রিকশা নয় পেটের ক্ষুধা ও নিয়মের পক্ষে বলছি!

গাজী ইলিয়াছ

আপডেট : ০৯:১৫ পিএম, মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০১৯ | ৯৩১

কর্ম সংস্থান না করে গরীবের আয় গরীবের বাহন বন্ধ করবো তবুও একজন এক প্রাইভেট কার ও জীপগাড়িতে করে চলাচল করবো এ কেমন রুলস্? শহরের রাস্তা কি রিকশার দখলে নাকি প্রাইভেট কার বা জীপ গাড়ির দখলে? কারণ সম্পদ, অর্থ ও ক্ষমতা সবই তো আজ জোর বাস্তবায়নকারী কার এবং জীপে চলাচল কারীদের হাতে। আমি রিক্সার পক্ষে বলছি না, আমি পেটের ক্ষুধা নিবারন এর পক্ষে বলছি। রিক্সায় যখনই ছড়ি তখনই রিক্সা ওয়ালা ভাইদের সাথে টুকটাক আলাপ করি। বেশির ভাগ ভাইয়েরা হলেন উত্তর বংগের জেলার লোক। তাঁরা মাসে বিশ দিন রিকশা চালিয়ে গ্রামে যাওয়া আসা করে পরিবার পরিজন নিয়ে ভালো চলেন। জানেনই তো ঐ অঞ্চলের মানুষ অভাবে থাকে।

রিকশাতে একটু আয় বেশি হয় বলে অনেক গরমেও চরম কষ্টের এ কাজ তাঁরা করেন এবং রিকশার গ্যারেজে বা বস্তিতে মানেবতর জীবন যাপনও তাঁরা করেন। কয়েক দিন আগে বিবিসি তে শুনলাম অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় থাকার কারণে তাঁদের ৭০ শতাংশ জন্ডিসে আক্রান্ত হয়। তথাপিও চরম কষ্টের এ কাজ তাঁরা করেন শুধু মাত্র নীজের ও নীজ পরিবারের পেটের ক্ষুধা নিবারন বা মৌলিক চাহিদা মেটাতে কোন রকম বিলাসিতা করার আশায় নয়। কর্মসংস্থান না করে বা বিকল্প কোন ব্যবস্থা না নিয়ে শক্তির জোরে তাঁদেরকে রাস্তায় রিক্সা চালাতে না দেওয়া মানি ক্ষুধার্ত মানুষের পেটে লাথি মারার শামিল মনে করি। যে গাড়িকে নিয়ম কানুনে আনলে রাস্তায় অনেক স্পেস পাওয়া যাবে সে কার বা জীপগাড়ির দিকে আমাদের নজর নেই। যেখানে একটি বড় গাড়িতে ৫০ জন অফিসার অফিসে আসতে পারে সেখানে ৫০টি জীপ ও কার ব্যবহার হয়। সেদিকে কোন খড়গ নেই? বিষয় হয়ে গেছে লাথি তো সহজে অসহায়কেই মারা যায় ! গবেষণা করে বের করা হয় রিক্সা বন্ধ করতে হবে কিন্তু গবেষণায় এটা উঠে আসে না কারা রাস্তা বেশি দখল করে কিভাবে চলছে ? সাধারণ জনগণকে শহরে অপ্রতুল নন এসি পাবলিক বাসে টাসাটসি করে যন্ত্রণায় ছটফট করতে হয় এবং ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করে বাসে উঠে। অন্যদিকে, অসস্তিকর এ গরমেও তথাকথিত সাহেবগন কালো নীল লাল কোট গায়ে দিয়ে একজনে দশজনের জায়গা দখল করে পায়ের উপর পা উঠিয়ে এক গাড়ি নিয়ে চলেন। তাঁদের সুস্থ বিবেক কখনো উদিত হয় না তাঁরা কি করছেন ? এ যেন চরম অহংকারের চরম বহিঃপ্রকাশ! মহান আল্লাহ কি তা সহ্য করবেন? কখনো না, মনে করি। অসহায়ের উপর অত্যাচার ও অহংকারের শাস্তি অবধারিত। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে দুইমাস মাছ ধরতে না দিলে তাঁদের চাল ডাল দিয়ে সাহায্য করা হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে স্থায়ী কাজের নিধন করলে তাঁদের তো কর্মই দিতে হবে। তা না হলে তাঁরা খাবে কি? এটা অনেকটা বস্তির লোকদের থাকার ঘর না দিয়ে বস্তিতে বুলডোজার চালানোর মতো, তবে আমি বস্তি উচ্ছেদের চেয়েও এটা অমানবিক মনে করি। আর এ ধরনের অমানবিক কাজ পুরো জাতির জন্য সামগ্রিক গজব আনয়নই করবে ।

এহেন অমানবিক কাজের জন্য মহান আল্লাহ প্রদত্ত প্রকৃতির বিচার আমাদের ভোগ করতেই হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই । তাই বলছি, যানজট নিরসনের জন্য সত্য পদক্ষেপ নিন শুধুমাত্র রিকশা উঠিয়ে নয় এককভাবে চলাচলকারী জীপ কারকেও রুলস্ এর আওতায় আনুন। পিক আওয়ারে অপরিহার্য ছাড়া একজনের এক গাড়িতে চলাচল বন্ধ করুন বা না বলুন! রিকশা একান্তই বন্ধ করতে হলে তাঁদের কাজ দিয়ে তা করুন। দয়াপূর্বক!

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত