প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে

যশোর শিক্ষাবোর্ডের অনলাইন প্রশ্ন ব্যাংক

জিএম মিজানুর রহমান

আপডেট : ০৪:০৬ পিএম, সোমবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭ | ১৫১৫

যশোর শিক্ষাবোর্ডের অন-লাইন প্রশ্নপত্রে একযোগে বোর্ডের আওতাধীন সকল বিদ্যালয়ে এসএসসি নির্বাচনী পরীক্ষা গ্রহণ করায় সারা দেশের ন্যায় বাগেরহাটে ও ব্যাপক সাড়া পড়েছে। সুনামের পাশাপাশি এই উদ্ভাবন পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে সকল পাবলিক পরীক্ষা গ্রহণের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। এতে প্রশ্ন ফাঁসের সম্ভবনা নেই বললেই চলে।


সংশ্লিষ্ট সূত্রটি জানায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মতে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সকল পরীক্ষায় শিক্ষকদের তৈরিকৃত প্রশ্নে পরীক্ষা নেবার কথা থাকলেও অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমিতির প্রশ্নে পরীক্ষা গ্রহণ করে আসছিল। এছাড়া বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তৈরিকৃত সমিতির প্রশ্নে অনেকক্ষেত্রে ভুল থাকে। সিলেবাস অনুসরণ করা হয় না। গাইড থেকে সরাসরি প্রশ্ন তুলে দেওয়া হতো। হাতে গোনা কয়েকটি স্কুল নিজস্ব তৈরিকৃত প্রশ্নে পরীক্ষা নিতো।

অনেকক্ষেত্রে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটে থাকতো। প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে ২০১৫ সালে শিা মন্ত্রণালয়ের তৎকালিন সচিব ছিলেন নজরুল ইসলাম খানের পরামর্শক্রমে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, যশোর অন-লাইন প্রশ্নপত্র প্রনয়ণের কথা ভাবেন এবং যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিা বোর্ডের পরীা নিয়ন্ত্রক মাধব চন্দ্র রুদ্র ২১ জুন এ-সংক্রান্ত ফাইলে স্বার করেন। ২০১৫ সালের ‘প্রশ্নব্যাংক’-এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হলেও ২০১৬ সাল থেকে পরীামূলকভাবে এটি চালু করা হয়।

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, যশোর প্রথম পর্যায়ে পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি স্কুলকে বেছে নিয়ে কয়েকটি বিষয়ের অন-লাইন প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়া শুরু করেন। এতে স্কুলগুলিতে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যায়। শিক্ষা বোর্ডের প্রশ্নের মান ভাল থাকায় নির্ধারিত স্কুল ছাড়াও অন্যান্য স্কুলগুলিও বোর্ডের প্রশ্নে পরীক্ষা নেবার কথা ব্যক্ত করেন এবং পার্শ্ববর্তী স্কুল থেকে বোর্ডের প্রশ্ন নিয়ে পরীক্ষা নেয়। পরীক্ষামূলকভাবে অন-লাইন প্রশ্নে পরীক্ষা গ্রহণের সফলতা আসায় গত ২১/০৯/২০১৭ তারিখে শিক্ষাবোর্ডের ওয়েবসাইডে এ সংক্রান্ত একটি নোটিশ জারি করে ২০১৭ সালের অনুষ্ঠিত এসএসসি নির্বাচনী পরীক্ষায় বোর্ডের আওতাধীন সকল বিদ্যালয়ে একযোগে পরীক্ষা নেয়া হয়। এতে ১৭ টি বিষয়ের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বোর্ড কর্র্তৃপক্ষ সরবরাহ করে সকল স্কুলকে এই সরবরাহকৃত অন-লাইন প্রশ্নে বাধ্যতামূলক পরীক্ষা গ্রহণের কথা বলা হয়।

এছাড়া বোর্ড কর্র্তৃপক্ষ সকল শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন প্রনয়ন করে আপলোড করার নির্দেশনা দেন। এতে শিক্ষকদের মধ্যে প্রশ্ন প্রণয়নের দক্ষতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবার একদিন আগে শিক্ষকদের তৈরিকৃত প্রশ্নের মধ্য থেকে প্রশ্ন বাছাই করে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয় বলে বোর্ড কর্তৃপক্ষ বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান। এ প্রসঙ্গে চুলকাঠি ঘনশ্যামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুশীল কুমার বিশ্বাস বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, বোর্ডের সরবরাহকৃত প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়ায় প্রশ্নের মান ভাল হচ্ছে। বোর্ডের প্রশ্নে ভুল নেই বললে চলে।

যদুনাথ স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ অজয় কুমার চক্রবর্তী বোর্ড কর্র্তৃপক্ষকে স্বাগত জানিয়ে বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, বোর্ডের এ ধরণের উদ্যোগ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে সুসংগঠিত করেছে। প্রশ্ন ফাঁসের সম্ভবনাও নাই। মো: ইব্রাহিম নামের একজন অভিভাবক প্রশ্ন বা ভাল ফলাফলের লোভ দিয়ে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করার কথা উল্লেখ করে স্বস্তির সাথে তিনি বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, এভাবে প্রশ্ন হলে শিক্ষকদের কাছে শিক্ষার্থীদের জিম্মি হবার সম্ভবনা নেই। হাকিমপুর সামছুলহুুদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষিকা মুমমুন ফেরদৌসী বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, বোর্ডের প্রশ্নের মান তুলনামূলকভাবে ভাল। তবে বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকলে যে কোন দিন সমস্যা হতে পারে।

বাগেরহাট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মাছুদা আক্তার বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, বোর্ডের সরবরাহকৃত প্রশ্নে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে সাবলীল বোধ করছে এবং শিক্ষার্থীরা বোর্ডের প্রশ্নে পরীক্ষা দিতে অভ্যস্ত হচ্ছে। এক যোগে বোর্ডের আওতাধীন সকল বিদ্যালয়ে একই দিনে একই প্রশ্নে পরীক্ষা নিতে পারার বিষয়টিকে একটি বড় অর্জন দাবি করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, যশোর এর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাধব চন্দ্র রুদ্র বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, ‘ইতিমধ্যে যশোর শিা বোর্ডের সব কার্যক্রম অনলাইন প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হচ্ছে। পরীা গ্রহণ পদ্ধতি অনলাইনে আনার জন্য প্রশ্নব্যাংক চালু করে পরীামূলক ভাবে চারটি পরীা সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে । এই পদ্ধতিতে প্রশ্ন ফাঁস যেমন রোধ হবে, তেমনি শিার মানও বাডবে। কেননা এই পদ্ধতিতে শিকরা ইউনিক প্রশ্ন তৈরি করে জমা দেন। ফলে তাদের লেখাপড়া করতে হয। এটা পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা হলে নোট ও গাইড বইয়ের দৌরাতœ কমবে। ফলে শিার গুণগত মানও বাডবে। শিক্ষার্থীরা এখন ষ্ট্যান্ডার্ড প্রশ্নে পরীক্ষা দিতে পারছে। শিক্ষকদের তৈরিকৃত প্রশ্নের মধ্য থেকে মাত্র একদিন আগে প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়ে থাকে।

এতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সম্ভবনা থাকে না। এ ধরণের প্রশ্নে নির্বাচনী পরীক্ষা দেওয়ায় শিক্ষার্থীরা যেভাবে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও মানদন্ডে অভ্যস্ত হচ্ছে, এতে এসএসসি পরীক্ষায় তাদের মধ্যে ভয়ের উপদ্রব থাকবেনা। অনেকক্ষেত্রে প্রশ্নপত্র বা পরীক্ষার সাজেশনের আশায় শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের কাছে পড়তে বাধ্য হয়। এ ধরণের প্রশ্নে পরীক্ষা হওয়ায় শিক্ষকদের কাছে শিক্ষার্থীদের জিম্মি হবার কোন সম্ভবনা থাকছে না। তিনি আরও জানান, সব বোর্ডের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে প্রশ্নব্যাংক তৈরি ও নিরাপত্তা উপকমিটি নামে একটি কমিটি আছে। তিনি এ কমিটির সদস্যসচিব ।

প্রশ্নব্যাংক তৈরি ও নিরাপত্তা উপকমিটির সর্বশেষ সভায় ২০১৮ সালের অনুষ্ঠিতব্য এসএসসি পরীার্থীদের টেস্ট পরীা প্রশ্নব্যাংক পদ্ধতিতে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর মূল পাবলিক পরীাও এ পদ্ধতিতে নেওয়া শুরু হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত