রামপালে বেল্লাল বেপারীর অত্যাচারে অতিষ্ট এলাকাবাসী

এম,এ সবুর রানা, রামপাল

আপডেট : ০৮:৪১ পিএম, সোমবার, ১৭ জুন ২০১৯ | ১০৬৭

রামপালে সাবেক বিএনপি ক্যাডার বেল্লাল বেপারী (৪৫)-র অত্যাচারে অতিষ্ট এলাকাবাসী। জোরপূর্বক ঘের দখল, অন্যের ঘেরে মাছ ও কাকড়া ধরে বিক্রি, চাঁদাবাজী, নিরহ লোকদের মারধর, টাকা নিয়ে ফেরত না দেয়াসহ কি অভিযোগ নেই উপজেলার সদর ইউনিয়নের সুলতানিয়া গ্রামের বিএনপির সাবেক ক্যাডারের বিরুদ্ধে।

সুলতানিয়া গ্রামের আল আমিন বেপারীর ছেলে বেল্লাল বেপারী। চার দলীয় ঐক্য জোটের আমলে বিএনপি-জামাতের ক্যাডার হিসেবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের অত্যাচার ও করেছেন তিনি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরে কিছু নেতাদের ধরে হয়ে যান আওয়ামী লীগের ক্যাডার। শুরু করে আওয়ামী লীগের কর্মী ও নিরহ লোকদের উপর সিমাহীন অত্যাচার। উপজেলা পর্যায়ের একজন আওয়ামী লীগ নেতার ছত্র ছায়ায় থেকে এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এর সাথে সহায়ক শক্তি হিসেবে রয়েছে বেল্লাল বেপারীর ভাই একাধিক হত্যা ও ডাকাতি মামলার আসামী বাকী বেপারী।


বাকী বেপারী বাগেরহাট সদর উপজেলার চুনখোলা গ্রামের শাহানার বাড়ি ডাকাতি মামলার আসামী, শ্যামনগর ও সাতক্ষিরা থানায় তার বিরুদ্ধে দুটি হত্যা ও ডাকাতির মামলা রয়েছে। খুলনা বটিয়াঘাটা থানায়ও দুটি ডাকাতির মামলা আছে বাকী বেপারীর নামে। এছাড়া সর্বশেষ বিএনপি নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আক্তার হত্যা মামলার অন্যতম আসামী বাকী বেপারী। তবে বাকী বেপারী এলাকায় যা-ইচ্ছে তাই করলেও অজানা কারণে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করছে না। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, এলাকার মানুষের কাছ থেকে জোর পূর্বক টাকা নিয়ে ফেরত না দেয়া, ঘের দখল, চাঁদাবাজী, নারী নির্যাতন, নিরহ লোকদের মারধরসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। একাধিক হত্যা ও ডাকাতি মামলার আসামী তার ভাইয়ের ভয়ে মুখ খুলতে পারেনা এলাকাবাসী।

স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শেখ নুরনবী টুকু বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, বেল্লাল বেপারী আমার কাছ থেকে ঘেরের হাড়ি প্রদানের জন্য এক লক্ষ এবং বাজার ঈজারা নেওয়ার জন্য দুই লক্ষ মোট ৩ লক্ষ টাকা ধার নেয়। টাকা পরিশোধের সময়ে আমি টাকা চাইলে, আমাকে টাকা না দিয়ে উল্টো মেরে ফেলার হুমকী দেয়। কিভাবে টাকা আদায় করব তার কোন উপায়ন্তুর পাচ্ছি না।

ভাগা বাজারের গ্রাম্য চিকিৎসক সত্তর বছর বয়সী ধীরেন্দ্র নাথ পাল বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, বেল্লাল বেপারী অনেক দিন আগে আমার কাছ থেকে ১৭ হাজার ৩‘শ টাকা ধার নেয়। কিন্তু টাকা চাইলে প্রথম দিকে শুধু ঘুরাতো। এখন টাকা চাইলে হুমকী ধামকী দেয়, মেরে ফেলারও ভয় দেখায়।


সম্প্রতি বিদ্যুৎ সংযোগ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে সুলতানিয়া ও ভাগা এলাকার শতাধিক লোকের কাছ থেকে টাকা নেয় বেল্লাল। অনেক দিন হলেও যখন সংযোগ পায়না বিদ্যুৎ প্রত্যাশীরা তখন সুলতানিয়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য শওকত হোসেনের কাছে জানতে চাইলে বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, বেল্লাল তাকে প্রকাশ্য জনসম্মুখে মারধর করেছিল।

মানিক নগর গ্রামের সদর উদ্দিনের ছেলে মোঃ সাইদুর রহমান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, বেল্লাল বেপারী আমার কাছে এক লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেন। আমি চাঁদা না দিলে সে আমার ঘের দখল করে মাছ ধরে নেয়। তার ভাই বাকি বেপারীকে নিয়ে আমাকে বেধরক মারপিট করে। বেল্লাল বেপারী এখন আমার ঘেরে মাছ চাষ করছে। আর আমি ঘেরে গেলে আমাকে রামদা দিয়ে খুন করার হুমকী দেয়। আমি আমার পৈত্রিক সম্পত্তির ঘের ফিরে পেতে চাই।

স্থানীয় ছাত্র লীগ কর্মী মোঃ মঈনুল ইসলাম বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, ছাত্র লীগ করেও আজ অবহেলিত। বেল্লাল বেপারীর আমাকে মেরে ফেলার হুমকী দিয়েছে। ৩-৪ মাস বাড়ির বাইরে থেকে এখন বাড়িতে আসছি। বেল্লারের অত্যাচারে গ্রামের লোকজন অতিষ্ট।

মৎস্য ব্যবসায়ী শোয়েব বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, বেল্লাল বেপারী খুব অনুনয় বিনয় করে ৩৭ হাজার টাকা ধার নেয়। কিন্তু এখন আর আমার টাকা দিচ্ছে না।

কিসমত ঝনঝনিয়া গ্রামের ইমরান শেখ বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, বেল্লালের ভাই বাকি একটা ত্রাস। ভাইকে পুজি করে বেল্লাল এলকায় ত্রাসের রাজ্য কায়েম করেছে। এলাকার মানুষকে মারধর ও টাকা ধার নিয়ে না দেওয়াসহ নানা অপরাধ করে সে। আমার কাছ থেকেও টাকা নিয়েছে। কিন্তু ফেরত চাইলে আজেবাজে কথা বলে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হিন্দু ঘের মালিক বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, হিন্দুরা ঘেরে কাকড়া চাষ করে। আর কাকড়া ধরে বিক্রি করে বেল্লাল বেপারী। বাঁধা দিলে মারধর এমনকি বাড়ির নারীদের উপরও অত্যাচার চালায় বেল্লাল বেপারী। আমরা তার হাত থেকে বাঁচতে চাই।

অবসর প্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক নির্মল চন্দ্র মল্লিক বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, আমরা ১৫-২০ জন সবাই মিলে একটি সমবায় ভিত্তিক ঘের করেছিলাম। সেই ঘেরের ১১ দশমিক ৬০ একর জমি জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছে বেল্লাল বেপারী। ওই জমিতে গেলে বা ঘেরের মাছ ধরতে গেলে বেল্লাল আমাদের হুমকী-ধামকী দেয়। মেরে ফেলার কথাও বলেছে একাধিকবার।

শুধু এরা নয় বেল্লালের অত্যাচারের হাত থেকে এলাকার কোন নিরহ লোকজন রক্ষা পাচ্ছে না বলে জানান সাবেক ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিন। তিনি বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, বেল্লাল বেপারী জামাত বিএনপির ক্যাডার ছিল। ওই আমলে আওয়ামী লীগের লোকজনকে অত্যাচার নির্যাতন করেছে। এখন আওয়ামী লীগের আমলেও সে মাস্তান সাজিছে। এই এলাকার ঘের দখল, মানি লোকের মান সম্মান নষ্টসহ যত ধরনের অপরাধ আছে তা বেল্লাল বেপারী করে। আমরা বেল্লালের হাত থেকে মুক্তি চাই। এমনকি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানও বেল্লাল বেপারীর ভয়ে মুখ খুলতে পারেনা।

রামপাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ লুৎফর রহমান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, বেল্লালের বিষয়ে কেউ কোন অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

অভিযুক্ত বেল্লাল বেপারী বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, একজন রাজনৈতিক নেতা তার স্বার্থ হাসিলের জন্য আমার নামে প্রপাগাঙ্গা ছড়াচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত