২০১৮ সালের জরিপে বাঘের সংখ্যা ১১৪

বাঘ না বাঁচলে ঐতিহ্য হারাবে সুন্দরবন

মোংলা প্রতিনিধি

আপডেট : ০৫:৫৪ পিএম, সোমবার, ২৯ জুলাই ২০১৯ | ১০১৩

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট বিশাল আয়তনের সুন্দরবনের প্রধান আকর্ষণ বাংলাদেশের জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগার। বনের বাঘের সংখ্যা এখন সংখ্যা ১১৪ এমন তথ্য বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের জানিয়েছে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার। তবে এ সংখ্যা নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। কারও মতে, এ সংখ্যা কমে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে একশ।

সারা বিশ্বে বাঘের সংখ্যা এখন মাত্র চার হাজার, যা একশ’ বছর আগে ছিল এক লাখের মতো, যাদের উল্লেখযোগ্য অংশের আভাস ছিল সুন্দরবন। ২০০৪ সালের এক জরিপে খুলনা ও সাতীরা রেঞ্জ এলাকায় ২৭১টি এবং বাগেরহাটের চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্চ এলাকায় ১৬৯টি মোট ৪৪০টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার বেঁচে থাকার কথা উল্লেখ করা হয়। তবে ২০১৮ সালের জরিপে সুন্দবনের বাঘের সংখ্যা বেড়ে এখন ১১৪টিতে দাড়িয়েছে বলে উল্লেখ করেন পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপমন্ত্রী। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন ও এর জীববৈচিত্রে বাংলাদেশের অমূল্য সম্পদ। দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রাক্ষা এবং ঝড়, বন্যাসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে মানুষের জীবন ও সম্পদ বাঁচাতে সুন্দরবনসহ উপকুলীয় বনাঞ্চলের রয়েছে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। অথচ নির্বিচারে বনভূমি উজাড় হওয়ায় উদ্ভিদবৈচিত্র আজ বিলুপ্তির পথে। ফলে প্রাণিবৈচিত্র আজ হুমকির সম্মুখীন।

বনখেকোদের নির্বিচারে বন ধ্বংসের ফলে আজ সুন্দরবন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। শুধু তাই নয়, সব আইন-কানুন উপেক্ষা করে হত্যা করা হচ্ছে বাঘ ও হরিণসহ নানা প্রজাতির পশুপাখি। প্রতিকুল পরিবেশে বর্তমানে সুন্দরবনে বেঁচে থাকা বাঘ ও সীমিতসংখ্যক পশুপাখির জন্য আবাসস্থলের অভাব ও প্রবল খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। সুন্দরবনের তিন দিকে থাকা ঘনবসতিও বাঘের অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত। সুন্দরবনে বাঘের জীবনযাপনে নানা প্রতিকুল পরিবেশের পাশাপাশি সাগরে পানির লবণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে মিষ্টি পানি পানে অভ্যস্থ বাঘসহ অন্যান্য প্রাণী বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায়ই অকালে মারা যাচ্ছে।

এছাড়া ঝড়, জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাকে বন্যপ্রাণী হতাহত হওয়ার ঘটনা ঘটে থাকে। তবে স্বাভাবিক মৃত্যুর চেয়ে বাঘ হত্যার ঘটনাই বেশি ঘটছে। সুন্দরবনে বনদস্যু ও পশু শিকারিদের উপদ্রব বাঘের অবাধ বিচরণ ও পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি নিরাপদ বংশবিস্তারের পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে বাঘ, হরিণসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণী ও পাখি শিকার নিষিদ্ধ হলেও সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকায় হরহামেশা বাঘের চামড়া, হরিণের মাংস, এমনকি বিরল প্রজাতির নানা ধরনের পাখি শিকার হচ্ছে। রয়েল বেঙ্গল টাইগারের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংগ্রহের জন্য চোরাকারবারিদের দৌরাত্য থেমে নেই। এর ফলে সুন্দরবনে বাঘের নির্বিঘ্নে বেঁচে থাকা মারাত্মক হুমকি হয়ে পড়েছে। দীর্ঘকাল ধরে চোরাশিকারিরা সুকৌশলে হত্যার পর বাঘের চামড়া, মাংস, হাড়, দাঁত ও চর্বি উচ্চমূল্যে বিক্রি করে অবৈধ অর্থ উপার্জনের উন্মত্ত নেশায় মেতে উঠেছে। একেকটি বাঘের চামড়া প্রায় পাঁচ লাখ ও প্রতি কেজি হাড় দু’লাখ টাকায় বিক্রি হতে শোনা যায়, যা বিদেশে আরও উচ্চমূল্যে চোরাচালান করা হয়।

বাঘ রক্ষায় যেমন সুন্দরবন অত্যাবশ্যক, তেমনি সুন্দরবন রক্ষায় ও বাঘের প্রয়োজন। সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল মানুষও বাঘের অস্তিত্ব বিপন্ন করে তোলে। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ বিশ্বখ্যাত ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন বিলুপ্ত হয়ে গেলে গোটা বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে। বহুলাংশে বাড়িয়ে দেবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাকের আশংকা। আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে ও প্রচন্ড ক্ষতির সম্মুখীন হবে সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের সুন্দরবন, বলেও উল্লেখ করেন বিষেশজ্ঞরা।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত