তুরাগ থানায় অভিযোগ নিয়ে গেলে তাড়িয়ে দেয় দারোগা নির্মল: পরিবারের অভিযোগ
টঙ্গীতে ধর্ষণের পর শরনখোলার গার্মেন্টস কর্মীকে হত্যা
আপডেট : ০৩:৫০ পিএম, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | ১০৪৫
টঙ্গীর তুরাগ থানার দক্ষিণ খায়েরটেক মহল্লায় ভাড়া বাসায় থাকতো বাগেরহাটের শরণখোলার বানিয়াখালী গ্রামের ইউসুফ আলী হাওলাদারের মেয়ে গার্মেন্টকর্মী রিমা ওরফে লিমা আক্তার (২০)। দেড়মাস আগে ৯ আগস্ট রাতে বাড়ির মালিক প্রভাবশালী খোরশেদ আলম তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করে। পরেরদিন (১০ আগস্ট) সকালে তুরাগ থানার পুলিশকে ম্যানেজ করে ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেন খোরশেদ। পরে তুরাগ থানায় ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে গেলে পুলিশ পরিবারের কাউকে পাত্তা দেয়নি। প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে ঘুরেও কোনো সহযোগীতা পায়নি। এমন অভিযোগ নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে শরণখোলা প্রেসকাবে আসেন হতভাগা মেয়েটির বাবা।
মেয়ের বাবা ইউসুফ আলী হাওলাদার বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, তিনিও চট্টগ্রামের ইউনিয়ভার্সাল জিন্স লিমিডেট নামের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। লিমা তার প্রথম স্ত্রী মাসুমা বেগমের গর্ভের একমাত্র সন্তান। ২০১৬ সালে গাজীপুরের আ. জলিলের সাথে বিয়ের দুইবছর পর ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় লিমার। এর পর সে একাই থাকতো। ছয়মাস আগে সে তুরাগ থানার খায়েরটেক মহল্লার খোরশেদ আলমের বাড়ির চতুর্থ তলার একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করে। ওখানে যাওয়ার পর থেকেই বাড়ির মালিকের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে লিমার ওপর। তাকে বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত ও কুপ্রস্তাব দিতে থাকে। এসব কথা আগে থেকেই মা-বাবাকে জানিয়েছে লিমা।
ইউসুফ আলী জানান, ঘটনার দিন রাতে খোরশেদ আলম লোকজন নিয়ে তার মেয়েকে দলবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যা করে। পরেরদিন সকালে তুরাগ থানার দারোগা নির্মল বাবুকে ম্যানেজ করে আত্মহত্যার অপপ্রচার চালায়। সে অনুযায়ী পুলিশ লাশ উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজে ময়না তদন্তে পাঠায় এবং থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করে। ১১ আগস্ট লাশ শরণখোলায় গ্রামের বাড়িতে এনে দাফন করা হয়। অপমৃত্যু মামলায় মেয়ের মা মাসুমা বেগমের স্বাক্ষর পুলিশের ওই দারো নিজে দিয়ে মামলাটি রেকর্ড করে। পরবর্তীতে কয়েকবার তুরাগ থানায় গিয়ে ধর্ষনের পর হত্যার অভিযোগ নিয়ে গেলে দারোগা নির্মল মেয়ের মা-বাবাকে নানারকম ভয়ভীতি দেখিয়ে থানা থেকে তাড়িয়ে দেয়।
মেয়ের মা মাসুমা বেগম বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, তার মেয়ে আত্মহত্যা করতে পারে এরকম কোনো কারণ ছিলনা। পুলিশ জানিয়েছে সে সন্ধ্যা ৬টার দিকে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু ঘটনার দিন সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেয়ের সাথে মোবাইলে কয়েকবার কথা হয় তার। পরেরদিন সকালে থানা থেকে মৃত্যুর খবর জাননো হয়। ওইদিন দুপুর ২টায় তুরাগ থানায় গেলে দারোগা নির্মল মেয়ের গলার চেইন ও দুইটি মোবাইল দিয়ে তার কাছ থেকে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়। পরে জিডির কপিতে যে স্বাক্ষর সেটা তার না বলে দাবি করেন মাসুমা বেগম। তার মেয়েকে বাড়ির মালিক ধর্ষনের পর হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেন। প্রসাশনের কাছে ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চান তিনি।
এব্যাপারে জানতে চাইলে তুরাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নির্মল চন্দ্র দেব মুঠোফোনে (০১৭১৪৫৫৫৭৩৩) বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, মেয়েটিকে গলায় ফাঁস লাগানো ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। পোষ্টমর্টেম রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছুই বলা যাচ্ছেনা। রিপোর্ট আসতে দুই-তিন মাস সময় লাগে। রিপোর্টে যা আসবে সে অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মেয়ের পরিবারের কারো সাথেই দুর্ব্যবহার করা হয়নি বলে তিনি দাবি করেন।