খুলনা-মোংলা মহাসড়কের পাশে তিন বাজার

৪০ বছর ধরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে বেচা-কেনা

এম,এ সবুর রানা, রামপাল

আপডেট : ০৫:২৩ পিএম, শুক্রবার, ৫ জুলাই ২০১৯ | ৩৪৬১

খুলনা-মোংলা মহাসড়কের পাশে প্রায় ৪০ বছর ধরে চলছে ভাগা, গুনাই ও দিগরাজ বাজার। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এলাকাবাসীকে বাজারে আসতে হচ্ছে বাজারের জন্যে। প্রায় নিয়মিত ছোট-খাটো দূর্ঘটনা ঘটলেও ২০০৮ সালে ভাগা বাজারের রাস্তার পাশে ট্রাক উঠে গিয়ে মর্মান্তিক এক দূর্ঘটনা ঘটে। প্রাণহানি ঘটে চারজনের আর আহত হন ১১জন।



এরকরম ঝুঁকিপূর্ন স্থানে বাজার থাকলেও বিষয়টি নিয়ে কোন পদক্ষেপ নেই জনপ্রতিনিধিদের। সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী ও যানবাহন চালকরা যে কোন মুহুর্তে আবারো বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটার আশংকা প্রকাশ করে দাবি করেছেন, মহাসড়কের পাশ থেকে নিরাপদ স্থানে বাজার স্থানান্তরের জন্যে।



এলাকাবাসীর সাথে আলোচনা করে জানা যায়, বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলার বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের দিগরাজ বাজার ও রামপাল উপজেলার সদর ইউনিয়নের ভাগা ও গুনাই বাজার ১৯৮০-৮১ সাল থেকে খুলনা-মোংলা মহাসড়কের পাশে বসছে। ভাগা বাজার সপ্তাহের প্রতি শুক্র ও মঙ্গল, গুনাই বাজার সোম ও শুক্র এবং দিগরাজ বাজার রবি ও বৃহস্পতিবার বসে। মহাসড়কের দুই পাশেই বাজার বসে। প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে অন্য কোন বাজার না থাকায় বাজার সংশ্লিষ্ট চার-পাঁচ গ্রামের প্রায় ১০ হাজার লোক সপ্তাহের বাজার করতে এই বাজারে আসে।



গত মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় ভাগা বাজার ও রবিবার বিকাল ৫টায় দিগরাজ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার দুই পাশেই বাজার বসেছে। কাঁচা বাজার থেকে শুরু করে মাছ-মাংস সবই বিক্রী হচ্ছে। ক্রেতারা রাস্তা পার হয়ে দুই পারেই গিয়ে সদাই কিনছেন। অনেকে সচেতন ভাবে রাস্তা পার হলেও অধিকাংশই রাস্তা পার হচ্ছেন বেখেয়ালে। বাজারের কাছে এসে সব ধরনের যানবাহনই গতি মন্থর করতে বাধ্য হচ্ছে। কোন কোন সময় গাড়ী একদম বন্ধ করে দিতে হচ্ছে।



কাটাখালী গ্রাম থেকে আসা সব্জী ব্যবসায়ী রাকিবুল, তাহের, লিয়াকতসহ আরো বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, মোংলা বন্দর গতিশীল হওয়ায় খুলনা-মোংলা মহাসড়ক এখন ব্যস্ততম সড়ক। প্রতিদিনই মোংলা বন্দর ও মোংলা ইপিজেডএর পণ্য বোঝাই অসংখ্য ট্রাক, লরী, বাস এ পথে যাতায়াত করে। এখানেই প্রায় ৪০ বছর ধরে বাজার মিলে আসছে। মহাসড়কের পাশে বলে সারাক্ষণই আমরা ঝুঁকির মুখে থাকি। না জানি কখন গাড়ি আমাদের গায়ের উপর উঠে বসে। সড়কের পাশ থেকে নিরাপদ স্থানে বাজার কেন স্থানান্তর করা হচ্ছে না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, কর্তৃপক্ষই তা ভাল বলতে পারবেন।



ভাগা বাজারে বাজার করতে আসা ভাগা গ্রামের স্কুল শিক্ষক মোয়াজ্জেম হোসেন ও দিগরাজ বাজারে বাজার করতে আসা একটি বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, ‘সপ্তাহের বাজার করতে এলাকাবাসীকে এখানে আসতেই হয়। এরকম ব্যস্ত মহাসড়কের পাশে বাজার মানেই তো দুর্ঘটনার ঝুঁকি। শুধু ঝুঁকিই না ছোট-বড় দুর্ঘটনা তো প্রতিনিয়ত ঘটছেই। ২০০৮ সালে মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পরে বাজার নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার কথা হয়েছিল। কিন্তÍ তা এত বছরেও শুধু কথাই রয়ে গিয়েছে। কোন ফল হয় নি’।



খুলনা-মোংলা বাস সার্ভিসের চালক সেলিম শেখ ও ট্রাক চালক সোহাগ শেখ বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, ‘দুই পাশের বাজারের দোকানগুলো প্রায়শই রাস্তার উপরে উঠে আসে। বাজার করতে আসা লোকজনের ভিড়ে গাড়ী চালানো যায় না। আমাদের খুব আতংকের মধ্যে গাড়ী চালাতে হয়। কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের দাবি, মহাসড়কের পাশ থেকে বাজার নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করুন’।



এ বিষয়ে জানতে চাইলে রামপাল সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জামিল হাসান জামু ঝুঁকির কথা স্বীকার করে বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, আমরা সরকারি কিছু খাস জায়গা নির্ধারণ করে সরকারের কাছে সেখানে বাজার স্থানান্তরের দাবি জানিয়েছি। তবে মোংলা-খুলনা মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত হওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। সেটি শেষ হলেই বাজার মহাসড়কের পাশ থেকে স্থানান্তর করার প্রক্রিয়া শুরু হবে।


মোংলা উপজেলার বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নিখিল চন্দ্র রায় বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, আমরা স্থানীয় প্রশাসন ও ও সড়ক ও জনপথ বিভাগকে বিষয়টি জানিয়েছি। দিগরাজ বাজার স্থানান্তরের জন্যে আমরা সড়ক ও জনপথ বিভাগের একটি জায়গার জন্যে আবেদন করেছিলাম। কিন্তÍ কোন সাড়া মেলেনি। কিন্তÍ এ স্থান থেকে বাজার স্থানান্তরও অত্যন্ত জরুরী।



এ বিষয়ে রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তুষার কুমার পাাল এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, ভাগা ও গুনাই ব্রীজ বাজার খুবই ব্যস্ততম বৃহৎ দুটি বাজার। ৪০ বছর ধরে খুলনা-মোংলা মহাসড়কের দুই পাশেই হাট বসে। এতে যান চলাচলে মারাত্মকভাবে বিঘœ সৃষ্টি হয়। আমরা ডিসি মহোদয়সহ সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে বাজার দুটি পাশেই কোথাও বসানোর চেষ্টা করবো। এক্ষেত্রে সরকারি কোন জমি পাওয়া গেলে দ্রুত বাজার দুটি স্থানান্তর করা সম্ভব হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত