মোংলায় দেশের প্রথম পরিবেশ বান্ধব পুকুরধার ভাসমান সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু

মাসুদ রানা,মোংলা

আপডেট : ০৯:৪২ পিএম, রোববার, ১৫ মার্চ ২০২০ | ১১৯১

মোংলা পোর্ট পৌরসভায় নির্মিত হতে চলেছে দেশের প্রথম ১৫ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ভাসমান সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ভারত সরকার মোংলা পোর্ট পৌরসভাকে দিয়েছে ১৫০ কোটি টাকা। একটি ভারতীয় ও দেশি একটি কোম্পানির সঙ্গে গত বছরের ২৩ জুন মোংলা পোর্ট পৌর কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
চুক্তির নির্ধারিত সময়ের দু’মাস আগেই এ প্রকল্পের প্রথম ধাপে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সোলার প্ল্যান্ট থেকে প্রাথমিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা হয়েছে। গত শুক্রবার থেকে এ সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদিত ২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পরীক্ষামুলকভাবে পৌরসভার পানি শোধনাগারের প্রকল্পে ব্যবহার করা হচ্ছে। ১২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বাকী ১৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন আগামী দু’ বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
মোংলা পোর্ট পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এটি ভারতীয় ও দেশি একটি কোম্পানির সঙ্গে গত বছরের ২৩ জুন মোংলা পোর্ট পৌর কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেন মোংলা পোর্ট পৌরসভার মেয়র মোঃ জুলফিকার আলী। মোংলা পৌরসভার মাছ মারা এলাকায় পানি শোধনাগার কেন্দ্রের দুটি পুকুর ও পুকুরপাড়ে ১৫ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ভাসমান ও পুকুরধার সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পটি দুই বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করার লক্ষে চলতি অর্থ বছরের জুলাই মাস থেকে কাজ শুরু করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী ভারত সরকারের দেওয়া অফেরতযোগ্য ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রথম পর্যায়ে আগামি ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সোলার পাওয়ার প্লান্ট থেকে ২ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা সরবরাহ করার কথা থাকে। কিন্তু প্রথম পর্যায়ের নির্ধারিত সময় শেষ হবার দু’মাস আগেই গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে এ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা সম্ভব হয়েছে। অপরদিকে চুক্তির অপর শর্ত অনুযায়ী ১২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আগামী ২ বছরের মধ্যে বাকি ১৩ মেগওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে এ প্রকল্প থেকে। এই ১৫ মেগাওয়াট ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ মোংলা পোর্ট পৌরসভা ব্যবহার করার পর উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হবে বলে জানান পৌর মেয়র।
মোংলা পোর্ট পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব মোঃ জুলফিকার আলী বাগেরহাট২৪কে জানান, সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন পরিবেশ বান্ধব এবং টেকসই উন্নয়ন প্রকল্প। ইতিমধ্যে এ প্রকল্পের প্রথম দফার কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। পানি শোধনাগারের পুকুর পাড়ে সোলার বসিয়ে উৎপাদিত বিদ্যুৎ গত শুক্রবার থেকে পরীক্ষামুলকভাবে পানি প্রকল্পে ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামি দু’বছরের মধ্যেই এ পুকুর পাড় ও পুকুরের মধ্যে ভাসমান সোলার প্ল্যান্ট বসিয়ে মোট ১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। পরে এসব বিদ্যুৎ মোংলা পোর্ট পৌর এলাকায় ব্যবহার করার পর উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হবে। এতে করে এখানকার বিদ্যুৎ সংকটের সমাধান হবে। অন্যদিকে পৌরবাসী নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের নিশ্চয়তা পাবে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য (মোংলা-রামপাল) পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার বাগেরহাট২৪কে বলেন, ভাসমান ও পুকুরপাড়ে সোলার পাওয়ার প্লান্ট স্থাপন প্রকল্প পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অনন্য ভূমিকা পালন করবে। ভারতের সহযোগিতায় এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে আমাদের মধ্যে মৈত্রী ভাব আরও সুদৃঢ় হবে। এ ধরনের প্রকল্প বাংলাদেশে এই প্রথম। এই দৃষ্টান্ত সামনে রেখে ভাসমান সোলার প্লান্ট সারা বাংলাদেশে বৃদ্ধি পাবে আশা করি। সুন্দরবন সুরক্ষার কথা বিবেচনায় নিয়ে দেশের প্রথম ভাসমান সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র মোংলায় স্থাপনের জন্য তিনি পৌর কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত