে সালাম সরদারের কাপড়ের দোকানের শার্টার ভেঙে টাকা-পয়সা ও কাপড়সহ তিন লাখ টাকার মালামাল এবং রেজাউলের দোকানের তালা ভেঙে ৫০হাজার টাকার মালামাল লুটে নেয়। একই রাতে রায়েন্দা ইউনিয়নের খাদা গ্রামের নূরুল ইসলাম হাওলাদার ও মাসুম হাওলাদারের বাড়িতে সিঁধ কেটে স্বর্ণালঙ্কারসহ লক্ষাধিক টাকার মালামাল নিয়ে যায় চোর।

গত ৩০মে রাতে সংঘবদ্ধ একটি চক্র মঠেরপাড় গ্রামে আ. রশিদ আকন, সিদ্দিক হাওলাদার, মুক্তা তালুকদার এবং নলবুনিয়া গ্রামের আনিস খার বাড়িতে সিঁধ কেটে ঘরে ঢুকে মালামাল লুটের চেষ্টা চালায়। এসময় ঘরের লোকজন টের পাওয়ায় চোরেরা পালিয়ে যায়। ২১মে রাতে নলবুনিয়া হিন্দুপাড়ায় শাহজাহান আকনের বাড়িতে সিঁধ কেটে ঘরে ঢুকতে না পেরে তার গোয়ালে থাকা দুটি গরু নিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন টের পেয়ে ধাওয়া করলে মাঠের মধ্যে গরু ছেড়ে দিয়ে পালায় চোরেরা। ওই রাতে সাউথখালী ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রাম থেকে সোহরাব মল্লিকের ৬০হাজার টাকা দামের একটি গরু নিয়ে যায়।

১০-১২দিন আগে ধানসাগরের হোগলপাতি গ্রামে ফারুক মোল্লার পুকুরের ৫০হাজার টাকার মাছ এবং হুমায়ুন কবিরর ঘেরের দেড় লাখ টাকার মাছ ধরে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ভিক্ষুক বেগম মোল্লার ঘরের সোলার প্যানেল-ব্যাটারী চুরি করে নিয়ে যায়। আমড়াগাছিয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা অজিৎ কির্তনিয়ার বাড়িতে সিঁধ কেটে জমির দলিলসহ ২৫হজার টাকার মালামাল নিয়ে যায়। এছাড়া, মজিবর মাতুব্বর, ইব্রাহীম ও শামছুর ইজিবাইকের ব্যাটারী খুলে নিয়ে যায়। যার মূল্য প্রায় দেড় লাখ টাকা।

প্রথম রমজানে খোন্তাকাটার রাজৈর গ্রামে ছাত্রলীগ নেতা আসাদ হাওলাদারের বাড়িতে সিঁধ কেটে দেড় লাখ টাকা, স্বর্ণাঙ্কারসহ প্রায় ৫লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যায় চোরেরা।

মাসখানের আগে ধানসাগর ইউনিয়নের ছইলাবুনিয়া গ্রামের শশধর ওঝার বাড়িতে সিঁধ কেটে জমির কাগজপত্র, আনোয়ার খান ও হাশেম হাওলাদারের তিন লাখ টাকা দামের দুটি ইজিবাইক, হোগলপাতি গ্রামের সেলিম শেখের ৫০হাজার টাকা দামের ইজিবাইকের ব্যাটারী, কিশোর হালদারের ৮০হাজার টাকা দামের একটি ও কালিবাড়ি গ্রামের মাসুম হাওলাদারের দুই লাখ টাকা দামের ৪টি গরু, পূর্ব রাজাপুর গ্রামের ৪০হাজার টাকা দামের একটি গরু, ধানসাগর গ্রামের আজিজ হাওলাদার, বিমল মন্ডল, বাওড় গ্রামের ডালিমের ইজিবাইক ও সোলার ব্যাটারী, রাজাপুর গ্রামের শিক্ষক সন্তোষ হালদারের বাড়ি সিঁধ কেটে ৫০হাজার টাকাসহ দেড় লাখ টাকার মালামাল, পান্না লালা মৈত্রের দুই লাখ টাকার, শুকুমার শিকদারের এক লাখ টাকার, হোগলপাতি ফরাজী বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তালা ভেঙে সোলার প্যানেল, ব্যাটারী, বাচ্চাদের চারু-কারু সরঞ্জামসহ লক্ষাধিক টাকার মালামাল এবং রায়েন্দা ইউনিয়নের উত্তর কদমতলা গ্রামের কবির হাওলাদাদারের একটি অটোভ্যান নিয়ে যায় চোরেরা।

এছাড়া, সাউথখালী ইউনিয়নের রায়েন্দা-তাফালবাড়ী গ্রামে রফিকুল হাওলাদারের বাড়িতে সিঁধ কেটে সোনাদানাসহ প্রায় তিন লাখ টাকার মালামাল, উত্তর সাউথখালী গ্রামে দুলাল খান, হাকিম খান ও আমির হাওলাদারের বাড়ি থেকে মোবাইলসহ মালামাল নিয়ে যায়। ওই গ্রামের মানুষ চুরি ঠেকাতে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে বলে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. সাইফুল হালিম শাহ বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানিয়েছেন।

এব্যাপারে শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসকে আব্দুল্লাহ আল সাইদ বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, চুরির বিষয়ে এখন পর্যন্ত থানায় কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। ছোটখাটো দু-একটি চুরির খবর শুনেছি। মাদকসহ এসব অপরাধ প্রবনতা ঠেকাতে শিগগিরই এলাকাভিত্তিক প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত